Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Suicide

সন্দেহের বশে মাকে কুপিয়ে আত্মঘাতী ছেলে

বৃহস্পতিবার রাতে বালির নিশ্চিন্দা থানার জামতলার সুভাষপল্লিতে ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম তারক পাল।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২০ ০৩:১৭
Share: Save:

মা তাঁর উপরে ‘তুকতাক’ করছেন। এমনই সন্দেহ ছিল ছেলের। অভিযোগ, সেই সন্দেহের বশেই মাকে কাটারি দিয়ে কোপালেন বছর পঁয়তাল্লিশের এক ব্যক্তি। ঘটনার পরে উদ্ধার হল ওই ব্যক্তির ঝুলন্ত দেহও। প্রাণে বেঁচে গেলেও গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বৃদ্ধা মা।

বৃহস্পতিবার রাতে বালির নিশ্চিন্দা থানার জামতলার সুভাষপল্লিতে ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম তারক পাল। তিনি একটি ব্যাগ তৈরির কারখানায় কাজ করতেন। বেলুড় স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তারকের মা সুভদ্রাদেবী (৬৫)। তাঁর মাথায় ও ঠোঁটের উপরে আটটি, এবং বাঁ হাতে দু’টি সেলাই পড়েছে।

সুভাষপল্লিতে একটি টালির ছাউনির ছোট ঘরে বসবাস সুভদ্রাদেবীর। রান্না ও একশো দিনের কাজ থেকেই রোজগার করতেন। তাঁর ঘরের পাশে আর একটি ঘরে দুই মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে থাকতেন তারক। স্থানীয়েরা জানান, তাঁর স্ত্রী-ও আলাদা থাকেন।

শুক্রবার ওই বৃদ্ধা জানান, তাঁদের ঘরে আলো নেই। তেলের কুপি জ্বালিয়ে রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ তিনি খেতে বসেছিলেন। সেই সময়ে আচমকাই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ঘরে ঢোকেন তারক। অভিযোগ, বৃদ্ধা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁর মুখে লঙ্কার গুড়ো ছিটিয়ে দেন ছেলে। তার পরে তেলের কুপি নিভিয়ে দিয়ে ধারালো কোনও জিনিস দিয়ে বৃদ্ধার মাথায়, মুখে কোপ মারেন। চিৎকার করে ছেলেকে ঠেলে ফেলে ঘরের সামনের কাদা-জলের মধ্যেই হামাগুড়ি দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন সুভদ্রাদেবী। চেঁচামেচি শুনে চলে আসেন আশপাশের লোকজ‌নও।

কিছুটা দূরেই আর একটি বাড়িতে থাকেন বৃদ্ধার ছোট ছেলে শিবু। খবর পেয়ে তিনি এসে দেখেন সুভদ্রাদেবীর মাথা, মুখ, হাত থেকে রক্ত ঝরছে। এর পরেই খোঁজ শুরু হয় তারকের। সেই সময়ে পাশের ঘরে বাঁশের সিলিং থেকে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় তারককে ঝুলতে দেখা যায়। পাশেই বিছানায় তখন তাঁর দশ বছরের ছেলে ঘুমিয়ে ছিল। তারকের দুই মেয়ে সেই সময়ে আত্মীয়ের বাড়িতে ছিল। পুলিশ জানতে পারে, ওই রাতে ছেলেকে ভাত খাওয়ানোর পরে জোর করে একটি বোতলে ভরা তরল খাইয়ে শুইয়ে দিয়েছিলেন তারক।

এ দিন সুভদ্রাদেবী বলেন, ‘‘অর্ধেক দিন রান্না করত না। শুধু আমায় সন্দেহ করত। আমি কি ছেলের ক্ষতি করতে পারি?’’ বৃদ্ধা আরও জানান, বৃহস্পতিবারের আগে তারককে কখনও তিনি নেশা করতে দেখেননি। এ দিন তারকের ছোট ভাই শিবু বলেন, ‘‘দাদা সব সময়ে মাকে ভয় দেখাত মেরে ফেলবে বলে। মা অধিকাংশ দিন লিলুয়ায় দিদির বাড়িতে থাকতেন। মাঝেমধ্যে দাদা, ভাইপো-ভাইঝিদের জন্য চলে আসতেন।’’

ওই দিন ঘটনার পরে মা ও ছেলে দু’জনকেই বেলুড় স্টেট জেলারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তারককে মৃত ঘোষণা করেন। স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে এ দিন বরাহনগর থেকে বালিতে আসেন তারকের স্ত্রী। অন্য দিকে কাটারির কোপের ক্ষতের যন্ত্রণায় মাঝেমধ্যে কুঁকড়ে উঠলেও, হাসপাতালে বসে সুভদ্রাদেবীর প্রশ্ন, ‘‘ছেলেটাকে কি শেষ এক বার দেখতে পাব না! ওকে এক বার হাসপাতালের বাইরে নিয়ে আসা যাবে না?’’

অন্য বিষয়গুলি:

Suicide Mother Son
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy