লোকসভা ভোটে ছিল তারকার ঢল। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পুরভোটের ময়দানে তারকার ছটা অনেকটাই ফিকে।
লোকসভা ভোটের ময়দানে অন্যান্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপির রথের রশি ছিল বাপ্পী লাহিড়ীর মতো জাতীয় স্তরের তারকাদের হাতে। লোকসভা ভোটের পর আর এক জাতীয় স্তরের তারকা কুমার শানু যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। কিন্তু এ বার পুরভোটের ময়দানে তাঁরা নেই। দলের তারকা সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় প্রচারে নেমেছেন ভোটের মাত্র সাত দিন আগে। বিজেপির সবর্ভারতীয় সভাপতি অমিত শাহেরও পুরভোটের প্রচারে কলকাতায় আসার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু তা-ও বাস্তবায়িত হয়নি। কয়েক জন প্রবীণ অভিনেতা ও অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস, আইএএস লোকসভা ভোটে বিজেপির প্রার্থী হন। পুরভোটের প্রচারে তাঁদেরও দেখা যাচ্ছে না। পুর ময়দানে বিজেপি-র তারকা মুখ বলতে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং অঞ্জনা বসু। রূপাই সব থেকে বেশি প্রচার করছেন।
শুধু তারার আলোই কমে যায়নি। বিজেপির ক্ষমতা দখলের স্বপ্নও থমকে গিয়েছে। দলের সাম্প্রতিকতম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে চর্চা হয়েছে, পুরভোটে কলকাতার কয়েকটি এলাকা ছাড়া অন্যত্র বিরাট কিছু করার শক্তি দলের নেই। কলকাতা বাদে বাকি ৯১টি পুরসভার অবস্থাও তথৈবচ। ফলে সেগুলির মধ্যে থেকে খান ১৫ বেছে নিয়ে জোর দিতে হবে। দলের অন্দরে বিজেপি নেতৃত্বের মূল্যায়ন— ভোটের দিন কৌশলে তৃণমূলের সন্ত্রাস মোকাবিলা করতে হবে। সে কৌশল সফল না হলে ২০১৬-র বিধানসভা ভোটের আগে কর্মীদের চাঙ্গা করার মতো ফল হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
মাত্র ১১ মাস আগে লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে ১৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বিজেপি। তার পরে বসিরহাট বিধানসভার উপনির্বাচনেও তারা জিতেছিল। বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সংগঠন রামলাল কলকাতায় এসে বলে যান, শহরের ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭২-র বেশি জেতার লক্ষ্যে এগোবেন তাঁরা। বিভিন্ন দল ও টলিউড থেকে বিজেপিতে যোগদানের হিড়িক পড়ে যায়। বনগাঁ লোকসভা ও কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনেও তাদের নিয়ে হই চই কিছু কম হয়নি। তা হলে কী এমন ঘটল, যার ফলে পুরভোটের ময়দানে বিজেপি-র হাওয়া স্তিমিত হয়ে পড়ল?
বিজেপির একাংশের বক্তব্য, লোকসভা ভোটের সময় ছিল মোদী হাওয়া। এক বছর বা দু’ বছর পরের ভোটেও তা কাজে লাগাতে হলে সক্রিয় সংগঠন লাগে। যা দলের নেই। আর রাজ্য নেতৃত্বও সেই ঘাটতি পূরণে সচেষ্ট নন। পাশাপাশি, ভোটের টিকিট না পেয়ে দলীয় দফতরে যে বিক্ষোভ হয়েছে, তা থামাতে রাজ্য নেতৃত্বের সৈনিকদের লাঠিচালনা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। এই সব বিষয়েই রাহুল বিরোধী গোষ্ঠীর নেতারা অমিতের কাছে এবং নাগপুরে আরএসএসের সদর দফতরে বহু অভিযোগ জানান। তাতে কোনও ফল হয়নি। পুরভোটে বিজেপি-র ম্রিয়মান হয়ে পড়া নিয়ে রাহুল শিবিরেরই এক নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘পুরভোটে হাওয়া ধরে রাখতে চাইলে রাজ্য নেতাদের কয়েকটি ওয়ার্ডে দাঁড়ানো উচিত ছিল। তাঁরা দাঁড়ালেনই না। এমনকী, দলে নবাগতা অভিনেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায় তাঁদের আগে প্রচারে নেমে পড়েছেন!’’
বিজেপি বিরোধীরা অবশ্য প্রচার করছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক একান্ত বৈঠকেই কেন্দ্র এবং রাজ্যের শাসক দলের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। তাই বুঝেশুনেই বিজেপি রাজ্যে পুরভোটের প্রচারে বিশেষ গা ঘামাচ্ছে না। পুরভোটে দল কিঞ্চিৎ ম্রিয়মান হয়ে পড়েছে, এই তত্ত্বে সহমত নন রাজ্য নেতৃত্ব। দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, ‘‘আমাদের দলের কেউ বলতেই পারেন না, বিজেপি-র হাওয়া পড়ে গিয়েছে। বরং, লোকসভা ভোটের চেয়ে বিজেপি-র হাওয়া জোরালো হয়েছে। অবাধ ভোট হলে দল কলকাতায় বোর্ড গঠন করবে।’’
রাজ্যে দলের কাণ্ডারীর পদে আসীন থাকাকালে আর কীই বা তিনি বলতে পারেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy