Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ফ্ল্যাটে মহিলাকে নলি কেটে খুন

রোজকার মতো সোমবারও দুপুরে স্কুল থেকে ফিরে দরজা খুলে ফ্ল্যাটে ঢুকেছিল বছর সতেরোর সায়নী। তার পরেই বদলে গেল সব কিছু। বসার ঘরে বাথরুমের দরজার সামনে পড়ে আছেন মা। কাছে যেতেই সে দেখে মায়ের মাথার পাশে চাপ চাপ রক্ত। ‘খুন, খুন’ বলে চেঁচিয়ে ওঠে মেয়ে। ছুটে আসেন পড়শিরা। কেষ্টপুরের রবীন্দ্রপল্লির আকাশগঙ্গা অ্যাপার্টমেন্টের ঘটনা। পুলিশ জানায়, মৃতার নাম সোমা ঘোষ (৪৫)।

সোমা ঘোষ।

সোমা ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৪ ০৩:১৯
Share: Save:

রোজকার মতো সোমবারও দুপুরে স্কুল থেকে ফিরে দরজা খুলে ফ্ল্যাটে ঢুকেছিল বছর সতেরোর সায়নী। তার পরেই বদলে গেল সব কিছু। বসার ঘরে বাথরুমের দরজার সামনে পড়ে আছেন মা। কাছে যেতেই সে দেখে মায়ের মাথার পাশে চাপ চাপ রক্ত। ‘খুন, খুন’ বলে চেঁচিয়ে ওঠে মেয়ে। ছুটে আসেন পড়শিরা।

কেষ্টপুরের রবীন্দ্রপল্লির আকাশগঙ্গা অ্যাপার্টমেন্টের ঘটনা। পুলিশ জানায়, মৃতার নাম সোমা ঘোষ (৪৫)। খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। মৃতদেহ পাঠানো হয়েছে ময়না-তদন্তে। পুলিশ জানায়, মৃতার গলায় গভীর ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। ক্ষতচিহ্ন রয়েছে বুকে, হাতেও। দেহটির পাশে একটি বালিশ পড়ে থাকায় তদন্তকারীদের অনুমান, প্রথমে শ্বাসরোধ করে ধারালো অস্ত্রে গলার নলি কাটা হয়। বাগুইআটি থানা ও বিধাননগর গোয়েন্দা বিভাগ একযোগে তদন্ত করছে।

পুলিশ জানায়, ওই বহুতলের চারতলায় দু’কামরার ফ্ল্যাটে থাকেন সুজিত ঘোষ। সঙ্গে স্ত্রী সোমা এবং একমাত্র মেয়ে সায়নী ঘোষ। সল্টলেকের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী রোজকার মতোই এ দিন সকাল ৭টায় স্কুলে বেরিয়েছিল। সুজিতবাবু কাজে বেরোন বেলা ১১টায়। পুলিশ জানায়, সুজিতবাবু আগে একটি ইংরেজি দৈনিকে কাজ করতেন। ২০১২ সালে চাকরি যাওয়ার পর থেকে একটি প্রেসে প্রিন্টিং-এর সরঞ্জাম সরবরাহ করেন তিনি। এ দিন খবর পেয়ে বাড়ি ফিরে আসেন সুজিতবাবু। তবে এই ঘটনায় সুজিতবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়ে তাঁর আচরণে বেশ কিছু অসঙ্গতি পেয়েছে পুলিশ। তাই তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ দিকে, সোমার বান্ধবী, ওই পাড়ারই বাসিন্দা পূরবী সাহার খোঁজ প্রথমে না মিললেও সোমবার রাতে তাঁকে আটক করে বাগুইআটি থানার পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাঁকে।

এ দিন দুপুরে ফ্ল্যাটে একাই ছিলেন সোমা। তাঁদের ঠিক নীচের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় বলেন, “দুপুর ৩টে নাগাদ সায়নীর আর্তচিৎকার শুনে বেরিয়ে আসি। দারোয়ান দীপকও চলে আসে। ঘরে ঢুকেই দেখি সোমা পড়ে রয়েছে।” শর্মিষ্ঠা জানান, সোমার মাথার পিছনে চাপচাপ রক্ত ছিল। পাশে পড়ে ছিল একটি বেলনচাকি, বালিশ ও ওষুধের শিশি। ঘরে ছিল বাড়ির পোষা খরগোশ। তিনি বলেন, “দুপুরে আড়াইটে নাগাদ উপর থেকে ঝনঝন করে কিছু পড়ার শব্দ পেয়েছিলাম। তখন কিছু হয়ে থাকতে পারে।”

কেষ্টপুরের সেই আবাসন।

সায়নী পুলিশকে জানায়, দুপুরে পূরবীর আসার কথা ছিল। বাড়ি ঢুকে মাকে ওই অবস্থায় দেখে প্রথমে সে দৌড়ে পূরবীর বাড়িতে যায়। কিন্তু তাঁকে না পেয়ে ফিরে আসে। পূরবী মাঝেমধ্যেই মৃতার বাড়িতে যাতায়াত করতেন বলে জানায় পুলিশ।

তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ওই বাড়ির দারোয়ান দীপক দুপুরে খাওয়ার জন্য ১টা থেকে ৩টে পর্যন্ত থাকেন না। সে সময়ে বহুতলের কোল্যাপসিব্ল গেট খোলাই থাকে। সেই সুযোগে এই খুন হয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে একটি আলমারির পাল্লা খোলা থাকলেও ওই ঘর থেকে কিছু খোয়া যায়নি বলেই প্রাথমিক তদন্তে অনুমান পুলিশের। বিধাননগর কমিশনারেটের এসিপি অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই মহিলা সোনার গয়না পরে ছিলেন। সেগুলোর কিছু হয়নি।”

পুলিশ জানায়, সুজিতবাবুর প্রিন্টিং-এর সরঞ্জাম সরবরাহের ব্যবসাতেও মন্দা দেখা দেওয়ায় আর্থিক অনটনে পড়তে হয় তাঁদের। সোনা বন্ধক রেখে সংসার চালাতে হচ্ছিল বলে জেনেছে পুলিশ। পারিবারিক অশান্তির পাশাপাশি কোনও রকম সম্পর্কের জেরে এই খুন কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সুজিত-সোমার সম্পর্ক কেমন ছিল, দেখা হচ্ছে তা-ও।

প্রতিবেশীরা জানান, শান্ত স্বভাবের সোমা তেমন মিশুকে ছিলেন না। কোনও অনুষ্ঠান হলে তবেই তাঁর দেখা মিলত। বরং সায়নী ওই আবাসনে অনেক বেশি পরিচিত। মায়ের মৃত্যুর পরে তাকে আগলে রাখেন প্রতিবেশীরা। ওই আবাসনেই দোতলায় থাকেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের যুব সাধারণ সম্পাদক মণীশ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “এই ঘটনার পরে পুলিশে খবর দিই। ফ্ল্যাটের নিরাপত্তার বিষয়টি ফের দেখতে হবে।”

—নিজস্ব চিত্র

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE