রায় শোনার পরে। সৌরভের মা মিতা চৌধুরী। — নিজস্ব চিত্র
শোক চেপে আদালতের দিকে তাকিয়ে ছিল বামনগাছি। মঙ্গলবার বিচারকের রায়ের পরে বামনগাছির বাসিন্দারা এখন অকুতোভয়। বীরদর্পে বলতে পারছেন, ‘এ বার আসুক ওরা, ঠিক রুখে দেবো। আগের মতো ওরা আর পার পাবে না।’ আট জনের ফাঁসির আদেশ যেন এক লহমায় পাল্টে দিয়েছে একটা গোটা তল্লাটকে!
অথচ গত শুক্রবার আদালত একসঙ্গে ১২ জনকে দোষী সাব্যস্ত করার পরেও বাসিন্দাদের মনে হচ্ছিল, আতঙ্ক আবার চেপে ধরবে। আর তার প্রতিবাদ করতে গেলে পরিণতি হবে সৌরভ চৌধুরীর মতো। তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করে টুকরো টুকরো করে ফেলা হবে দেহ।
কিন্তু মঙ্গলবার বামনগাছির শরীরী ভাষা বদলে গিয়েছে। প্রৌঢ়া গৃহবধূ সন্ধ্যা বিশ্বাস বলছেন, ‘‘হ্যাঁ, এ বার সাহস পাচ্ছি। খারাপ কাজ আর এখানে চলবে না। চলতে দেবো না আমরা। বুঝতে পারলাম, সুবিচার এক দিন না এক দিন পাওয়া যায়ই।’’ বিচারের সেই বাণীই বাসিন্দাদের মনে বলভরসা জোগাচ্ছে। সৌরভের বন্ধু কুন্দন মাহাতোর কথায়, ‘‘এই রায়ের পরে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে, সমাজবিরোধী কার্যকলাপের প্রতিবাদ করতে মানুষের ভয় থাকবে না।’’
শুক্রবার ১২ জন দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরেও বহু মানুষ ভয়ে মুখ খুলছিলেন না। আর এ দিন নিজেরাই এগিয়ে এসে কথা বলেছেন। এক মহিলা বললেন, ‘‘এখন সন্ধ্যায় বেরোতে পারি। আগে পারতাম না। আজ মনে হচ্ছে, রাতবিরেতে দরকারে বেরোতে হলেও সমস্যা হবে না।’’
ওই মহিলার বাড়ি বামনগাছি স্টেশনের কাছেই। ওই স্টেশনের চার পাশেই ছিল চোলাই মদের ভাটি, সাট্টার ঠেক। আর স্টেশনের পাশে ব্যানার্জি বাগানের কালভার্টে বসে আসর জমাত শ্যামল কর্মকার এবং তার শাগরেদরা। সৌরভ-হত্যার মূল আসামি এই শ্যামল। ওই কালভার্টের আলো নিজেদের দুষ্কর্মের সুবিধের জন্য ভেঙে দিয়েছিল শ্যামলেরা। সেই ঘটনা থেকে গন্ডগোল এবং সৌরভের প্রতিবাদের সূত্রপাত।
এক মহিলা বললেন, ‘‘এখন আবার আলো জ্বলছে কালভার্টে।’’
শুধু ওই কালভার্ট নয়, আতঙ্কের আঁধার কাটিয়ে এ দিন যেন আলোয় আলো গোটা বামনগাছিই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy