Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

দুই বাংলার ছিন্ন হওয়ার ইতিহাস নিয়ে শহরে সংগ্রহশালা

কমিশনের চেয়ারম্যান শুভাপ্রসন্ন বলেন, ‘‘পার্টিশন মিউজ়িয়াম করার কথা ভাবা হয়েছে। বাংলার এত সমৃদ্ধ ইতিহাস, তার একটা স্থায়ী সংগ্রহশালার ভীষণ প্রয়োজন। না হলে পরবর্তী প্রজন্ম কিছুই জানতে পারবে না এ বিষয়ে। তাই এই পরিকল্পনা।’’

আশ্রয়ের খোঁজে: ট্রেনে এবং জাহাজে পূর্ববঙ্গ থেকে শহরে আসা উদ্বাস্তুরা। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে

আশ্রয়ের খোঁজে: ট্রেনে এবং জাহাজে পূর্ববঙ্গ থেকে শহরে আসা উদ্বাস্তুরা। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৯ ০০:৩৬
Share: Save:

দেশভাগ ছিন্ন করেছিল বাংলাকে। দুই বাংলার মধ্যে উঠেছিল কাঁটাতার। এ বার ছিন্ন হওয়ার সেই ইতিহাসের সংগ্রহশালা তৈরি করতে চলেছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। অমৃতসরে দেশভাগের একটি সংগ্রহশালা রয়েছে। কমিশন এবং হেরিটেজ বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, বাংলা-ভাগের সংগ্রহশালা এখনও পর্যন্ত সে ভাবে কোথাও গড়ে ওঠেনি। এ বার কমিশনের তরফে সেই ইতিহাসকেই একটি স্থায়ী রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আলিপুর সংশোধনাগারে এই সংগ্রহশালা তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। কমিশন সূত্রের খবর, জায়গাও প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও সেই জায়গা নিয়ে জটিলতা রয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। তবে এ ধরনের উদ্যোগ এই প্রথম বলে জানাচ্ছেন কমিশনের কর্তারা।

কমিশনের চেয়ারম্যান শুভাপ্রসন্ন বলেন, ‘‘পার্টিশন মিউজ়িয়াম করার কথা ভাবা হয়েছে। বাংলার এত সমৃদ্ধ ইতিহাস, তার একটা স্থায়ী সংগ্রহশালার ভীষণ প্রয়োজন। না হলে পরবর্তী প্রজন্ম কিছুই জানতে পারবে না এ বিষয়ে। তাই এই পরিকল্পনা।’’ কমিশন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই সংগ্রহশালা তৈরির জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ইতিহাসবিদদের নিয়ে একটি কমিটিও তৈরি করা হবে। তাঁরাই ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতটা দেখবেন। গবেষকদেরও নিযুক্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে। পুরো প্রকল্পের জন্য একটি তথ্যভাণ্ডার গড়ার কথা হচ্ছে। সূত্রের খবর, এ বার শুধু প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের ছাড়পত্র পাওয়ার অপেক্ষা।

কমিশনের আধিকারিকদের কয়েক জন জানাচ্ছেন, কিছু দিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছিল। কারণ, দেশভাগের সময়ে এপার-ওপার বাংলার নিজস্ব ইতিহাস, যা কালক্রমে ছিন্ন হয়ে গিয়েছে, তা একত্রিত ভাবে কোথাও সংরক্ষিত নেই। আর অবিচ্ছিন্ন বাংলার ইতিহাসের পরিসর ও বিস্তার যতটা, ততটাই তার গভীরতা। বাংলা ভাগের স্মৃতি নিয়ে এখনও বহু মানুষ বেঁচে আছেন। এই ভাগকে কেন্দ্র করে কত সংস্কৃতির আদানপ্রদান, কত শিল্পের সৃষ্টি হয়েছে! কমিশনের এক সদস্য বলছিলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথাই ধরুন না। তিনি কি শুধু এ বাংলার? তিনি দুই বাংলারই। এই বৃহৎ ইতিহাসের একটা দলিল থাকা দরকার। তবে শুধু মনীষী বা খ্যাতনামা ব্যক্তি বা পরিবার নয়, সাধারণ মানুষের যে ইতিহাস, তা-ও বর্তমানের প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ।’’

কমিশনের সদস্যেরা জানাচ্ছেন, অমৃতসরে দেশভাগ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে একটি সংগ্রহশালা রয়েছে। সরকারি তরফেও সেই সংগ্রহশালা তৈরি করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। তার পরে দীর্ঘদিন ধরে বাংলায় সে রকম সংগ্রহশালা করার কথা ভাবা হচ্ছিল। তবে কমিশনের সদস্যদের একাংশ এ-ও জানাচ্ছেন, ‘পার্টিশন’ মিউজ়িয়াম করা খুবই কঠিন কাজ। কারণ, যে কোনও মিউজ়িয়ামের মূল সম্পদ হল তার সামগ্রী বা ভাণ্ডার। কী ধরনের সামগ্রী বা ভাণ্ডার সংগ্রহশালায় প্রদর্শিত হচ্ছে, তার উপরেই নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট সংগ্রহশালার চরিত্র ও খ্যাতি। সে দিক থেকে দেখলে বাংলা-ভাগের ব্যাপ্তি ও পরিসর দীর্ঘ, তার ইতিহাসের মতোই। তাই কী ধরনের সামগ্রী সেখানে থাকবে, কী কী প্রদর্শিত হবে, তার সুনির্দিষ্ট রূপরেখার প্রয়োজন। এক হেরিটেজ বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘অন্য মিউজ়িয়ামের থেকে পার্টিশন মিউজ়িয়ামের চরিত্রগত একটি পার্থক্য রয়েছে। শুধুমাত্র বাংলা-ভাগের উপরে কী কী সামগ্রী সংগ্রহ করা যাবে, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।’’ কমিশনের অন্য এক সদস্যের কথায়, ‘‘গবেষণার দিকটি এখানে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এটা কয়েক জন গবেষকের বিষয় নয়। কারণ, যে পরিমাণ সামগ্রী বা উপাদান জোগাড় করতে হবে, তা মুখের কথা নয়!’’

অন্য বিষয়গুলি:

State Heritage Commission Partition Archive
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE