Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

দুর্ঘটনায় মৃত্যুর বিরাম নেই, ফের দেখল শহর

শহরে ক্রমশ বেড়ে চলা পথ-দুর্ঘটনা এবং তার জেরে মৃত্যু আর থামছেই না। সেই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন সোমবার রাতের ঘটনা। মোটরবাইকের সঙ্গে অ্যাপ-ক্যাবের ধাক্কায় মৃত্যু হল বছর তিরিশের এক যুবকের। এবং এ ক্ষেত্রেও মৃতের পরিবারের আক্ষেপ, ‘‘মোটরবাইকে থাকার সময়ে হেলমেট পরা থাকলে বেঁচে যেত ছেলেটা।’’

অরিন্দম।

অরিন্দম।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৬ ০২:০১
Share: Save:

শহরে ক্রমশ বেড়ে চলা পথ-দুর্ঘটনা এবং তার জেরে মৃত্যু আর থামছেই না। সেই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন সোমবার রাতের ঘটনা। মোটরবাইকের সঙ্গে অ্যাপ-ক্যাবের ধাক্কায় মৃত্যু হল বছর তিরিশের এক যুবকের। এবং এ ক্ষেত্রেও মৃতের পরিবারের আক্ষেপ, ‘‘মোটরবাইকে থাকার সময়ে হেলমেট পরা থাকলে বেঁচে যেত ছেলেটা।’’

ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার রাতে, সুকিয়া স্ট্রিট এবং এপিসি রোডের সংযোগস্থলে। মৃতের নাম অরিন্দম পাঠক (৩০)। বাড়ি আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা এলাকার ৮ নম্বর রঘুনাথ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে। ঘটনার গ্রেফতার হয়েছেন ওই অ্যাপ-ক্যাবের চালক।

কী হয়েছিল ওই রাতে?

দুর্ঘটনাগ্রস্ত মোটরবাইকটি।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত সাড়ে দশটা নাগাদ দুই বন্ধুর সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরোন অরিন্দম। পৌনে একটা নাগাদ তাঁদের সঙ্গেই একটি মোটরবাইকে ফিরছিলেন তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, রামমোহন রোড থেকে তীব্র গতিতে এপিসি রোড পার হচ্ছিলেন ওই তিন জন। সে সময়েই শিয়ালদহ থেকে মানিকতলার দিকে তীব্র গতিতে যাচ্ছিল একটি গাড়ি। সুকিয়া স্ট্রিটের কাছে প্রায় যখন পৌঁছে গিয়েছে মোটরবাইকটি, সে সময়েই ওই গাড়িটির সঙ্গে ধাক্কা লাগে সেটির। মোটরবাইক থেকে তিন জনই ছিটকে পড়েন গাড়ির সামনে। ওই অবস্থাতেই গাড়িটি সামনে এগিয়ে আসে। গাড়ি থামার পরে হাতখানেক দূরে ছিটকে পড়েন তাঁরা।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মোটরবাইক থেকে পড়ার পরেই মাথা ফেটে গিয়েছিল অরিন্দমের। এক প্রত্যক্ষদর্শী রণদীপ দাস বলেন, ‘‘বিকট শব্দ শুনে বাড়ি থেকে বেরিয়ে দেখি, রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে রয়েছে তিন জন। ভাল করে দেখে বুঝতে পারি, ওরা সকলেই আমার পরিচিত।’’ এর পরেই পুলিশকে খবর দেন রণদীপবাবু। ততক্ষণে আশপাশ থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা ভিড় করেছেন ঘটনাস্থলে। সকলকে নিয়ে আসা হয় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই অরিন্দমকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। দু’টি গাড়িই আটক করে পুলিশ। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মোটরবাইক চালক দীপঙ্কর দাসের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বাইকে দীপঙ্কর এবং আরও এক জনের মাঝখানে বসে ছিলেন অরিন্দম। দুর্ঘটনার পরে তিনি ছিটকে পড়েন গাড়ির উপরে। তার পরে চলন্ত অবস্থাতেই গাড়িটি কিছুটা এগিয়ে আসে। ফের অরিন্দম রাস্তায় ছিটকে পড়েন।

অরিন্দমের বাবা অভীক পাঠক মঙ্গলবার বলেন, ‘‘আমার ছেলে মোটরবাইক চালাতেই জানত না। কাল রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত আমার সঙ্গে ছিল। তার পরেই বেরিয়ে যায়। রাত দু’টো নাগাদ খবর পেলাম, সব শেষ।’’ অভীকবাবুর আক্ষেপ, হেলমেট পরা থাকলে হয়তো বেঁচে যেত ছেলেটা।

কলকাতা পুলিশের তথ্য থেকেই দেখা যাচ্ছে, শুধু মাত্র অক্টোবর মাসেই কলকাতা শহরে পথ-দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন প্রায় ২০ জন। মোটরবাইক চালানোর সময়ে চালক এবং আরোহীকে হেলমেট পরার নিদান দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাস্তার মোড়ে মোড়ে পথ-সচেতনতার প্রচার চালাচ্ছে পুলিশও। কিন্তু এত কিছুর পরেও হুঁশ ফিরছে না অনেকেরই। সোমবার রাতের ওই দুর্ঘটনা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, লাগাতার সচেতনতার প্রচার চললেও আখেরে তার কোনও প্রভাবই পড়ছে না শহরবাসীর একাংশের উপরে।

— নিজস্ব চিত্র

অন্য বিষয়গুলি:

Sukiya Street Road Accident Youth Dies
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE