কৃতী: মেধা তালিকায় থাকা পাঠভবনের তিন ছাত্র। (বাঁ দিক থেকে) আদিত্য সাহা, রোহিন সেন ও রণদীপ ঠাকুর। শুক্রবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
উচ্চ মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় কলকাতার স্থানাধিকারীদের কেউ তথাকথিত উচ্চশিক্ষার পথে হাঁটতে চাইলেও কেউ কেউ ব্যতিক্রমী বাসনাও জানিয়েছে। ইচ্ছে আঁকড়ে আর নিজের অবসর বজায় রেখেই পড়াশোনা করেছে ওরা। কেউ আবার এখন থেকেই ছোট কাঁধে তুলে নিয়েছে সংসারের গুরুদায়িত্ব।
খাবার ডেলিভারির কাজ করত সে। পরীক্ষার আগেও সেই কাজে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়তে হত। যত ক্ষণ বই হাতে থাকত, তত ক্ষণ মন থাকত শুধুই পড়াশোনায়। পাঠ্যবই ছিল ভরসা। আর সেটাই খুঁটিয়ে পড়ে চেতলা বয়েজ় হাইস্কুলের সৌভিক দাস উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৯১ নম্বর পেয়ে অষ্টম স্থান অর্জন করেছে।
সৌভিকের বাবা চন্দন দাস হোমগার্ড। মা সোমা দাস সিভিক ভলান্টিয়ার। সৌভিক জানায়, করোনার সময়ে সংসারে খুবই টানাটানি চলছিল। তখন ডেলিভারির কাজও বিশেষ মিলত না।’’ অকপট ওই ছাত্র বলে, ‘‘ভাল ফল করব আশা করেছিলাম। কিন্তু র্যাঙ্ক করব ভাবিনি। প্রথমে টিভি দেখে, পরে বন্ধুদের থেকে জানলাম খবরটা।’’ বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র সৌভিক ভবিষ্যতে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যাট হতে চায়। উচ্চশিক্ষায় তাকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
তৃতীয় (৪৯৬) স্থানাধিকারী রোহিন সেনের আবার পড়ার ফাঁকেই চলত কমিকস পড়াও। পাঠভবন স্কুলের এই ছাত্রের আবার গল্ফেরও নেশা রয়েছে। অন্যদের মতোইমোবাইলে গেম খেলতে শুরু করলে থামতে ইচ্ছা করে না, নতুন ওয়েব সিরিজ় এলে শেষ না করা পর্যন্ত স্বস্তি নেই। এ হেন রোহিনের পড়াশোনার নির্দিষ্ট সময় ছিল না। বাবা কল্লোল সেন বেসরকারি সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মী। সিবিএসই স্কুলের শিক্ষিকা, মা রিনি বলেন, ‘‘ছেলে এখনও সুপারম্যান কমিকস পাশে নিয়ে ঘুমোয়। তবে পড়ার কথাও বলতে হত না। আমরা ছেলেকে রাজ্য বোর্ডে পড়াতেই চেয়েছিলাম। কারণ এখানে অন্য বোর্ডের থেকে অনেক খুঁটিয়ে পড়ানো হয়।’’ ভবিষ্যতে অঙ্ক বা রাশিবিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায় সে। স্কুলে গিয়ে অর্থাৎ, অফলাইন পড়ার পক্ষেই রোহিন।
দশম স্থানের (৪৮৯) অধিকারী আদিত্য সাহাও পাঠভবনেরই ছাত্র। পড়াশোনার চাপেও বন্ধ হয়নি তার ফুটবল খেলা। করোনা পরিস্থিতি একটু ভাল হতেই সে বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে নেমে পড়ে। রাশিবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করতে চায় আদিত্য। পাঠভবনেরই আর এক ছাত্র রণদীপ ঠাকুর ভাবতেই পারেনি যে ষষ্ঠ হবে (৪৯৩)। টিভিতে ক্রিকেট হলেই বসে পড়ে খেলা পাগল রণদীপ। বিজ়নেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়ে পড়তে চায় সে। মেধা তালিকায় স্কুলের তিন জন থাকায় স্বভাবতই খুশি পাঠভবনের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা শুভা গুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের অনলাইন পড়াতে গিয়ে আমাদেরও এই পদ্ধতিতে শিখতে হয়েছে।’’
৪৯০ নম্বর পেয়ে নবম স্থানাধিকারী অভিনন্দন মুখোপাধ্যায় শেফ হতে চায়। ভাল ভাল রান্না করে তাক লাগাতে চায় বিশ্বকে। কলকাতার স্বামী প্রণবানন্দ বিদ্যাপীঠের ছাত্র অভিনন্দন জানাল, ছোট থেকে রান্না করতে ভালবাসে। বেশি ভাল লাগে চিনা রান্না। টালিগঞ্জের মেক-আপ শিল্পী বাবা সৌমেন মুখোপাধ্যায় ছেলেকে বলেছিলেন, ‘যা ভাল লাগে তাই নিয়েই ভবিষ্যৎ গড়বে।’ করোনা কালে কাজ কমে যাওয়ায় আর্থিক কষ্ট হলেও ছেলের পড়াশোনায় খামতি রাখেননি। সাত জন শিক্ষক রেখেছিলেন।
খালসা হাইস্কুল থেকে ৪৯০ পেয়ে নবম হয়েছে স্বাতী শুক্লা।ভবিষ্যতে কস্ট অ্যাকাউট্যান্ট হতে চায় সে। ৪৮৯ নম্বর পেয়ে দশম হয়েছে কলকাতার ন্যাশনাল হাইস্কুলের সঞ্জনা পাণ্ডে। অষ্টম স্থানাধিকারী (৪৯১), নব নালন্দা হাইস্কুলের স্বাগতম গোস্বামী ডাক্তার হতে চায়। স্বাগতমের কথায়, ‘‘অনলাইন ক্লাসের জন্য প্রস্তুতিতে খামতি থেকে গিয়েছিল। ভাবিনি এই ফল হবে। স্কুলে মক টেস্ট হওয়ায় অনেকটা সমস্যা কাটে।’’ উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে উর্দু মাধ্যমের পড়ুয়াদের মধ্যে সেরা হয়েছে তপসিয়ার বাসিন্দা মহম্মদ বেলাল। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৭।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy