বুলবুলি মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।
ট্রাফিক না সামলে ফোনে অনবরত কথা বলা এক মহিলা কনস্টেবলের ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন কলেজ ছাত্রীটি। তাতে খেপে গিয়ে পরে রাস্তায় দাঁড়িয়েই ছাত্রীটিকে চড় কষিয়েছিলেন ওই কনস্টেবল। বৃহস্পতিবারই তাঁকে পুলিশ লাইনে ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে।
কনস্টেবলের নাম বুলবুলি মণ্ডল। বাড়ি চাপড়ায়। গত ১৩ জানুয়ারি তিনি পুলিশেরই গাড়িতে এক পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে এসে ছাত্রীটির উপরে চড়াও হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। নদিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার বলেন, “ওঁকে ক্লোজ করে তদন্ত চলছে।’’
লিসা দাস নামে ওই ছাত্রীর বাড়ি কৃষ্ণনগরের লাগোয়া রাধানগরে। তিনি দ্বিজেন্দ্রলাল কলেজের বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ফাঁকা সময়ে কৃষ্ণনগর সদর মোড়ে একটি ওষুধের দোকানে কাজও করেন। লিসার অভিযোগ, দোকানের সামনেই তিন রাস্তার মোড়ে প্রায়ই কর্তব্যরত মহিলা পুলিশ কর্মীদের ফোনে গল্প করতে দেখা যায়। গত ২৮ ডিসেম্বর দুপুরে তিনি দোকান থেকে বেরিয়ে ওই কনস্টেবলের অনর্গল ফোনে গল্প করে চলার ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন। তারই শাস্তি ওই থাপ্পড়।
লিসা বলছেন, “পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ চলছে। ওই কনস্টেবলের সামনে দিয়ে বিনা হেলমেটে একের পর মোটরবাইক বেরিয়ে যাচ্ছে, কে দেখে! তিনি ফোনে কথা বলতেই ব্যস্ত। রাস্তা যানজটে জেরবার, তাতেও হুঁশ নেই তাঁর।’’
কৃষ্ণনগরের পোস্ট অফিস মোড়-সহ আরও অনেক জায়গাতেই এ ছবি নতুন নয়। তবে দিনের পর দিন ওই ব্যস্ত মোড়ে এই ঘটনা দেখে আর থাকতে পারেননি লিসা। বলছেন, “সিটিজেন ভল্যান্টিয়ার ফোর্সের সদস্য হিসেবে আমি উৎসবের সময়ে বেশ কয়েক বার ট্রাফিক সামলেছি। সেই কারণেই আমার আরও মনে হয়েছে, এটা থামানো দরকার। না হলে কোনও দিন বড় দুর্ঘটনা ঘটবে।’’ বস্তুত, পুলিশকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন বলেও তিনি জানান। পরিণতি হয় খারাপ।
লিসার অভিযোগ, ১৩ জানুয়ারি রাতে ওই দোকানের সামনে পুলিশের গাড়ি এসে দাঁড়ায়। বুলবুলি ও তাঁর এক পুরুষ সহকর্মী নেমে তাঁকে বাইরে ডাকেন। কথা কাটাকাটির মাঝেই লিসার গালে সপাটে এসে পড়ে চড়। দোকানের সিসিটিভি ক্যামেরায় তা ধরা পড়ে। আশপাশের দোকানদার এবং পথচলতি লোকজন জড়ো হয়েছিলেন। তাঁরাও দেখেন।
সেই অপমান তো ছিলই। এর পরেও সদর মোড়ের কিছু মহিলা কনস্টেবল তাঁকে ব্যঙ্গবিদ্রূপ করতে থাকেন বলে অভিযোগ। সহ্য করতে না পেরে বুধবার কৃষ্ণনগর মহিলা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন লিসা।
বুলবুলি অবশ্য দাবি করেন, “আমি ফোনে কথা বলি না। সে দিন আমার ছেলে অসুস্থ ছিল, তাই বাড়ির সঙ্গে কথা বলছিলাম। মেয়েটি কেন সেই ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেছে, তা জানতে চাই। তাতে মেয়েটি গালিগালিজ শুরু করায় আমি মাথা ঠিক রাখতে পারিনি।”
দোকানের মালিক দীপক দেবনাথ পাল্টা বলেন, “মেয়েটা পাঁচ মাস আমাদের দোকানে কাজ করছে। কোনও দিন খারাপ আচরণ চোখে পড়েনি। ওই দিনও সে কিছুই বলেনি। ওরাই এসে ওকে মারধর করল।”
বুলবুলি তো ‘ক্লোজড’। আর যে সহকর্মী সে দিন বুলবুলির সঙ্গে গিয়েছিলেন? অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘তদন্তের রিপোর্ট পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy