বেঙ্গল কেমিক্যাল ‘স্ট্র্যাটেজিক সেল’ করা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাজ্যের তৃণমূল সাংসদেরা যখন সরব, তখনই সেই সংস্থার তৈরি ওষুধ এবং কীটনাশক রাজ্য সরকার না কেনায় অস্বস্তিতে তৃণমূলের একাধিক নেতা-মন্ত্রীও। সংস্থার কর্মীদের আক্ষেপ, বাংলার এই প্রতিষ্ঠানের তৈরি সামগ্রী রাজ্য সরকার তো কেনেই না। এমনকী, পুরসভাও তা কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ, রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর এবং পুরসভা ওই ধরনের সামগ্রী কেনার জন্য প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা খরচ করে। তা হলে বন্ধ করা হল কেন?
রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি যখন পুরসভার জল সরবরাহ দফতরের মেয়র পারিষদ ছিলাম, তখন তো বেঙ্গল কেমিক্যাল থেকে জল শোধনের জন্য অ্যালাম কেনা হত। এখন হয়তো ওরা আবেদন করেনি, টেন্ডারও দেয় না। তাই কেনা হয় না।’’
যদিও বেঙ্গল কেমিক্যালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত বছরই সংস্থার মালপত্র কেনার আর্জি জানিয়ে মেয়রের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন সংস্থার মার্কেটিং ম্যানেজার। কিন্তু এখনও কোনও জবাব মেলেনি। এমনকী, স্বাস্থ্য ভবনে গিয়ে স্বাস্থ্য সচিবের কাছেও একই আবেদন জানানো হয়েছিল। তাতেও সাড়া মেলেনি। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, প্রতি বছর রাজ্য সরকার প্রায় হাজার কোটি টাকার ওষুধ এবং কীটনাশক কেনে। তার ১০ শতাংশ বরাতও যদি বেঙ্গল কেমিক্যাল পেত, তা হলে শতাব্দীপ্রাচীন এই সংস্থার পথ চলা আরও মসৃণ হত। সংস্থার বক্তব্য, যে হেতু এটা কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা, তাই টেন্ডার ছাড়াই এখান থেকে মাল কেনা যেতে পারে। দেশের অন্যান্য রাজ্য সে ভাবেই কেনে।
দেশের প্রথম ওই ওষুধ কারখানা আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের তৈরি। সেখানে ফিনাইল, অ্যালাম, ব্লিচিং পাউডার-সহ বেশ কয়েকটি অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট, ক্যাপসুল এবং সিরাপ তৈরি হয়। ১৯৮১ সালে সংস্থাটি অধিগ্রহণ করে কেন্দ্র। সংস্থার এক অফিসার জানান, তাদের কারখানায় তৈরি সুগন্ধি তেলের নিয়মিত গ্রাহক প্রতিরক্ষা দফতর। এ ছাড়া তামিলনাড়ু, অন্ধপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাব, হিমাচলপ্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, দিল্লি, ঝাড়খণ্ড সরকার ওই সংস্থার তৈরি ওষুধ, ফিনাইল, ব্লিচিং পাউড়ার কেনে। এনটিপিসি জল শোধনের জন্য তাদের আল্যাম ব্যবহার করে। অথচ, যে রাজ্যে জন্ম ওই সংস্থার, সেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার এখান থেকে সামগ্রী না কেনায়
ব্যথিত কর্মীরা।
এক সময়ে এ রাজ্যের সরকার এবং কলকাতা পুরসভা বেঙ্গল কেমিক্যালের তৈরি মালপত্র কিনত। কিন্তু গত আট-নয় বছর ধরে তা বন্ধ। গত কয়েক বছর ধরে লোকসানে চলা ওই সংস্থা ২০১৬ সাল থেকে লাভের মুখ দেখছে। লাভের পরিমাণ এক কোটি ১৬ লক্ষ টাকা। সংস্থার দাবি, তাদের তৈরি মালপত্রের মান খুব ভাল। পরীক্ষা করলেই তার প্রমাণ মিলবে।
বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড (বিসিপিএল)-এর তৃণমূল কর্মী ইউনিয়নের সভাপতি রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। কর্মীদের দাবি সম্পর্কে তিনিও অবহিত। বললেন, ‘‘ওই সংস্থার প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাতে বলেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy