আহত কর্মীদের দেখে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসছেন সীতারাম ইয়েচুরি এবং সূর্যকান্ত মিশ্র। রবিবার রণজিত্ নন্দীর তোলা ছবি।
রাজ্য জুড়ে পুরভোটে শাসক দলের তাণ্ডবের প্রতিবাদে শেষ পর্যন্ত সাধারণ ধর্মঘটেরই ডাক দিল বামফ্রন্ট। সেই সঙ্গেই পশ্চিমবঙ্গে কী ভাবে গণতন্ত্রের নামে প্রহসন চলছে, তার বিরুদ্ধে সর্বভারতীয় স্তরে সরব হওয়ার সিদ্ধান্ত নিল সিপিএম। পুরভোটে শাসক দলের হাতে আক্রান্তদের দেখতে কলকাতায় এসে হাসপাতালে দৌড়লেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। সব মিলিয়ে পুরভোটের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই আগামী বছরের বিধানসভা ভোট মাথায় রেখে ময়দানে নেমে পড়ল বামেরা।
বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু রবিবার বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে যে ভাবে মানুষের অধিকার হরণ করা হচ্ছে এবং গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হচ্ছে, তার প্রতিবাদে, শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া পাওনার দাবিতে এবং শিক্ষায় নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আগামী ৩০ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ১২ ঘণ্টার সাধারণ ধর্মঘটের আহ্বান জানাচ্ছি। রাজ্যে যাঁরাই আক্রান্ত, দল-মত-নির্বিশেষে তাঁদের সকলকেই ধর্মঘটে সামিল হতে আহ্বান করছি।’’ পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চার বছরের জমানায় এই প্রথম সাধারণ ধর্মঘটের পথে গেল বিরোধী বামফ্রন্ট। ঘটনা হচ্ছে, বৃহস্পতিবারই কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন ‘রোড ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড সেফটি বিল’ বাতিলের দাবিতে দেশ জুড়ে ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘট ডেকেছে সিটু, আইএনটিইউসি-সহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন। সেই ধর্মঘটকেও বামফ্রন্ট সমর্থন করেছে। তার ফলে বামফ্রন্টের সাধারণ ধর্মঘট ১২ ঘণ্টা হলেও তার প্রভাব চলবে আরও ১২ ঘণ্টা।
কলকাতা পুরসভার ভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘অবাধ ভোট লুঠে’র অভিযোগ তোলার সময় থেকেই বাম নেতৃত্ব ঠিক করেছিলেন, বাকি ৯১টি পুরসভার নির্বাচনেও একই চিত্র থাকলে তাঁরা ধর্মঘটের পথে যাবেন। সেইমতোই এ দিন আলিমুদ্দিনে বামফ্রন্টের বৈঠক করে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তার আগে সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তী শ্রমিক সংগঠনগুলির তরফে ৩০ তারিখ ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। বামফ্রন্টের বৈঠকে অবশ্য মঞ্জুকুমার মজুমদার, ক্ষিতি গোস্বামী, মনোজ ভট্টাচার্য, হাফিজ আলম সৈরানি প্রমুখ শরিক নেতারা মত দেন, ১২ ঘণ্টার ধর্মঘটই যথেষ্ট। তা ছাড়া, ওই দিন রাত ৮টা থেকে কলকাতায় আইপিএলের ক্রিকেট ম্যাচও আছে। ফ্রন্টের বাইরে অন্য বামদলগুলির কাছেও ধর্মঘটে সমর্থন চেয়েছেন বিমানবাবু। এসইউসি নৈতিক সমর্থন এ দিনই জানিয়ে দিয়েছে। বিজেপি অবশ্য জানিয়েছে, তারা ধর্মঘটে নেই।
প্রত্যাশিত ভাবেই বামেদের ধর্মঘটকে ‘ঘৃণ্য’ এবং ‘কর্মনাশা রাজনীতি’ আখ্যা দিয়ে সর্বাত্মক ভাবে তা প্রতিরোধ করার আহ্বান জানিয়েছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং আইএনটিটিইউসি-র সর্বভারতীয় নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁদের বক্তব্য, এ রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চলছে। অন্য দিকে, ভূমিকম্পে এ রাজ্য, দেশ এবং প্রতিবেশী নেপালে বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। পার্থবাবুর কথায়, ‘‘ভূমিকম্পে বিপন্ন মানুষের জন্য যে উদ্ধারকাজ চলছে, তার কেন্দ্র বাংলা। সেই বাংলাকে অচল করলে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হবে। তা সত্ত্বেও দুর্নীতি এবং দুর্বৃত্তায়নের নায়কেরা বন্ধের রাস্তায় নামছে। ধর্মঘট প্রত্যাখ্যান করতে মানুষকে আবেদন জানাচ্ছি।’’ পথে নেমে শাসক দল ধর্মঘটের মোকাবিলায় নামলে অবশ্য ফের পুরভোটের মতো ছবিই দেখার আশঙ্কায় আছে বিরোধীরা!
শুধু ধর্মঘট ডাকাই নয়, বামেরা অবশ্য পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রের উপরে তৃণমূলের আক্রমণের অভিযোগকে দিল্লির দরবারেও তুলে নিয়ে যাচ্ছে। রাজ্যে আক্রাম্ত বাম কর্মী-সমর্থকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এ দিনই কলকাতায় এসেছিলেন সিপিএমের নতুন সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি। সাম্প্রতিক কালে আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতে এ ভাবে দলের সাধারণ সম্পাদক আসেননি। তবে ইয়েচুরির যুক্তি, ‘‘কর্মীরা আছেন বলেই দল আছে। কর্মীরা আক্রান্ত হলে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো আমার কর্তব্য।’’ তিনটি হাসপাতালে আহতদের দেখতে যাওয়ার আগে আলিমুদ্দিনে দলের রাজ্য নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা সেরেছেন তিনি। পরে ইয়েচুরি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রকে তামাশায় পরিণত করা হয়েছে! সাংবিধানিক ব্যবস্থা বলেও কিছু নেই। গণপ্রতিরোধের মাধ্যমেই একমাত্র এর মোকাবিলা সম্ভব।’’ ইয়েচুরির নেতৃত্বে সংসদ চত্বরে বিক্ষোভ করে এখন থেকে বাংলার পরিস্থিতি জাতীয় স্তরে তুলে ধরবেন বাম সাংসদেরা।
ইয়েচুরি এ দিন বলেন, রাজ্যে পুরভোটের যাবতীয় তথ্য কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠাচ্ছেন। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের কথায়, ‘‘এই ভোট কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ারে পড়ে না। কিন্তু তারা ভাল করে দেখুক বাংলায় কী ভাবে ভোট চলছে! পরের বছর বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে তারা তা হলে সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।’’ আসলে ২০১৬-র জন্য প্রস্তুতি শুরু করিয়ে দিচ্ছেন ইয়েচুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy