—প্রতীকী চিত্র।
তিন জনই অপরাধ জগতের। নিউ আলিপুরে বৃদ্ধ খুনের সঙ্গে তাদের যদিও সরাসরি সম্পর্ক নেই। তবে এই ত্রয়ীকে হাতে পেয়েই ওই খুনের তদন্তে বাজিমাত করেছে পুলিশ!
প্রথম জন ছোটখাটো চোর। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সে জোড়া আততায়ীর এক জনকে চিহ্নিত করে। যদিও নিশ্চিত বলতে পারেনি। দ্বিতীয় জন এক সময়ের দাগি দুষ্কৃতী, তবে এখন অপরাধীদের নিজের ডেরায় আশ্রয় দেয় লুঠের জিনিসের বখরার বিনিময়ে। সে সন্ধান দিয়েছিল সম্ভাব্য ওই আততায়ীর ঘনিষ্ঠ এক যুবকের, সে-ও দাগি আসামি। আর তৃতীয় জন ফুটেজ দেখে নিশ্চিত ভাবে চিনিয়ে দিল আততায়ীকে। তদন্তকারীরা জেনে গেলেন, নিউ আলিপুরে বৃদ্ধ খুনের অন্যতম সম্ভাব্য আততায়ীর নাম ডাম্পার ওরফে সুরজ মণ্ডল।
ডিসি (সাউথ) প্রবীণ ত্রিপাঠী বলছেন, ‘‘হিউম্যান ইন্টেলিজেন্স অর্থাৎ চরেদের ভূমিকা আমাদের কাজে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, নিউ আলিপুরের হত্যা রহস্যের কিনারা সেটাই আবার প্রমাণ করে দিল। এর কোনও বিকল্প নেই।’’
দেড় দশক আগের কথা। কলকাতার পুলিশ কমিশনার তখন সুজয় চক্রবর্তী। গোয়েন্দা বিভাগের কিছু কর্তার সঙ্গে দাগি দুষ্কৃতীদের মেলামেশা নিয়ে লালবাজারের অন্দরে গুঞ্জন। সিপি সাফ জানিয়েছিলেন, অপরাধ জগতের ভিতরের খবর পেতে পুলিশ নিশ্চয়ই সাধু-সন্ন্যাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে না!
তখন মোবাইল থাকলেও ব্যবহার ছিল সীমিত। শহর মুড়ে ফেলা হয়নি সিসিটিভি-তে। মগজাস্ত্র আর ‘সোর্স নেটওয়ার্ক’-ই ছিল অপরাধের কিনারায় পুলিশের মূল হাতিয়ার। কিন্তু কিছু দিন ধরে সেই সোর্স নেটওয়ার্কে ভাটা পড়ার কথা মেনে নিয়েছিলেন গোয়েন্দা অফিসারেরাই। নিউ আলিপুরের বৃদ্ধ খুনের কিনারা করে সেই কালি কিছুটা হলেও মোছা গেল বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, খুনের দিন দশেক পরেও মনে হচ্ছিল, তদন্ত ঘুরপাক খাচ্ছে অন্ধ গলিতে। সিসিটিভি ফুটেজে দুই সম্ভাব্য আততায়ীর ছবি পেয়ে আর নিহত বৃদ্ধ মলয় মুখোপাধ্যায়ের মোবাইলের ক্রেতাকে কুলপিতে চিহ্নিত করে ও তার সঙ্গে কথা বলেও তদন্তকারীরা অসহায়। তখনই কেরামতি দেখাল ‘সোর্স’।
লালবাজার সূত্রের খবর, দিন সাতেক আগে বেহালার সাহেব মহল থেকে এক ছিঁচকে চোরকে গ্রেফতার করে আনলে সে সিসিটিভি ফুটেজে এক জনকে দেখিয়ে তদন্তকারীদের বলে, ‘মনে হচ্ছে এটা ডাম্পার। তবে বাজি ফেলে বলতে পারব না।’ এর পরে বেহালারই গোবরঝুড়ি থেকে পুলিশ নিয়ে আসে উঠতি দুষ্কৃতীদের আশ্রয়দাতা, এক সময়ে টালিগঞ্জ ও চারু মার্কেটে ‘কাজ’ করা সেই দাগিকে। সে বলল, ‘ডাম্পারকে চিনি না। তবে যে ডাম্পারের সব চেয়ে ঘনিষ্ঠ, তাকে চিনি।’ ডাম্পারের ঘনিষ্ঠ সেই চোর এর পর সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বলে, ‘এটাই ডাম্পারই।’
তবে জানা গেল, ডাম্পার এখন সাহেব মহলে নেই। দেশের বাড়ি নিশ্চিন্দপুরে হলেও বেহালায় তার বাবার মাছের ব্যবসা, মা পরিচারিকার কাজ করেন। তদন্তকারীরা জানতে পারলেন, মলয়বাবু খুন হওয়া ইস্তক ডাম্পার কলকাতায় আসছে না।
শুক্রবার রাতে ডাম্পার ওরফে সুরজের গ্রামের বাড়িতে যখন পুলিশ হানা দিল, সে তখন নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। সুরজ জানিয়েছে, বিক্রি করতে পারেনি বলে সে লুটের মালের একাংশ প্লাস্টিকের মোড়কে বেঁধে সুতো দিয়ে বাড়ির পাশে পুকুরে ডুবিয়ে রেখেছে। সুরজ ও তার খুড়তুতো ভাই জাকির হোসেন মোল্লা পুলিশকে বলেছে, চুরির সময়ে বৃদ্ধের ঘুম ভেঙে যায় ও তিনি চিৎকার করতে যান। তখনই তাঁকে গলা টিপে, মুখে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করে তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy