হাওড়া স্টেশনের ট্যাক্সি স্ট্যান্ড। বৃহস্পতিবার, সকালে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
হাওড়া স্টেশনের বাইরে ফাঁকা ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলেন আমদাবাদের ঋষি দাস, ‘‘এ কেমন শহর যেখানে ট্যাক্সি ধর্মঘট হয়?’’ বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে দুপুরে হাওড়ায় পৌঁছে দেখেন কোনও ট্যাক্সি নেই। হাওড়া সিটি পুলিশের ট্রাফিক পুলিশের কাছে জানতে পারেন, ৪৮ ঘণ্টার ট্যাক্সি ধর্মঘট। ঋষি বলেন, ‘‘ট্যাক্সির মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা কী ভাবে বন্ধ থাকে? আমদাবাদে এটা কেউ ভাবতেও পারেন না।’’
শুধু ঋষিই নন, এ ভাবে দিনভর ট্যাক্সি না পেয়ে নাজেহাল হয়েছে হাজার হাজার যাত্রীকে। হাওড়া স্টেশন থেকে শুরু করে শিয়ালদহ স্টেশন, কলকাতা বিমানবন্দর— সর্বত্র একই চিত্র। সকাল ৮টার পর থেকে কার্যত ট্যাক্সি-শূন্য হয়ে গিয়েছে স্টেশন বা বিমানবন্দর চত্বর। শাসক দলের ট্যাক্সি ইউনিয়নের কিছু গাড়ি চলেছে বটে, চলেছে কিছু সরকারি বাসও। কিন্তু তা-ও প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এই সুযোগে ট্যাক্সি থেকে অটো— হেঁকেছে ইচ্ছেমতো ভাড়া।
বিমানবন্দরে পুলিশ ও কর্তৃপক্ষের তরফে দাবি, অন্য বার ট্যাক্সি ধর্মঘটে যাত্রীরা যতটা নাকাল হন, ততটা এ দিন হতে হয়নি। তার প্রধান কারণ ছিল পর্যাপ্ত বাস। বৃহস্পতিবার সকাল ও সন্ধ্যায় বেশি ভলভো বাস রাখা ছিল বিমানবন্দরে। বিমানবন্দর থেকে ধর্মতলা ও হাওড়া স্টেশনে যাত্রীদের নিয়ে যাতায়াত করেছে সেগুলি। সিএসটিসি-র এসি বাসও নিয়মিত যাতায়াত করেছে বিমানবন্দর থেকে। সকাল ন’টা পর্যন্ত কিছু হলুদ ট্যাক্সিও ছিল বিমানবন্দর চত্বরে। পরে তা কমতে শুরু করে। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘সারা দিনই হলুদ ট্যাক্সি বিমানবন্দরে ঢুকেছে। যাত্রী তুলেই বেরিয়ে গিয়েছে। তবে অন্য দিন যেমন লাইন করে হলুদ ট্যাক্সি থাকে, তেমন ছিল না।’’ সাদা ট্যাক্সি, ভাড়ার গাড়িও মিলেছে বিমানবন্দরে। কিছু ক্ষেত্রে যাত্রীদের থেকে তুলনায় বেশি টাকা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বহু যাত্রী আবার ওলা-উবের ডেকে নিয়েছেন।
বিমানবন্দরের মতো অবস্থা অবশ্য ছিল না হাওড়া স্টেশনে। সেখানে সকাল থেকেই চোখে পড়ার মতো ছিল দালালের দাপট। বহু যাত্রীর অভিযোগ, হাওড়া থেকে ধর্মতলার ভাড়া যেখানে দেড়শো টাকার বেশি নয়, সেখানে ৪০০ টাকা হেঁকেছেন দালালেরা। এমনকী, যে কয়েকটি ট্যাক্সি স্টেশন চত্বরে দেখা গিয়েছিল দালালের দল তাদের তাড়া করে স্টেশন ছাড়তে বাধ্য করেছে। দুন এক্সপ্রেসের যাত্রী রণিত কপূর ও তাঁর স্ত্রী কসবা যাবেন বলে ট্যাক্সি খুঁজছিলেন। তিনি যখন দিশাহারা তখন প্রিপেড ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে যাত্রী-ভিড়ে মিশে থাকা এক ব্যক্তি এসে জানান, রেলের পার্কিং লটে গাড়ি রয়েছে। কসবা যেতে লাগবে ৮০০ টাকা। অগত্যা তাতেই রাজি হন তাঁরা। একই অবস্থা পটনা-জনশতাব্দী এক্সপ্রেসে আসা নমিতা মিশ্রের। বৃদ্ধা মাকে নিয়ে এসে প্রায় দেড় ঘণ্টাতেও দমদমের ট্যাক্সি পাননি। তাঁকেও দালালেরা গাড়ি দেন তিনগুণ টাকায়।
পুলিশি জুলুম, ওয়েটিং চার্জ বাড়ানো ও ওলা-উবেরের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট ডেকেছিল সিটু ও বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন। ওই দাবিকে অনড় থেকে আজ, শুক্রবারও ধর্মঘট চলবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন ওই দুই সংগঠনের নেতারা। সরকার দাবি না-মানলে ধর্মঘটের সময়সীমা আরও বাড়ানোর হুমকিও দিয়েছে বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিসেয়শন। অর্থাৎ, যাত্রীদের ভোগান্তি অন্তত শুক্রবারের আগে কমছে না। বরং বাড়ার আশঙ্কা প্রশাসনের একাংশের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy