সারা বছরই প্লেটলেটের আকাল লেগে থাকে। কিন্তু বর্ষার মরসুমে চাহিদা আরও বাড়ে। সেই সঙ্গে বাড়ে দালাল-চক্রের দাপটও। কিন্তু তার পরেও কি হুঁশ ফিরেছে? প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের অন্দরেই।
রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে লোকাভাব মেটাতে নতুন করে নিয়োগ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কর্মসংস্কৃতি রয়ে গিয়েছে সেই তিমিরেই। বিভিন্ন শিবির থেকে যে রক্ত ব্লাড ব্যাঙ্কে আসে, তা তিন ভাগে ভাগ করার পরিকাঠামো এখনও সর্বত্র নেই। কিছু ব্যাঙ্কে সেই পরিকাঠামো থাকলেও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কর্মীদের গয়ংগচ্ছ মনোভাবের জন্যই প্লেটলেট ঠিকমতো পাওয়া যায় না। আরও অভিযোগ, কর্মীদের একাংশ বিভিন্ন বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের হয়ে কাজ করছেন।
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, রক্তের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় প্লেটলেট খুব জরুরি। এমন অনেক রোগ আছে, যার জন্য দিনে পাঁচ থেকে ছয় ইউনিট পর্যন্ত প্লেটলেট দরকার হয়। কিন্তু সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক রোগীকে দুই ইউনিটের বেশি প্লেটলেট দিতে পারে না। ডেঙ্গির সংক্রমণে রক্তে প্লেটলেট কমে যায়। তখন বাইরে থেকে প্লেটলেট দিয়েই রোগীকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। কিন্তু সেই জরুরি সময়ে ফি-বছরই প্লেটলেটের আকাল দেখা দেয়। সেই ধারা এ বছরও বজায় থাকবে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের একাংশ। কারণ, রক্তের বিভিন্ন রোগের জন্য প্রয়োজনীয় প্লেটলেট দিতেই হিমশিম খাচ্ছে ব্লাড ব্যাঙ্কগুলি। তার উপরে ডেঙ্গির সময়ে অতিরিক্ত প্লেটলেটের জোগান দেওয়ার জন্য যে দক্ষতা এবং পরিকাঠামো দরকার, সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কগুলির তা রয়েছে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা জানান, বিভিন্ন সরকারি ব্লা়ড ব্যাঙ্কে পর্যাপ্ত রক্ত থাকা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষকে বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে প্লেটলেট কিনতে হচ্ছে। তার কারণ, রক্তের উপাদান ভাগ করার কাজে কর্মীদের একাংশের অনীহা। গত বছর প্লেটলেটের ইউনিট প্রতি দাম পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়েছিল। সরকারি হাসপাতাল ও ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা উদ্যোগী হলেই এই পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য দফতরের একাংশ।
রক্তদান আন্দোলনের কর্মী এবং ‘ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরাম’-এর সাধারণ সম্পাদক অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘‘অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। জরুরি পরিস্থিতি সামাল দিতে যে ধরনের পরিকল্পনা দরকার, তার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তাজা রক্ত থেকে প্লেটলেট আলাদা করতে হয়। তাই প্রয়োজন বাড়লে সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক কতটা সামাল দিতে পারবে, সে নিয়ে সংশয় রয়েছে।’’ রক্তদান আন্দোলনের আর এক কর্মী দীপঙ্কর মিত্র বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সরকারি হাসপাতালে সমস্ত পরিষেবা বিনামূল্যে দিতে বলেছেন। ব্লাড ব্যাঙ্কে কর্মী নিয়োগও হয়েছে। তবু পর্যাপ্ত পরিকল্পনা ও সদিচ্ছার অভাবে সাধারণ মানুষকে টাকা দিয়ে রক্ত কিনতে হচ্ছে।’’
যদিও সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের অধিকর্তা কুমারেশ হালদার বলেন, ‘‘গত বছরের তুলনায় পরিস্থিতি ভাল। রক্তের জোগান যথেষ্ট রয়েছে। এ বার কর্মীও পর্যাপ্ত। তাই আশা করছি, প্লেটলেটের অভাব হবে না। কিছু গ্রুপের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি খারাপ নয়।’’
স্বাস্থ্য ভবনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘প্লেটলেটের জোগান রয়েছে। কিন্তু সেটা পর্যাপ্ত কি না, বলা মুশকিল। ডেঙ্গির দাপট কেমন হবে, তার উপরেই অনেকটা নির্ভর করে। তবে গত বছরের সমস্যা
থেকে শিক্ষা নিয়ে প্লেটলেটের জোগানের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। জেলাগুলিতেও প্লেটলেটের আলাদা সেন্টার তৈরির নির্দেশ
দেওয়া হয়েছে।’’
পরিকাঠামোর অভাবের পাশাপাশি এ বার সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের কিছু কর্মীর দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলল কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোল বোর্ড। সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের লাইসেন্স নবীকরণের জন্য কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ পরিদর্শনের পরে যে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে, তাতে স্বাস্থ্য দফতর সে কথাই জানিয়েছে। যদিও অধিকর্তার দাবি, এমন কিছুই রিপোর্টে নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy