Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ভোজপুরী নায়ক হতেই ‘অপহরণ’

এ সবের জন্য দরকার প্রচুর টাকা। তা মামা, ভাগ্নে কারওই নেই। তা হলে উপায় কী? উপায় একটাই। বাবার কাছ থেকে কোনও ভাবে টাকা হাতানো। বাবা থাকেন সুদূর কঙ্গোতে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দীক্ষা ভুঁইয়া
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৩৬
Share: Save:

ভোজপুরী গানের প্রতি খুব ঝোঁক। পাশাপাশি, ইচ্ছে ভোজপুরী ছবির নায়ক হওয়ার। কিন্তু বাড়িতে কেউ সে সবে পাত্তা দিতে রাজি নন। তবে এক জন রয়েছে, যে তাকে সাহায্য করবে। সে তার ছোট মামা। কারণ ওই ছোট মামাও ভোজপুরী গান গায়। ভোজপুরী গানের সিডি বার করার ইচ্ছে রয়েছে তার।

এ ছাড়াও চাই একটি দামি মোটরবাইক। কিন্তু এ সবের জন্য দরকার প্রচুর টাকা। তা মামা, ভাগ্নে কারওই নেই। তা হলে উপায় কী? উপায় একটাই। বাবার কাছ থেকে কোনও ভাবে টাকা হাতানো। বাবা থাকেন সুদূর কঙ্গোতে। ছেলের ধারণা, বিদেশে যখন চাকরি করেন, তখন বাবার নিশ্চয়ই অনেক টাকা। এর পরে ওই কিশোরই ঠিক করে, নিজের অপহরণের ছক কষে বাবার থেকে হাতিয়ে নেবে তিরিশ লক্ষ টাকা। তা হলেই নায়ক হতে পারবে সে। মামারও গানের সিডি হয়ে যাবে।

কিন্তু অনেক দূর এগিয়েও শেষরক্ষা হল না। টাকা হাতানোর সময়ে পুলিশের জালে ধরা পড়ে আপাতত মামার ঠাঁই হয়েছে পুলিশের লক-আপে। আর কিশোরকে পাঠানো হয়েছে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের নির্দেশে সরকারি হোমে। এ বিষয়ে সরকারি আইনজীবী দীপনারায়ণ পাকরাশি জানিয়েছেন, মামা এবং তার সঙ্গীকে আগামী ৪ মে পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

কিন্তু হঠাৎ নায়ক হওয়ার স্বপ্ন কেন?

পুলিশ সূত্রের খবর, আটক কিশোরের মামার বাড়ি বিহারের সিওয়ান জেলায়। সেখানে ছোট মামার একটা ছোট্ট দোকান রয়েছে। কিন্তু তার শখ ভোজপুরী গায়ক হবে। টুকটাক গান গাইতে পারলেও সিডি নেই। সেই গানের রেকর্ডিং করে সিডি বার করতে গেলে দরকার বেশ কয়েক লক্ষ টাকা। ছোট মামার সেই গান শুনে শুনে নিজেও ভোজপুরী গানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। স্বপ্ন দেখে, ভোজপুরী ছবিতে নায়ক হবে। অথচ বাড়িতে বললে মা বকুনি দেয়। তাই ফোনে মামার সঙ্গে ছক কষে ঠিক করে, নিজেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে ছোট মামার কাছে বিহারে পৌঁছে যাবে। সেখান থেকে তারই মোবাইল ব্যবহার করে বাড়িতে ফোন করে তাকে অপহরণের কথা বলে মুক্তিপণ চাইবে। কিন্তু শুধুমাত্র মামা-ভাগ্নে মিলে এ কাজ করলে ধরা প়ড়ে যেতে পারে। তাই তৃতীয় এক জনকেও অপহরণের নাটকে যুক্ত করা প্রয়োজন ছিল। যে অপহরণকারী হিসেবে তার বাড়িতে ফোন করে সব নির্দেশগুলি দেবে।

তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, সিনেমা দেখে দেখেই এই পরিকল্পনা সাজিয়েছে ওই কিশোর। সেইমতো মামার এক বন্ধু সুমিতকুমার সিংহকেও তাদের দলে নেয়। তার পরেই গত ৩ এপ্রিল বছর পনেরোর ওই কিশোর মায়ের চোখ এড়িয়ে বাড়ি থেকে শুধুমাত্র মোবাইল ফোন আর কিছু টাকা নিয়ে বেরিয়ে যায়। পুলিশ জানতে পেরেছে, মহম্মদ আলি পার্ক এলাকার বাড়ি থেকে বেরিয়ে ওই কিশোর নিজেই সোজা হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে যায়। সেখান থেকে বিহারে। সেখানেই তার মামা অপেক্ষা করছিল। পরদিন সেখানে পৌঁছেই ওই কিশোর নিজের মোবাইল থেকে মামার বন্ধুকে দিয়ে ফোন করিয়ে অপহরণের কথা জানায় বাড়িতে। সেই ফোনেই মুক্তিপণের টাকা আদায়ের রফা করে। এমনকি, বাবাকে মুক্তিপের টাকা পৌঁছনোর জায়গাও বলা হয়।

কিন্তু পুলিশের বক্তব্য, কিশোরের মাথা থেকে একটা জিনিস বেরিয়ে গিয়েছিল। সেটা হচ্ছে, তার বাড়ি কলকাতার একটি বড় রাস্তার উপরে। আর সেই রাস্তার উপরে রয়েছে একাধিক সিসি ক্যামেরা। কিশোর নিখোঁজ হওয়া এবং পরে অপহরণের অভিযোগ পেয়ে পুলিশ প্রথমেই তার মোবাইলের নেটওয়ার্কের অবস্থান দেখে। পাশাপাশি, রাস্তার সিসি ক্যামেরার ফুটেজও খতিয়ে দেখা হয়। তা দেখে পুলিশের প্রথম থেকেই একটা ধারণা হয়েছিল যে, ওই কিশোর হাওড়া স্টেশন পর্যন্ত একাই গিয়েছে। ফলে অপহরণকারী তার পরিচিত কেউ হবে।

যদিও ওই কিশোরই যে নিজের অপহরণের পরিকল্পনা করেছিল, তা জানা যায় মুক্তিপণ দেওয়ার পরে কিশোরের মামা আর তার সঙ্গী ধরা পড়লে। পুলিশ জানিয়েছে, পুরো ঘটনাটি সামনে আসার পরে তদন্তকারীরা বোঝার চেষ্টা করছেন, এই তিন জন আগে এ ধরনের কোনও কাজ করেছে কি না!

অন্য বিষয়গুলি:

Bhojpuri Cinema Kidnapping
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE