Advertisement
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
গার্ডেনরিচ

নিজের ঘরেই নৃশংস ভাবে খুন হলেন বৃদ্ধা

সকালে ঠাকুরমাকে ডাকতে ফ্ল্যাটে গিয়েছিল পনেরো বছরের নাতি আরশাদ। বাইরে থেকে দরজা খোলা দেখে সটান ঘরে ঢুকেই আতঙ্কে চিত্‌কার করে উঠেছিল কিশোরটি। ঘরের খাটে রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ে রয়েছেন ঠাকুরমা। বিছানা ভেসে যাচ্ছে রক্তে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে বৃদ্ধার মুখ ফালা ফালা করে দিয়েছে কেউ। এক দিকে পড়ে রয়েছে মাথার খুলির একটি অংশ। আর দিকে পড়ে দুুটি কাটা আঙুল। পাশে মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে তার বারো বছরের বোন সায়রা। রক্তে ভেসে যাচ্ছে ঘর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০১
Share: Save:

সকালে ঠাকুরমাকে ডাকতে ফ্ল্যাটে গিয়েছিল পনেরো বছরের নাতি আরশাদ। বাইরে থেকে দরজা খোলা দেখে সটান ঘরে ঢুকেই আতঙ্কে চিত্‌কার করে উঠেছিল কিশোরটি। ঘরের খাটে রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ে রয়েছেন ঠাকুরমা। বিছানা ভেসে যাচ্ছে রক্তে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে বৃদ্ধার মুখ ফালা ফালা করে দিয়েছে কেউ। এক দিকে পড়ে রয়েছে মাথার খুলির একটি অংশ। আর দিকে পড়ে দুুটি কাটা আঙুল। পাশে মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে তার বারো বছরের বোন সায়রা। রক্তে ভেসে যাচ্ছে ঘর।

বৃহস্পতিবার সকালে গার্ডেনরিচ থানার রামনগর লেনের একটি বহুতলের একতলার ফ্ল্যাটের এই ঘটনার বীভত্‌সতায় বিস্মিত পুলিশের বড়কর্তারাও। পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে খবর পেয়ে তাঁরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঠাকুরমা ও নাতনিকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিত্‌সকেরা ঠাকুরমাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় একবালপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে সায়রাকে। পুলিশ জানায়, মৃতার নাম জহুরা খাতুন (৬০)।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বৃদ্ধা এবং তাঁর নাতনির মুখে এবং শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে একাধিক আঘাত করার চিহ্ন মিলেছে। বিছানায় ও ঘরে ধস্তাধস্তির চিহ্নও পেয়েছে পুলিশ। গোয়েন্দাদের অনুমান, আততায়ীকে হয়তো চিনে ফিলেছিলেন ওই বৃদ্ধা এবং তাঁর নাতনি। তাঁরা বাধা দেওয়ারও চেষ্টা করেছিলেন। যদিও ঘরের মধ্যে কিছু খোয়া যায়নি বলে পরিবারের সদস্যরা পুলিশের কাছে দাবি করেছেন। ঘটনাস্থল থেকে কোনও অস্ত্রও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। কী কারণে ওই বৃদ্ধা ও তাঁর নাতনির ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে—তা এখনও জানতে পারেননি গোয়েন্দারা।

পুলিশ জানিয়েছে, জহুরা খাতুনের তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে একবালপুর ও মেটিয়াবুরুজে। বড় ছেলে থাকেন পাশে একটি বহুতলের ফ্ল্যাটে। আরশাদ ও সায়রা তাঁরই সন্তান। পরিজনেরা পুলিশকে জানান, বিধবা জহুরা খাতুনের কাছেই রাতে শুতে যেত সায়রা। বৃদ্ধার আরও দুই ছেলে তাঁর পাশের ফ্ল্যাটেই থাকেন। পুলিশ জানায়, বৃদ্ধার তিন ছেলেই আগে জরির কাজ করতেন। মায়ের ফ্ল্যাটটিতে জরির কাজ হত। পরে তাঁর তিন ছেলে ব্যবসা আলাদা করে নেন। পুলিশ জানিয়েছে, জহুরা নিজেও সুদের কারবারও করতেন। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, তিন ছেলেও সুদের কারবারের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।

এ দিন পুলিশ গিয়ে জহুরা খাতুনের তিন ছেলের পরিবারের সঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তা বলেছে। পরিজনেরা পুলিশকে জানান, জহুরার ফ্ল্যাটের কোলাপসিব্‌ল গেটের বাইরে থেকে তাঁরাই রাতে তালা দিয়ে যেতেন। ভোরে গিয়ে খোলা হত তালা। কেন এ কাজ করা হত? পুলিশকে পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, জহুরা খাতুন রাতে ঘুমের ওষুধ খেতেন। তাঁর ঘুমিয়ে পড়ার কথা সায়রা জানালে কেউ গিয়ে কোলাপসিব্‌ল দরজায় তালা দিয়ে আসতেন। পরিবারের তরফে পুলিশকে জানানো হয়েছে, বুধবার রাতেও ওই ফ্ল্যাটের তালা বন্ধ করেন তাঁর মেজো ছেলে।

তদন্তকারীদের দাবি, আততায়ীরা ওই ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকেনি। চাবি দিয়েই ফ্ল্যাটের তালা খোলা হয়েছিল। তবে সেটি ডুপ্লিকেট চাবি কি না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। এ দিন সকালে ঘটনার পর মূল দরজার পাশ থেকে ওই চাবিটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের অনুমান, পরিচিতদের কেউই ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। কলকাতা পুলিশের ডিসি (বন্দর) ইমরান ওয়াহাব বলেন,“কেউ আমাদের সন্দেহের বাইরে নেই। আমরা সকলের সঙ্গে কথা বলব।”

এ দিন ওই আবাসনে গিয়ে দেখা যায়, বাইরে ভিড় করে রয়েছেন প্রতিবেশীরা। ফ্ল্যাটের ভিতর থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। একপাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে বাকরুদ্ধ আরশাদও। তার কাকা জহুরা খাতুনের মেজ ছেলে আহমেদউল্লা জানান, সকাল পাঁচটার সময়ে তিনি ঘুম থেকে উঠে বাথরুম যান। ফের ঘরে ফিরে তিনি ঘুমিয়ে শুয়ে পড়েন। কিন্তু ওই সময়ে মায়ের ঘর থেকে তিনি কোনও আওয়াজ পাননি। তাঁর কথায়, “আমাদের সঙ্গে কারওর শত্রুতা ছিল না। কে যে এত নৃশংস ভাবে মাকে মারল, তা মাথায় আসছে না!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

garden reach old lady murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE