বাসে আগুন, ট্রেলার খারাপ হয়ে যাওয়া ও দুর্ঘটনায় ছাত্র মৃত্যুর জেরে রাস্তায় বিক্ষোভ। এই তিনের ধাক্কায় শুক্রবার সাড়ে ছ’ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ হয়ে রইল হাওড়ার কোনা এক্সপ্রেসওয়ে।
পুজো সপ্তমীতে অভিনেতা পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়ের দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মারা যাওয়ার পর থেকেই খবরের শিরোনামে ওই রাস্তা। কোনা এক্সপ্রেসওয়ের বেহাল দশা সরেজমিনে দেখতে দিন কয়েক আগে সেখানে হাজির হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুঘর্টনা এড়াতে ও রাস্তার হাল ফেরাতে হাওড়া প্রশাসনকে কয়েক দফা নির্দেশও দেন তিনি। তার পরেও পরিস্থিতির বদল হয়নি বলে নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ।
এ দিন প্রথম ঘটনা ঘটে ওই রাস্তার পঞ্চবটি সেতুতে। হাওড়া সিটি পুলিশ জানায়, সকাল ৬টা নাগাদ হাওড়া আমতা রুটের ট্রাম কোম্পানির বাসের ইঞ্জিনে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগে যায়। আতঙ্কিত যাত্রীরা বাস থেকে দ্রুত নেমে পড়ায় রক্ষা পান। আধঘন্টা পর দমকলের একটি ইঞ্জিন এসে আগুন আয়ত্তে আনে। পুলিশ জানায়, ওই সেতু দু’লেনের। তাই দু’টি লেন দিয়েই যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেতুর দু’দিকেই যানবাহন দাঁড়িয়ে পড়ে।
তার রেশ কাটতে না কাটতেই সকাল সাড়ে আটটায় সাঁতরাগাছি সেতুতে মাল বোঝাই আঠারো চাকার একটি ট্রেলার খারাপ হয়ে যায়। ফলে কার্যত বন্ধ হয়ে যায় ওই সেতুর একদিকের যানচলাচল। পুলিশ জানায়, প্রথমে একটি ব্রেক ডাউন ভ্যান এনে ট্রেলারটি সরানোর চেষ্টা হয়। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিয়ে আসা হয় বিশেষ ধরনের ব্রেক ডাউন ভ্যান। সেই ভ্যান দিয়ে ট্রেলার সরায় পুলিশ। তত ক্ষণে কেটে গিয়েছে দেড় ঘন্টা। হাওড়ামুখী সমস্ত যানবাহন আটকে যায় সেতুর উপরে। লোকজন বাস থেকে নেমে হাঁটতে থাকেন গন্তব্যের দিকে।
পরের ঘটনা বেলা ৯টায়। ফের সাঁতরাগাছি সেতুতে। পুলিশ জানায়, ওই সময় বাবার সঙ্গে মোটরবাইকে চেপে কলকাতার স্কুলে যাচ্ছিল অস্টম শ্রেণির ছাত্র শুভঙ্কর আগুয়ান। পুলিশ জানায়, সাঁতরাগাছি সেতু থেকে নামার পর জানা গেটের কাছে একটি লরি পিছন থেকে মোটরবাইকটিকে ধাক্কা মারে। মোটরবাইক থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়ে ওই ছাত্র। সেই সময় উল্টো দিক থেকে আসা একটা লরি শুভঙ্করকে ধাক্কা মেরে বেরিয়ে যায়।
দুর্ঘটনায় আহত হন শুভঙ্করের বাবা স্বপনবাবু। তবে তিনিই স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশের সাহায্যে গুরুতর আহত ছেলেকে আন্দুল রোডের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। বিকালেই মারা যায় শুভঙ্কর। দুর্ঘটনার পরেই এলাকার লোকজন ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রীয়তার অভিযোগ তুলে ও শুভঙ্করকে যে লরি ধাক্কা মারে চলে যায়, তার চালককে গ্রেফতারের দাবিতে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। তার জেরে যানজট ছড়িয়ে পড়ে দ্বিতীয় সেতুর টোলপ্লাজা থেকে অঙ্কুরহাটি মোড় পর্যন্ত।
পড়ুন বাইকে বাসের ধাক্কা, ধর্মতলায় হেলমেটহীন তরুণীর ম়়ৃত্যু
পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছন হাওড়ার জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাস, পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ-সহ ডিসি ট্রাফিক সুমিত কুমার ও পূর্ত দফতরের হাওড়া শাখার অফিসারেরা। পরে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘কোনা এক্সপ্রেসের ওপর যে দু’টি সেতু আছে তা দুই ও তিন লেনের। যার ওপর কোনও যানবাহন খারাপ হয়ে গেলে এই ধরণের যানজট হতে পারে। তাই পরিস্থিতির উন্নতি কী ভাবে করা যায় তাই খতিয়ে দেখতেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম।’’
পূর্ত দফতরের এক অফিসার বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে রাস্তা ও সেতু চওড়া না করলে বা বিকল্প কোনও রাস্তা না তৈরি না হলে পরিস্থিতি বদলাবে না। সমস্যা মেটাতে টোলপ্লাজা থেকে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক পর্যন্ত ফ্লাইওভারই শেষ কথা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy