—প্রতীকী ছবি।
পুলিশের চাকরি ছেড়ে অন্য চাকরিতে যোগ দেওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। তবে কলকাতা পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিয়ে সম্প্রতি এক ট্র্যাফিক সার্জেন্ট তুলনায় কম বেতন ও নিচু পদে রেলের ‘গ্রুপ ডি’ বিভাগের চাকরিতে যোগ দেওয়ায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে কলকাতা পুলিশ মহলে। প্রশ্ন উঠেছে, এই সিদ্ধান্ত কেন নিলেন ওই সার্জেন্ট? পুলিশেরই একাংশের বক্তব্য, কারণ একটা নয়। একাধিক। প্রথমত, কাজের ক্ষেত্রে পদে পদে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং স্বাধীনতার অভাব তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যখন-তখন, যত্রতত্র পুলিশকর্মীদের নিগ্রহ এবং হেনস্থার ঘটনা। যার জেরে সাধারণ মানুষের মধ্যে পুলিশের প্রতি যে স্বাভাবিক সম্ভ্রমবোধ ছিল, সেটাই নষ্ট হতে বসেছে। আর সেই কারণেই পুলিশের চাকরির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছেন কর্মীদের একটা বড় অংশ।
লালবাজার সূত্রের খবর, গত আট বছরে শুধু ট্র্যাফিক পুলিশের সার্জেন্ট পদ থেকেই প্রায় ৬০ জন ইস্তফা দিয়েছেন। অন্য সরকারি পেশায় যোগ দিয়েছেন তাঁরা। এঁদের মধ্যে অনেকেই ডব্লিউবিসিএস-এর সি গ্রুপে ভূমি রাজস্ব আধিকারিকের মতো অপেক্ষাকৃত উঁচু পদ ও বেশি বেতনের চাকরি পেয়েছেন। আবার কম বেতনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরিও করছেন বেশ কয়েক জন।
লালবাজার সূত্রের খবর, আসানসোলের বাসিন্দা করুণাময় চট্টোপাধ্যায় ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে কলকাতা পুলিশের সার্জেন্ট পদে যোগ দেন। তিনি লালবাজার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলে কর্মরত ছিলেন। কয়েক মাস আগে করুণাময় কলকাতা পুলিশের চাকরি ছেড়ে রেলের গ্রুপ ডি পদে যোগ দেওয়ার জন্য লালবাজারে আবেদন জানান। গত ২১ জানুয়ারি লালবাজারের তরফে তাঁর ইস্তফা গ্রহণ করা হয়।
করুণাময় চট্টোপাধ্যায়ের ইস্তফাপত্র গ্রহণ করে লালবাজারের গেজেটে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি।
বেশির ভাগ পুলিশকর্মীর এখন একটাই প্রশ্ন, করুণাময় কী এমন পরিস্থিতির শিকার হলেন যে, ভাল বেতন ও আধিকারিক পদমর্যাদার চাকরি ছেড়ে অপেক্ষাকৃত কম বেতন ও নিচু পদের চাকরি বেছে নিলেন? করুণাময়ের বক্তব্য, ‘‘আমার বাবা, মা অসুস্থ। পরিবারকে একদম সময় দিতে পারতাম না। পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়ে পরীক্ষা দিয়ে রেলের গেটম্যানের চাকরি বেছে নিলাম।’’
কলকাতা পুলিশের ২০০৮ সালের ব্যাচের এক ট্র্যাফিক সার্জেন্ট ২০১২ সালে প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতার চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই প্রাক্তন সার্জেন্টের কথায়, ‘‘অনেক স্বপ্ন আর আশা নিয়ে পুলিশের চাকরিতে যোগ দিয়েছিলাম। চার বছর মুখ বুজে কাজ করে কেবল লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়েছে। দু’টি তিক্ত অভিজ্ঞতার পরে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, আর পুলিশের চাকরি করব না।’’
করুণাময় রেলের গ্রুপ ডি-তে যোগ দেওয়ায় অবাক হচ্ছেন না ট্র্যাফিক সার্জেন্টদের একাংশ। এক সার্জেন্টের কথায়, ‘‘আট ঘণ্টার বদলে প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়। ছুটি পাওয়া যায় না। শরীর খারাপ থাকলেও পরিস্থিতির চাপে ছুটি পাই না।’’
তবে পুলিশের চাকরি ছেড়ে রেলের গ্রুপ ডি-র চাকরিতে যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার তুষার তালুকদারের পর্যবেক্ষণ, ‘‘এখনকার সমাজব্যবস্থায় নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারলে কপালে কষ্ট আছে। রেলের চাকরিতে যোগ দেওয়া প্রাক্তন সার্জেন্টের ক্ষেত্রে হয়তো সেখানেই খামতি থেকে গিয়েছে।’’ প্রাক্তন আইপিএস নজরুল ইসলামের কথায়, ‘‘হয়তো বিবেকের তাড়নায় উনি কম বেতনের ও নিচু পদের চাকরি বেছে নিয়েছেন।’’
পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিম অবশ্য বলেন, ‘‘পুলিশের পেশায় মানিয়ে নিতে পারেননি উনি। তাই অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। এটা ওঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। পুলিশি পেশায় কারও সম্মানহানি হয় না। যে যাঁর ব্যক্তিগত ইচ্ছায় চলে যাচ্ছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy