মৃত অর্পণ জানা। নিজস্ব চিত্র।
ভাড়াটিয়ার ঘর থেকে বাড়ি মালিকের পাঁচ বছরের শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল। বুধবার রাতে পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট থানার মেচেদা বাজার লাগোয়া শান্তিপুর গ্রামে এই ঘটনায়, ওই শিশুকে শ্বাসরোধ করে খুনের অভিযোগ উঠেছে ওই ভাড়াটিয়ার কিশোরী কন্যার বিরুদ্ধে। বছর চোদ্দর ওই কিশোরীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, অর্পণ জানা (৫) নামে ওই শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য তমলুক জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ওই শিশুর জ্যাঠার অভিযোগের ভিত্তিতে ওই কিশোরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মেচেদা বাজার লাগোয়া শান্তিপুর গ্রামের পশ্চিম পাড়ার বাসিন্দা জগ্ননাথ জানা। জগ্ননাথ ও তাঁর স্ত্রী গীতা মেচেদা বাজারে সব্জি ব্যবসা করেন। তাঁদের দুই ছেলে। বড় অর্ঘ্য অষ্টম শ্রেণির ছাত্র এবং ছোট অর্পণ স্থানীয় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পড়ত। জগন্নাথবাবুর বাড়ির একটি ঘরে মাস চারেক আগে ভাড়াটিয়া হিসেবে এসেছিলেন কমল মাইতি ও সরস্বতী মাইতি নামে এক দম্পতি। পাঁশকুড়ার চাকদহ গ্রামের আদত বাসিন্দা প্লাস্টিকের সামগ্রী বিক্রির ব্যবসায়ী ওই দম্পতি বিভিন্ন মেলায় গিয়ে দোকান চালান। তাঁদের চোদ্দ বছরের মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। একই বাড়িতে পাশাপাশি ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকা কিশোরীর সঙ্গে ওই শিশুর ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠেছিল। ব্যবসার কাজে বেরিয়ে যাওয়া বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতে অর্পণ দিনের বেশির ভাগ সময় পাশের ঘরের দিদির সঙ্গেই থাকত।
বুধবার বিকেলে অর্পণের মা গীতাদেবী ব্যবসার জন্য মেচেদা বাজারে চলে যান। বাবা জগ্ননাথ বাড়িতে ছিলেন। অন্যান্য দিনের মত এ দিন সন্ধ্যায় পাশের বাড়িতে গৃহশিক্ষক সোমনাথের কাছে পড়তে গিয়েছিল অর্পণ। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ পড়ে ফিরে অর্পণ ওই কিশোরীর কাছে চলে যায়। এ সময় নিজের ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন জগান্নাথবাবু। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ উঠে অর্পণের খোঁজ শুরু করে তিনি। কিন্তু অর্পণকে খুঁজে পাননি কোথাও। প্রতিবেশীদের কাছে ওই ঘটনার কথা জানানোর পর সবাই মিলে খোঁজা শুরু করে আশপাশে।
আরও পড়ুন: মারধর করে কী হবে? শ্লীলতাহানি করলে সরাসরি অঙ্গচ্ছেদ! বিতর্কে তৃণমূল নেতা
কিন্তু এ সময় ওই কিশোরী বাড়ি থেকে বের না হওয়ায় প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয়। তাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করায় সে ওই শিশুর বিষয়ে কিছু জানে না বলে দাবি করে। কিন্তু অর্পণের বাবা সহ প্রতিবেশীরা জোর করে ওই কিশোরীর ঘরে ঢুকে পড়ে। অর্পণকে পাওয়া যায় খাটের তলায় পড়ে থাকা অবস্থায়। মুখ থেকে রক্ত বেরিয়েছিল অর্পণের। তাকে মেচেদা বাজারের কাছে একটি নার্সিংহোমে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করে। ঘটনার জেরে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা ওই কিশোরীকে আটকে রাখেন।
খবর পেয়ে রাতেই কোলাঘাট থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ওই শিশুর মৃতদেহ নিয়ে যায় ময়নাতদন্তের জন্য। কিশোরীকেও উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে মৃত অর্পণের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই কিশোরীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সকালে শান্তিপুর গ্রামের ওই বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায় এলাকার বাসিন্দাদের জটলা। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অর্পণের বাবা জগন্নাথ ও মা গীতাদেবী।
গীতাদেবী বলেন, ‘‘ভাড়াটিয়া হিসেবে আসার পর থেকেই ছেলে ওই মেয়েটার কাছে বেশিরভাগ সময় থাকত। কিন্তু ও যে এমনভাবে ছেলেকে মারবে কল্পনাও করিনি। আমরা ওর শাস্তি চাই ’’।
এদিকে ওই শিশুর কাকা সুরজিৎ মাইতি এবং প্রতিবেশীদের একাংশের অভিযোগ, বাড়িতে বেশিরভাগ সময় একা থাকা ওই কিশোরীর সঙ্গে দেড়মাস আগে ভাড়াটিয়া হিসেবে আসা ওই গৃহশিক্ষকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এ দিন ঘরের মধ্যে ওই দু’জনের ঘনিষ্ঠতা দেখে ফেলাতেই প্রমাণ লোপের জন্য ওই শিশুকে নাকি খুন করা হয়েছে । এই ঘটনায় ওই কিশোরীর সাথে গৃহশিক্ষকও জড়িত বলে তাঁদের অভিযোগ। এ দিন সকালে ওই গৃহশিক্ষককে আটকে রেখে স্থানীয় বাসিন্দারা মারধরও করেন। পরে পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদের পরে পুলিশ ওই গৃহশিক্ষককে ছেড়েও দেয়।
পুলিশের দাবি, অর্পণকে শ্বাসরোধ করে খুনের কথা স্বীকার করেছে ওই কিশোরী। কিশোরী জানিয়েছে সন্ধ্যায় ঘরের মধ্যে ওই শিশুর সঙ্গে খুনসুটির সময় গলা চেপে ধরলে সে আচমকা লুটিয়ে পড়ে। তখন ভয়ে ঘরের মধ্যে খাটের তলায় ওই শিশুর দেহ লুকিয়ে ফেলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy