বোড়ালের একটি পুজোমণ্ডপ ও প্রতিমা। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।
নানা রূপের কালী আরাধনায় মেতে ওঠে দক্ষিণ কলকাতা। তারই এক ঝলক।
• দশমুণ্ডাকালী: শঙ্কর বোস রোডের দক্ষিণ চেতলা সর্বজনীন মহাকালী পুজোয় কালীর দশটি করে মাথা, হাত ও পা। তারাপীঠের তান্ত্রিক পুজো করেন। বিভিন্ন ফল বলি হয়।
• হাজারহাত কালী: রাখালদাস আঢ্য লেনের চেতলা ফিজিক্যাল কালচার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিমায় দু’টি হাত থাকে। বাকি হাত থাকে চালিতে। কালীর ডান পা পদ্মের উপরে ও বাঁ পা সিংহের উপরে। শিব ধ্যানরত।
• রক্তচামুণ্ডা: চেতলা শান্তি আশ্রমের সত্যানন্দ গিরি মহারাজের উদ্যোগে মিলন সঙ্ঘে রক্তচামুণ্ডার পুজো হয়। রক্তবীজের রক্ত মাটিতে পড়লেই দৈত্যের জন্ম হয়। তাকে হত্যা করে রক্তপান করেন রক্তচামুণ্ডা।
• দশমহাবিদ্যা: পিয়ারিমোহন রোডের ২৪ পল্লি চেতলা সর্বসাধারণ বরাবর কালী, তারা, ষোড়শী, ছিন্নমস্তা, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ধূমাবতী, বগলা, মাতঙ্গী ও কমলাকালী— এই দশমহাবিদ্যার পুজো করে। পুজোর দিন শ্যামাকালীর পুজো হয়। পরের দিন বাকি দেবীদের পুজো হয়।
• চামুণ্ডা: আলিপুর আরাধনা সমিতিতে দেবী চামুণ্ডা রূপে পূজিত হন। পুরাণ অনুযায়ী, দুর্গার কপাল থেকে উঠে এসেছিলেন এক দেবী। পরে তিনি চণ্ড ও মুণ্ডকে নিধন করে দু’টি কাটা মুণ্ড দুর্গাকে দান করেন। তাই দেবীর নাম চামুণ্ডা।
• ডাকাতকালী: তারকেশ্বর যাওয়ার পথে মা সারদাকে নীলু ও ভুলো নামে দুই ডাকাত আখড়ায় ধরে এনে বেঁধে রাখে। পরে এসে দেখে সেখানে বসে রয়েছেন কালী। এর পর ডাকাতি ছেড়ে দেয় তারা। চেতলা রোডের উপর প্রতিষ্ঠিত মন্দিরে তাই পুজো হয় ডাকাতকালীর।
• পঞ্চমুণ্ডা: চেতলা হাট রোডের প্রদীপ সঙ্ঘে ধূমাবতী, শ্যামা, বগলা, এলোকেশী এবং শ্বেতকালী— পাঁচ রূপে পুজো হয়। এখানে পুজোর আয়োজন করেন পুরুষেরা এবং পুজো করেন তারাপীঠের তান্ত্রিকেরা।
এছাড়াও রয়েছে শিবকালী, চন্দ্রঘটা, আদিকালী, কৃষ্ণকালী, শ্বেতকালী, জহুরাকালী প্রমুখ।
• বেহালা মাতৃসেবক: এস এন রায় রোডের এই পুজোয় এ বার বিভিন্ন আকারের ও রঙের এক হাজার ফানুস ব্যবহার হচ্ছে মণ্ডপসজ্জায়। সঙ্গে রং বেরঙের ফাইবার। মা-র তারা রূপ। মানানসই আলোকসজ্জা। থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।
• গড়চা জুয়েল স্টাফ: ডোভার টেরেসের এই পুজোয় মণ্ডপ হচ্ছে কান্দির রুদ্রমন্দিরের আদলে। প্রতিমা সাবেক। নহবৎ বসিয়ে সানাই বাজানো হয়। থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।
• সন্তোষপুর লেক সংগঠনী: ক্যারমের ঘুঁটি, বোর্ড, স্ট্রাইকার ও অ্যালুমিনিয়মের বাটি দিয়ে মণ্ডপসজ্জা। ডাকের সাজের প্রতিমা।
• লায়েলকা মৈনাক ক্লাব: অরণ্য বাঁচানোর আবেদনে গাছপালা, কীটপতঙ্গের মডেল দিয়ে তৈরি হবে মণ্ডপ। প্রতিমার অলঙ্কারও হবে লতাপাতার অনুকরণে।
• শ্রীকলোনি সমাজ সঙ্ঘ: মণ্ডপে থাকছে ‘অরুণ-বরুণ-কিরণমালা’য় বর্ণিত গা ছমছমে পরিবেশের বর্ণনা। থাকবে ছায়াছবি, আলো-আঁধারি, রাক্ষস ও দৈত্যের মডেল।
• যাদবপুর যাত্রিক: মন্দিরের আদলে মণ্ডপ। আকর্ষণ তুবড়ি প্রতিযোগিতা।
• আজাদগড় টালিগঞ্জ বয়েজ স্পোর্টিং ক্লাব: সাঁওতাল গ্রামের মতো মণ্ডপ। প্রতিমা সাঁওতাল রমণীর আদলে। দেখা যাবে সাঁওতাল নৃত্য।
• রিজেন্ট কলোনি টালিগঞ্জ ছাত্র সঙঘ: জবা ফুলের আদলে মণ্ডপ। প্রবেশপথ কালীর পায়ের আদলে। ভিতরেও থাকবে জবার নানা কারুকার্য।
• নেহরু কলোনি কালী পুজো কমিটি: ভীমবেটকা গুহার আকারে মণ্ডপ। থাকবে প্রতিচ্ছবি ও মডেল।
• নেতাজি নগর ফোরএসসি: বজরার আদলে মণ্ডপ। ভিতরে বেতের কাজ।
• টালিগঞ্জ ম্যুর অ্যাভিনিউর রসা শক্তি সেবক সঙ্ঘ: পুরনো রাজবাড়ির আদলে মণ্ডপ। প্রতিমা শ্মশানকালীর অনুকরণে।
• বিজয়গড় সবুজ সঙ্ঘ: বিভিন্ন রঙের মোমবাতি দিয়ে সাজানো হবে প্রবেশ পথের দু’ধার। মন্দিরের আদলে মণ্ডপ।
• সূর্যনগর মাস্টারদা ক্লাব: পনেরোটি নৌকায় সাজানো হচ্ছে মণ্ডপ। মনসামঙ্গলের কাহিনি কাঠের উপরে খোদাই করা হবে।
• বাঁশদ্রোণি মিতালি: বাঁশের কঞ্চি দিয়ে সাজছে মণ্ডপ। ধামসা-মাদল বাজাবেন জঙ্গলমহলের শিল্পীরা।
• বিজয়গড় অগ্রগামী: সাবেক মণ্ডপ ও প্রতিমা।
• বেহালা অভ্যুদয়: মণ্ডপ সাজানো হবে মধুবনী শিল্পকলায়। দশটি হাত এই প্রতিমার বিশেষত্ব।
• রায়নগর যুবকবৃন্দ: চেন্নাইয়ের একটি মন্দিরের আদলে মণ্ডপ হচ্ছে।
• নেতাজিনগর শরৎস্মৃতি সঙ্ঘ: বাংলাদেশের সিলেটের একটি মন্দিরের আদলে মণ্ডপ। প্রতিমাও সেই কালী মূর্তির আদলে।
• ফুলবাগান বৈতালিক: নানা রকম উপকরণে তৈরি মণ্ডপ। সঙ্গে মানানসই আলোকসজ্জা। পাড়ার প্রতিটি বাড়ি এই পুজোয় অংশ নেয়।
• গরফা ১২-র পল্লি: ৫০ বছরে পা দিল গরফার এই পুজো। মণ্ডপ, আলোকসজ্জা সব মিলিয়ে এখানে উৎসবের মেজাজ। সাবেক প্রতিমা।
• বিবেকানন্দ সংঘ, বাঘযতীন জি-ব্লক: পুজোর থিম করেন বাসিন্দারা। মণ্ডপসজ্জায় হাত লাগান বাড়ির
মেয়ে-বউরা। পুজোর আকর্ষণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
• অগ্রাসী ক্লাব (বেহালা পি বি রোড): বেলুড় মঠের আদলে মণ্ডপ। প্রতিমা সাবেক দক্ষিণাকালীর। কালীপুজোর দিন থাকছে বসানো তুবড়ি প্রতিযোগিতা। রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।
ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।
তথ্য: দীক্ষা ভুঁইয়া ও দেবাশিস দাস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy