Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ফেলে দেওয়া কাগজ, কাপড়ে গড়া হচ্ছে ভবিষ্যৎ

মাঠে গিয়ে অন্যের ফেলে দেওয়া কাঠ, কাগজ কুড়িয়ে আনতেন তাঁদের অনেকেই। তা দিয়েই জ্বলত উনুন। তবেই চাপত ভাত।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুচন্দ্রা ঘটক
শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৫৯
Share: Save:

মাঠে গিয়ে অন্যের ফেলে দেওয়া কাঠ, কাগজ কুড়িয়ে আনতেন তাঁদের অনেকেই। তা দিয়েই জ্বলত উনুন। তবেই চাপত ভাত।

জীবন বদলাতে শুরু করে ২০১১ থেকে। ধীরে ধীরে বাতিল সে সব জিনিসই হয়ে ওঠে ভাল থাকার রসদ। অন্যের ফেলে দেওয়া যে সব জিনিস দিয়ে ঘরের টুকিটাকি প্রয়োজন মেটাতেন, সেই সবই ভবিষ্যৎ দেখাচ্ছে তাঁদের সন্তানদের। শুধু সন্তানদের বললে ভুল হয়। কারণ, আপাতত তাঁদের অনেকে ভাল থাকার পাঠ দিচ্ছেন ভিন্‌ দেশের মহিলাদেরও। বেশি দূরের নয়, খাস কলকাতার বাসিন্দা এই মহিলারা। অধিকাংশেরই বাড়ি পূর্ব কলকাতার ধাপা অঞ্চলে।

ধরা যাক, ধাপার পিছনের বস্তির বাসিন্দা মায়া ঘোষ, মুক্তি মণ্ডল, মীরা মণ্ডল, রেখা মণ্ডলের কথা। টানাটানির সংসারে ছিল নিত্য সমস্যা। অভাবের জেরে স্কুলে যাওয়া বন্ধ হতে বসেছিল সন্তানদের। ধাপা থেকে কাঠ কুড়িয়ে আনতেন ওঁরা। রান্নার জ্বালানি পাওয়াও সহজ ছিল না।

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্যে শুরু হয় কাজ। কী কাজ? বাতিল জিনিস ফিরবে নবরূপে। কিছু বর্জ্য থেকে মুক্তি পাবে শহর। সেই কাজ করে নতুন জীবন গড়বেন মহিলারা। এ শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সেই প্রকল্পে এখন কাজ করছেন শ’দেড়েক মহিলা, জানাল ওই সংস্থাই। তাঁদের হাতের জোরে এখন তিন-তিনটি কর্মশালা রয়েছে এ শহরে। তারই প্রধানটি পাটুলিতে। দিনের ব্যস্ত সময়ে সেখানে গেলেই দেখা যায়, বর্জ্য কাগজ, কাপড় দিয়ে টেবিল ম্যাট, পেন স্ট্যান্ড, উপহারের বাক্স— নানা রকম জিনিস বানাচ্ছেন ওঁরা। ছোট্ট ঘরে চলছে কাজ। সঙ্গে গল্প। ছেলে-মেয়ে সংসারের কত কথা!

মায়ার মতো সেখানকার আরও মহিলাদের মুখে শোনা যাবে, কী ভাবে সাহস করে সংসার থেকে কিছুটা সময় নিজেদের ভাল থাকার জন্য বার করে নেন তাঁরা। কত জনের ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা আবার শুরু হয়েছে মায়েদের এই রোজগারের জোরেই। আগে যাঁরা ধাপায় কাঠ কুড়োতেন, এখন তাঁরাই রান্না করছেন গ্যাসে। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে অমৃতা চট্টোপাধ্যায় জানান, কাজটা সহজ ছিল না। বাসিন্দাদের বিশ্বাস অর্জন করতে সময় লেগেছে। তবে এক জন করে এসেই বুঝেছেন, এতে ক্ষতি নেই। এখন ধাপার ওই মহিলাদের হাতে বানানো টেবিল ম্যাট, পার্সেলের বাক্স দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থায় যায়। বিক্রি হয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও। সেই সুবাদে বেড়েছে মহিলাদের আত্মবিশ্বাস। তাঁরাই জানান, এখন কেউ কেউ মাসে হাজার পাঁচেক টাকাও রোজগার করেন।

তবে থেমে থাকলে চলে না কোনও এক ধরনের কাজে। তাই সম্প্রতি ওই সংস্থার তরফেই আয়োজন করা হয়েছিল এক এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের। পাটুলির কর্মশালায় ধাপার মহিলাদের সঙ্গে কাজে যোগ দিয়েছিলেন ভুটানের কয়েক জন মহিলা। পাটুলির মহিলারা তাঁদের শিখিয়েছেন কী ভাবে কাজ করেন নিজেরা। বিনিময়ে ভুটানের মহিলাদের থেকে শিখেছেন বোনার কাজ। যার মাধ্যমে নিজেদের কাজের পরিধি বাড়ানোর আশায় এখন মায়া, রেখা, মীরা, মুক্তিরা। তাঁদেরই এক জন বললেন, ‘‘আমরাও যে অন্যদের কিছু শেখাতে পারি, আগে ভাবিনি।’’

এই কাজে উপকৃত হচ্ছে পরিবেশও। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে দীপায়ন দে যেমন মনে করেন, ‘‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বোঝা যায়, শুধু আবর্জনা সরিয়ে লাভ নেই। তা রিসাইকল করতে হবে। না হলে সেই বর্জ্যের কুপ্রভাব থেকেই যাবে। সেই ভাবনা থেকেই এই কাজ।’’ ওই মহিলাদের মাধ্যমেই অন্তত ২০০ কিলোগ্রাম করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ চলছে প্রতি সপ্তাহে।

অন্য বিষয়গুলি:

Biology Employment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE