Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

দু’নম্বরে উঠে এসে রুপোলি রেখা দেখছে বামেরা

শিলিগুড়ি হাত ভরে দেবে। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গের তিন শহরে তেমন আশাব্যঞ্জক কিছু থাকবে না। এ বারের ভোটে এমন ছবিই ভেবে রেখেছিল আলিমুদ্দিন। বাস্তবে ঘটলও তা-ই। তবু ‘প্রহসনে’র ভোটে বিজেপি-কে পিছনে ঠেলে দ্বিতীয় স্থান ধরে রাখাকেই স্বস্তির চিহ্ন হিসেবে দেখছেন বাম নেতারা।

হেরেও আশাবাদী। ফল ঘোষণার পর অসীম দাশগুপ্ত। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

হেরেও আশাবাদী। ফল ঘোষণার পর অসীম দাশগুপ্ত। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

প্রসূন আচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:৩৫
Share: Save:

শিলিগুড়ি হাত ভরে দেবে। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গের তিন শহরে তেমন আশাব্যঞ্জক কিছু থাকবে না। এ বারের ভোটে এমন ছবিই ভেবে রেখেছিল আলিমুদ্দিন। বাস্তবে ঘটলও তা-ই। তবু ‘প্রহসনে’র ভোটে বিজেপি-কে পিছনে ঠেলে দ্বিতীয় স্থান ধরে রাখাকেই স্বস্তির চিহ্ন হিসেবে দেখছেন বাম নেতারা।

বিধাননগর, বালি এবং আসানসোল—তিন পুর-নিগমেই শাসক দল ‘ভোট লুঠ’ করে জিতেছে বলে বাম-সহ বিরোধীদের অভিযোগ। সেই জন্যই ফলপ্রকাশের পরে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর অভিযোগ, ‘‘নাগরিকদের স্বাধীন মতামত এখানে প্রতিফলিত হয়নি। প্রহসনের নির্বাচনের ফলাফল যা হওয়ার, তা-ই হয়েছে!’’ কিন্তু বিপুল পরাজয়ের মধ্যেও বিধাননগরে দু’টি এবং আসানসোলে ১৭টি আসন পেয়ে বাম নেতারা আশার ক্ষীণ ‘রুপোলি রেখা’ দেখছেন। বিধানসভা ভোটের আগে এতে নিজেদের সাংগঠনিক অস্তিত্ব কিছুটা হলেও পুনরুদ্ধার হচ্ছে বলে তাঁরা মনে করছেন। যেখানে যেখানে প্রতিরোধ সম্ভব হচ্ছে, সেখানে ফল তুলনায় ভাল হচ্ছে, আসানসোলের পুরভোট থেকেই এই চিত্র পরিষ্কার। এই বৈশিষ্ট্য মাথায় রেখেই বিধাননগরে পরাজিত মেয়র পদপ্রার্থী অসীম দাশগুপ্ত বলেছেন, ‘‘২০১৬ সালের ভোটের জন্য আমরা প্রস্তুত হচ্ছি। এখন থেকে প্রতিদিন ধরে ধরে প্রস্তুতি নেব।’’

‘প্রহসনে’র অভিযোগের মধ্যেও কিছু অঙ্ক ধরা পড়ছে এ বারের পুরভোটে। লোকসভা ভোটের নিরিখে আসানসোল আর বিধাননগর দু’জায়গাতেই বিজেপি প্রথম স্থানে ছিল। তৃণমূল দ্বিতীয়। আর বামেরা তৃতীয়। কিন্তু পুরভোটে বামেরা বিজেপি-কে পিছনে ঠেলে উঠে এল দ্বিতীয় স্থানে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের নির্বাচনী কেন্দ্র আসানসোলে গত লোকসভা ভোটে বিজেপি পেয়েছিল ৩৭% ভোট, বামেরা ২২%। এ বার বিজেপি অর্ধেক কমে হয়েছে ১৮%। বামেরা এক শতাংশ ভোট বাড়াতে পেরেছে। আসনের ক্ষেত্রেও বামেরা যেখানে পেয়েছে ১৭টি, সেখানে বিজেপি ৮টি। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্যামল চক্রবর্তীর ব্যাখ্যা, ‘‘ওই শিল্পাঞ্চলের মানুষ বিজেপি-র উপরে আস্থা হারিয়েছেন। কিন্তু বামেদের উপরে আস্থা কমেনি। বরং, যেখানে তৃণমূলের ভোট লুট আটকানো গিয়েছে, সেখানে বামেদের ফল ভাল হয়েছে।’’

লোকসভা ভোটের নিরিখে পুরনো বিধাননগরে ১৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৯টিতে বিজেপি এগিয়ে ছিল। এ বার কিন্তু একটি আসনও তারা জিততে পারেনি। যদিও বামেরা রাজারহাট এলাকা থেকে দু’টি আসন পেয়েছে। সামগ্রিক ভাবে ভোট পেয়েছে ২০%। আর লোকসভায় বিজেপি যেখানে গড়ে ভোট পেয়েছিল ৩০%, তা এ বার কমে ৮%। অর্থাৎ ‘বহিরাগত’, ‘ভোট-লুঠ’, ‘নিষ্ক্রিয় পুলিশ’— এ সব তত্ত্ব সত্ত্বেও এখানে বিজেপি-কে পিছনে ফেলে বামেরা উঠে এসেছে দ্বিতীয় স্থানে। অসীমবাবু থেকে রমলা চক্রবর্তীর মতো ওজনদার সিপিএম প্রার্থীরা পরাজিত হলেও ভোটের দিন বিজেপি’র থেকে তাঁরা বেশি সক্রিয় ছিলেন। ফলাফলও তা-ই বলছে।

তবে বামফ্রন্টের অন্দরে প্রশ্ন উঠছে, জেলা সিপিএমের সেনাপতি গৌতম দেবের ব্যর্থতা নিয়ে। কংগ্রেসের অরুণাভ ঘোষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভোটের ঠিক আগে ‘সিটিজেন্স ফোরাম’ গড়েছিলেন গৌতমবাবু। চার হাজার সিপিএম কর্মী এনে ভোট লুঠের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার হুমকিও দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত কিন্তু তিনি তৃণমূলের ‘ভোট লুঠ’ আটকাতে পারেননি। হয়ে উঠতে পারেননি শিলিগুড়ির অশোক ভট্টাচার্য। ‘ব্যর্থতার দায় দলের সবারই আছে’ বলেও জেলা সম্পাদক হিসাবে নিজের ঘাড়ে দায় নিয়েছেন হতাশ গৌতমবাবু। পাশাপাশিই স্বীকার করেছেন, বাম আমলে তাঁরাও ১৬-১৭টি বিধানসভা কেন্দ্রে ‘বিধাননগর মডেলে’ ভোট করতেন। যা ভুল ছিল!

বস্তুত, আসানসোলে আর এক প্রাক্তন মন্ত্রী বংশগোপাল চৌধুরীর নেতৃত্বে বামেরা যেটুকু প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পেরেছিল, অনেক বেশি হাঁকডাক করেও বিধাননগরে তা পারেননি গৌতমবাবু। এপ্রিলে পুরভোটের আগেও তিনি গণ-প্রতিরোধের কথা বলেছিলেন। তখনও জেলায় পুরভোটে কিছুই করতে পারেননি। এ বার ভোটের হিসেবে বিজেপিকে পিছনে ফেললেও তাঁর ব্যর্থতা দলে তাঁকে প্রশ্নের মুখে ফেলবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

লোকসভা ভোটে বালিতেও বিজেপি এগিয়ে ছিল বামেদের থেকে। কিন্তু এ বার সেখানে বিরোধীশূন্য পুরসভা হলেও ভোটের শতাংশের নিরিখে বিজেপিকে পিছনে ফেলতে পেরেছে বাম। বালিতে তৃণমূল রেকর্ড ভোটে জিতেছে। গত ৫০ বছরে বামেরা সব থেকে কম, মাত্র সাড়ে ১৩% ভোট পেয়েছে সেখানে! লোকসভায় বামেদের ভোট ছিল ২৭% আর বিজেপি-র ২৮%। কিন্তু এ বার বিজেপি পেয়েছে বামেদের অর্ধেক ভোট। বিধানসভা ভোটের আগে বিরোধী পরিসরে এগিয়ে থাকাই বামেদের জন্য ‘রুপোলি রেখা’!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE