Advertisement
E-Paper

ফেরার কাগজ কে দেবে? হোমেই উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশিরা

কলকাতার একটি হোমে থাকা তরুণী বেনজিরের (নাম পরিবর্তিত) কাহিনি শোনাচ্ছিলেন হোমের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক। সীমান্তরক্ষীর হাতে টাকা গুঁজে কাঁটাতার পেরিয়েছিলেন তিনি।

উত্তপ্ত বাংলাদেশ।

উত্তপ্ত বাংলাদেশ। —ফাইল চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২৪ ০৭:৪২
Share
Save

বাড়ি কোথায়? ‘‘বাংলাদ্যাশ!’’

মাস ছয়েক পর্যন্ত নিজের ব্যাপারে এটুকুই বলতে পারতেন কলকাতার একটি মানসিক রোগীদের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক মহিলা। কিন্তু পরের কয়েক মাসে তাঁর স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে। বলতে পেরেছেন মা-বাবার নাম, পরিবারে কে কে আছেন। বলেছেন, ‘‘বাড়ি আমার ফরিদপুর। ট্যাপাখোলা। চার আনা কাসারির কাসে গিয়া বাবার নাম কইলেই হইব!’’

সেই বাড়ির খোঁজ মিলেছে কি? এখনও জানা হয়নি মহিলার। জানেন না, কবে দেশে ফিরবেন। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রশাসনিক ভাবে এক রকম সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন। অথচ প্রশাসনিক ছাড়পত্র ছাড়া তাঁর ফেরা অসম্ভব! দু’দেশের সরকার যৌথ ভাবে উদ্যোগী না হওয়া পর্যন্ত এ দেশের মানসিক রোগীর হাসপাতালই তাঁর ঠিকানা। তবে এমন পরিস্থিতিতে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে এ দেশে চলে আসা রুমানা, নয়না, বিলকিসেরাই (নাম পরিবর্তিত) শুধু নয়, ভুগছেন অনেকেই। এঁদের কেউ কাজের সূত্রে এ দেশে এসে যৌনপল্লিতে পাচার হন, কেউ ঘুরতে এসে হারিয়ে যান। অনেকে আবার পাচারের পথ পেরিয়ে এ দেশে এসে পড়েন।

কলকাতার একটি হোমে থাকা তরুণী বেনজিরের (নাম পরিবর্তিত) কাহিনি শোনাচ্ছিলেন হোমের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক। সীমান্তরক্ষীর হাতে টাকা গুঁজে কাঁটাতার পেরিয়েছিলেন তিনি। কাজের সুযোগের টোপ দিয়ে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় মহারাষ্ট্রের যৌনপল্লিতে। সেখানে হানা দিয়ে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে। পাঠানো হয় এ রাজ্যের হোমে। দেশের যে কোনও রাজ্য থেকেই সরাসরি বাংলাদেশে পাঠানোর নিয়ম থাকলেও তরুণীকে বোঝানো হয়, পশ্চিমবঙ্গে গেলে দ্রুত দেশে ফেরা যাবে। অভিযোগ, দ্রুত দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পুলিশ ১০ হাজার টাকা নিয়েও তা পূরণ করেনি। এখন কলকাতার হোমে ওই তরুণী ঘরে ভাঙচুর চালান, হোমের কর্মীদের মারধর করেন বলে অভিযোগ। শুধু বলেন, ‘‘আমি কী আর দেশে ফিরতে পারব?’’

সূত্রের খবর, প্রতি মাসে অন্তত ১৫০-২০০ জনকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরানো হয় সরকারি ভাবে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন কাউকে সুস্থ করে শেষ বাংলাদেশে ফেরানো হয়েছে গত ফেব্রুয়ারিতে। পাচার হয়ে আসা কেউ শেষ ফিরেছেন জুন মাসে। তার পর থেকে বাংলাদেশে অশান্তির জেরে আর ফেরা হয়নি কারও।

‘ডিরেক্টরেট অব চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড ট্র্যাফিকিং’-এর ডিরেক্টর নীলাঞ্জনা দাশগুপ্ত জানান, কাউকে উদ্ধার করে তিনি বাংলাদেশের বাসিন্দা বলে পুলিশ রিপোর্ট দিলে তাঁকে হোমে রেখে রাজ্যের ‘হোম অ্যান্ড হিল অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্ট’-এ রিপোর্ট পাঠানো হয়। সেখান থেকে রিপোর্ট বিদেশ মন্ত্রক ঘুরে আসে কলকাতায় বাংলাদেশের উপ হাইকমিশনে। তারা ফাইল পাঠায়
বাংলাদেশ সরকারের কাছে। সেখানে ওই ব্যক্তি বাংলাদেশের বাসিন্দা কিনা, তা খতিয়ে দেখা হয়। এর পরে বাংলাদেশ সরকার ভারতের বিদেশ মন্ত্রককে রিপোর্ট দিলে, ‘নো অবজেকশন’ শংসাপত্র দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের ‘হোম অ্যান্ড হিল অ্যাফেয়ার্স’ দফতরে বিষয়টি পাঠানো হয়। সেখান থেকে বাংলাদেশে ফেরার নির্দেশ (রিপ্যাট্রিয়েশন অর্ডার) আসে। আবেদন করলে বাংলাদেশ উপ হাইকমিশন ‘ট্রাভেল পারমিট’ দেয়। এর পরে কলকাতায় ‘ফরেনার্স রিজিয়োনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার’-এর থেকেও ‘নো অবজেকশন’ শংসাপত্র নিতে হয়। এর পরে সব কাগজ নিয়ে পেট্রাপোল, বেনাপোল দিয়ে ঘরে ফেরেন এই মানুষেরা। তবে এতগুলি ধাপ পেরোতেই দীর্ঘ সময় লাগে বলে অভিযোগ। বাংলাদেশ সরকার এবং সেখানকার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর থেকেও সময় পেতেও অপেক্ষা করতে হয় বহু দিন।

নীলাঞ্জনা বললেন, ‘‘এই রাজ্যে সমস্তটাই একটি পোর্টালের মাধ্যমে হয়। এক দিনের মধ্যে সমস্ত আবেদন করা যায়। কিন্তু দেরি হয় বাংলাদেশের দিক থেকে। এখন তো বাংলাদেশ জ্বলছে। কত সময় লাগবে কেউ জানেন না।’’

তা হলে এঁরা ফিরবেন কবে? জানা নেই কারওরই।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bangladesh Unrest Bangladesh Bangladesh Protest Bangladesh Crisis Rehabilitation Center

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}