ভাঙচুরের পরে ঠাকুরপুকুর ইএসআই হাসপাতাল। রবিবার।
এক কিশোরের মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে উত্তাল হল ঠাকুরপুকুরের ই এস আই হাসপাতাল। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার সকালে।
পুলিশ জানায়, এ দিন সকালেই ওই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল তারাতলা থানার গরাগাছা রোডের বাসিন্দা বিবেক সরকারকে (১৩)। ভর্তির ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই মৃত্যু হয় তার। এর পরে হাসপাতাল চত্বরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন মৃত কিশোরের পরিবারের লোকেরা। তাঁদের অভিযোগ, দিন দুয়েক আগেই জ্বর ও বমির জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল বিবেককে। কিন্তু তাকে ভর্তি নেননি চিকিৎসকেরা। আগেই ভর্তি করে নিলে হয়তো বাঁচানো যেত ওই কিশোরকে বলে অভিযোগ তাঁদের। হাসপাতালের পাল্টা অভিযোগ, ওই কিশোরের মৃত্যুর খবর পেয়ে আই সি ইউ-র মধ্যেই ভাঙচুর শুরু করেন মৃত কিশোরের পরিজনেরা। দু’টি ভেন্টিলেটর ও একটি কম্পিউটার উল্টে মেঝেতে ফেলে দেওয়া হয়। আইসিইউ-র ভিতরে এমন তাণ্ডব দেখে আতঙ্ক ছড়ায় রোগীদের মধ্যে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শেষে হাসপাতাল থেকে খবর যায় পুলিশে। ইতিমধ্যে মৃতের বাড়িতে খবর গেলে হাসপাতালে জড়ো হন আরও অনেকে। অভিযোগ, পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট ছোড়েন মৃতের আত্মীয়েরা। পুলিশ তাঁদের উপরে পাল্টা লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ। আটক করা হয়েছে পাঁচ জনকে।
আরও পড়ুন: পরিকাঠামোর অভাবে ধুঁকছে রাজ্যের স্কিন ব্যাঙ্ক
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মৃত কিশোর গত বৃহস্পতিবার থেকে জ্বরে ভুগছিল। সঙ্গে বমি হচ্ছিল। শুক্রবার সকালে ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ছেলেকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন বিবেকের মা পায়েল সরকার ও বাবা বাপি সরকার। মৃতের পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, শুক্রবার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে একটি ই়ঞ্জেকশন ও কিছু ওষুধ দিয়ে তাকে বাড়ি পাঠানো হয়। মৃত কিশোরের মা পায়েল সরকারের অভিযোগ, ‘‘শুক্রবার ওই ওষুধ খাওয়ানোর পরে জ্বর ও বমি কিছুটা কমলেও রাত থেকে ফের বাড়াবাড়ি হয়। শনিবার সকালে ছেলেকে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমাকে অপমান করে, আগের ওষুধেই কাজ হবে বলে বা়ড়ি পাঠিয়ে দেন।’’ ছেলে হারানোর শোকে হাসপাতালের সামনে জ্ঞান হারানোর ফাঁকে বারবার কর্তব্যরত চিকিৎসকদের তরফে দুর্ব্যবহারের এই অভিযোগ তোলেন পায়েলদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘শনিবার বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পরে রাত থেকে ফের বাড়াবাড়ি শুরু হয়। বাড়তে থাকে জ্বর ও বমি। রবিবার ভোরে রক্তবমিও হয় ছেলের।’’ এর পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সকাল ছ’টা নাগাদ হাসপাতালে এনে বিবেককে আইসিইউ-তে ভর্তি করা হয়। সাতটা নাগাদ মৃত্যু হয় তার। হাসপাতালের অভিযোগ, এর পরেই সেখানে শুরু হয় তাণ্ডব। কিশোরের মৃত্যুর খবর পেয়ে ৩-৪টি গাড়ি করে বিবেকদের প্রতিবেশীরা হাসপাতালে আসেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঠাকুরপুকুর থানা ও লালবাজার থেকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
মৃত বিবেক সরকার। (ডানদিকে) শোকার্ত মা পায়েল সরকার।
বড় ছেলেকে হারিয়ে মা পায়েলদেবী এ দিন বারবার অভিযোগ করেন, ‘‘আগে ভর্তি নিলে এমন ঘটত না।’’ তাঁদের আরও অভিযোগ, এ দিন কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্স বিবেককে ইঞ্জেকশন দেওয়ার সময়ে তার হাত থেকে প্রবল রক্তপাত শুরু হয়। এর কিছু পরেই মৃত্যু হয় কিশোরের। পায়েলদেবীর প্রশ্ন, ‘‘ছেলেকে কী এমন ইঞ্জেকশন দেওয়া হল যে, কিছুক্ষণ পরেই মৃত্যু হল?’’
ডিসি (সাউথ-ওয়েস্ট) মিরাজ খালিদ, স্থানীয় কাউন্সিলর রাম পিয়ারী রাম হাসপাতালে এসে এ দিন সুপারের সঙ্গে দেখা করেন। গাফিলতির কথা অস্বীকার করে হাসপাতালের সুপার সমীরকুমার চৌধুরী বলেন, ‘‘চিকিৎসায় কোনও গাফিলতি ছিল না। শুক্রবার থেকে রোগী নিয়ে আসা হয়েছিল বলে রোগীর পরিবারের তরফে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা আমাদের রেকর্ডে নেই। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’’ ডিসি মিরাজ খালিদ বলেন, ‘‘মৃতদেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy