ঠাঁই: আবর্জনার মধ্যেই অবস্থান বিশ্বকর্মার। বুধবার, দমদমে। ছবি: শুভাশিস বসাক
নিজের পুজোর দিনেই তাঁর ঠাঁই হল রাস্তার ধারের আবর্জনার স্তূপে! কেউ ছবি তুলে পাশ কাটিয়ে গেলেন। কেউ আবার প্রণাম ঠুকে গলায় পরিয়ে দিলেন মালা। এক বৃদ্ধা আবার তাঁর কপালে লাল টিপ ছুঁইয়েই এগিয়ে গেলেন! তবে বুধবার সকাল থেকে দমদম স্টেশন সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ডে পড়ে থাকা এক বিশ্বকর্মা মূর্তির অবস্থান বদল হল না বেলা পর্যন্ত!
পথচলতিদের কেউ কেউ আবার মজা করে বলেছেন, দৃশ্যটির সঙ্গে নাকি রাজ্যের বর্তমান শিল্প পরিস্থিতির মিল রয়েছে। মূর্তিটি দীর্ঘক্ষণ দেখার পরে এগিয়ে যাওয়ার আগে দমদমের বেদিয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা স্বপন সাহা বললেন, ‘‘মরা বঙ্গে এটাই সেরা মূর্তি। কাজ নেই, কারখানা নেই, বিশ্বকর্মা দিয়ে কী হবে?’’ যেখানে মূর্তিটি পড়ে ছিল, তার কয়েক হাতের মধ্যেই দশকর্মার দোকান শক্তিপদ হালদারের। তিনি বললেন, ‘‘আমাদের তিন পুরুষের দোকান। পুজোর সময়েও এখন আর তেমন বিক্রিবাটা হয় না। রাজনীতি সব খেয়ে ফেলেছে। এই বিশ্বকর্মার ছবি তুলে ধরলেই বোঝা যাবে রাজ্যের অবস্থাটা ঠিক কী!’’
অর্থনীতির শিক্ষক দীপঙ্কর দাশগুপ্ত অবশ্য বললেন, ‘‘এ রকমটা বলাই যায় যে, এখানে শিল্পের কিছু হচ্ছে না। শিল্পের চেহারাটা এমনই যে, বিশ্বকর্মা ভেঙে পড়ে রয়েছে। তবে এ দিনের এই ছবিকে প্রতীকী বলে দেওয়াটাও এক ধরনের সরলীকরণ। আমি বরং বেশি কৌতূহলী এই ভেবে যে, মূর্তিটি কাউকে এ ভাবে ফেলে যেতে হল কেন?’’
মূর্তিটি তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেলুনে। নিজস্ব চিত্র
মূর্তিটি যেখানে বসানো ছিল, তার ঠিক সামনেই সোনার দোকান দমদম, কবরডাঙা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক অরূপ বাগুইয়ের। তিনি জানালেন, প্রতিটি পুজোর আগেই তাঁর দোকানের সামনের ফুটপাতে প্রতিমা বিক্রি করেন এক যুবক। তিনিই এ দিন বেশ কয়েকটি বিশ্বকর্মা মূর্তি নিয়ে বসেছিলেন। এক ক্রেতা তাঁর থেকে ওই বিশ্বকর্মাটি কিনেছিলেন। তবে কিছু দূর যেতেই মূর্তির নীচের অংশটি ভেঙে পড়ে যায়। ভাঙা মূর্তির বদলে নতুন মূর্তি নিয়ে ফিরে যান ওই ক্রেতা। তবে এই মূর্তিটি আর বিক্রি করা যায়নি। বেলার দিকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার আগে মূর্তিটি পাশের এক ফুল বিক্রেতাকে দিয়ে যান ওই মূর্তি ব্যবসায়ী। ফুল বিক্রেতা সেটিকে রাস্তার ধারে আবর্জনার স্তূপে বসিয়ে রেখে গিয়েছেন।
ঘটনাটির কথা শুনে সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ মিত্র আবার বললেন, ‘‘দায়িত্ব গ্রহণ করার ব্যাপারে মানুষের যে বিমুখতা এসে গিয়েছে, এই ঘটনায় সেটাই ফের প্রমাণ হল। বিশ্বকর্মা পুজোর দিনই এতক্ষণ একটি বিশ্বকর্মা মূর্তি পড়ে থাকল। অথচ, কেউ নিতেই রাজি হল না!’’
বিকেলের দিকে অবশ্য ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক অরূপবাবুর উদ্যোগে মূর্তিটির ঠাঁইবদল হয়েছে। বাজারের একটি সেলুনের দোকানের মালিক সুদীপ্ত ঘোষ সেটিকে নিয়ে গিয়েছেন। সুদীপ্ত বললেন, ‘‘ব্যবসার অবস্থা যা-ই হোক, ঠাকুর তো আর ফেলা যায় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy