কতটা নিরাপদ ‘উবের’-এর ট্যাক্সি?
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক মহিলা যাত্রীর সঙ্গে চালকের অশালীন আচরণ এবং হুমকি দেওয়ার অভিযোগের ঘটনায় ফের উঠে এল এই প্রশ্নটাই। ক্যামাক স্ট্রিট থেকে বাড়ি ফেরার জন্য ‘উবের’-এর একটি গাড়িতে উঠে এই অভিজ্ঞতায় ভয় পেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হন ওই মহিলা। পুলিশের তৎপরতায় অভিযুক্ত চালক গ্রেফতার হয়। কিন্তু লাক্সারি ট্যাক্সিতে উঠে যাত্রীরা বিপদে পড়লে ঠিক কাকে ফোন করবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয় ওই মহিলা যাত্রীর কাছে। শহরের সাধারণ ট্যাক্সির তুলনায় লাক্সারি ট্যাক্সিতে নিরাপত্তা কোথায়, প্রশ্ন তুলে ‘উবের’ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি।
ওই মহিলা যাত্রী জানাচ্ছেন, সাধারণ ট্যাক্সির চালকদের প্রত্যাখ্যান এবং খারাপ ব্যবহারে তিতিবিরক্ত হয়ে প্রায় এক বছর ধরে ‘উবের’ ব্যবহার করছেন তিনি। আগেও দু’তিন বার চালকের খারাপ ব্যবহারের অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁর। কিন্তু সরাসরি যোগাযোগের ‘কাস্টমার কেয়ার’ নম্বর না থাকায়, পরে সংস্থার কাছে ই-মেল করে অভিযোগ জানাতে হয়েছে। যদিও ওই মহিলা এবং ‘উবের’ ব্যবহারকারী অন্য যাত্রীরা জানাচ্ছেন, ‘উবের’-এর গাড়িচালকের কাছে সংস্থার একটি ফোন থাকে। কিন্তু যাত্রীদের সাধারণত সেটা ব্যবহার করতে দেন না চালকেরা।
সেক্ষেত্রে বিপদে পড়লে কাকে জানাবেন যাত্রী? মঙ্গলবারের ঘটনায় অভিযোগকারিণী জানাচ্ছেন, ‘ওলা’-এর ক্ষেত্রে যাত্রীর কাছে আসা এসএমএসে ‘কাস্টমার কেয়ার’ নম্বর থাকলেও, ‘উবের’-এর ক্ষেত্রে অ্যাপে ঢুকে তবেই সেখানে থাকা আপৎকালীন নম্বরে ফোন করতে হয়। সেটি সরাসরি ‘১০০’ ডায়ালে অর্থাৎ লালবাজার কন্ট্রোলরুমে চলে যায়। কিন্তু পুরো বিষয়টি সময়সাপেক্ষ তো বটেই, সেই সঙ্গে মোবাইলে নেট চালু থাকা এবং যথাযথ সিগন্যাল থাকার উপরেও নির্ভরশীল। ফলে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছনোর আগে পর্যন্ত যাত্রীকে আতঙ্কের মধ্যেই কাটাতে হতে পারে। যেমনটা ঘটেছিল মাসখানেক আগে অন্য শহর থেকে আসা এক তরুণীর ক্ষেত্রে। ওই তরুণীর অভিযোগ, সে দিন চালক বারবার ‘রিয়ার গ্লাস’ দিয়ে ওই তাঁর দিকে তাকিয়ে অশালীন আচরণ করে গিয়েছিলেন। ভয়ে তিনি প্রতিবাদ করতে পারেননি। পরে অফিসের সহকর্মীদের সাহায্য নিয়ে ভবানীপুর থানায় গিয়ে অভিযোগ করেছিলেন ওই তরুণী।
আর একটি উপায় ঘটনাস্থল থেকে পুলিশকে সরাসরি ফোন করা। অন্যথায় পরে ই-মেলে অভিযোগ জানানো ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। মঙ্গলবারের ঘটনার অভিযোগকারিণী আরও জানাচ্ছেন, আতঙ্কিত অবস্থায় অ্যাপে ঢুকে ফোন করা সম্ভব নয়। ততক্ষণে বিপদ যা হওয়ার ঘটে যেতে পারে। তা হলে উপায় কী? লালবাজারের এক কর্তা জানাচ্ছেন, এ ক্ষেত্রে সরাসরি ‘১০০’ ডায়াল করার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।
‘উবের’-এর পূর্ব ভারতের জেনারেল ম্যানেজার অশ্বিন ডায়াস অবশ্য জানাচ্ছেন, এ ধরনের ঘটনা খুব কমই ঘটে। কারণ তাঁদের মতো সংস্থাগুলি যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখে চালকদের নিয়োগের আগেই বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়। সেখানে যাত্রীদের সঙ্গে কী ভাবে ব্যবহার করবেন এই প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মহিলাদের সঙ্গে যাতে কেউ কোনও অশ্লীল আচরণ না করেন, সে ব্যাপারেও সতর্ক করা হয়। তবু দু’এক জন এ ধরনের আচরণ করে ফেলেন।
তবে যাত্রীদেরও সতর্ক থাকার কথা বলছেন উবের কর্তৃপক্ষ। অশ্বিনের পরামর্শ, যাত্রীরা গাড়িতে উঠেই অ্যাপে ‘লগ ইন’ করে রাখুন। বিপদে পড়লে বা সমস্যা হলে সেখানকার ‘এসওএস’ বোতাম টিপলেই ট্যাক্সি-সহ চালকের তথ্য সংস্থার কন্ট্রোলরুমের পাশাপাশি বিধাননগর পুলিশের কাছে পৌঁছে যাবে। কিন্তু দু’টি অভিযোগই তো জমা প়ড়েছে কলকাতা পুলিশের কাছে। অশ্বিনের দাবি, তাঁরা কলকাতা পুলিশের সঙ্গেও তথ্য বিনিময়ের চুক্তির জন্য আবেদন করেছেন। এ বিষয়ে অন্য আর এক সংস্থা ‘ওলা’র কর্তৃপক্ষের দাবি, যে নম্বরে ফোন করে ট্যাক্সি ‘বুক’ করা হয়, সেই নম্বরেই যাত্রীরা বিপদে পড়লে ফোন করতে পারবেন। সংস্থার তরফ থেকে ফোনে সব ধরনের সহায়তা মেলে বলেই দাবি তাদের।
মঙ্গলবারের ঘটনার অভিযোগকারিণীর অবশ্য ৪৮ ঘণ্টা পরেও আতঙ্ক কাটেনি। উল্টে ওই লাক্সারি ট্যাক্সি সংস্থার কর্তৃপক্ষের উদাসীন মনোভাব তাঁকে আরও আতঙ্কিত করে তুলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy