Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

পাশে থাকো, পড়ুয়াদের শেখাচ্ছে স্কুল

সরকারি ও সরকার-পোষিত স্কুলে কি পড়ুয়াদের সমাজ-সচেতন করার জন্য কোনও পদক্ষেপ করা হয়

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

সুপ্রিয় তরফদার
শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৮ ০২:৫১
Share: Save:

শুধু পড়াশোনা নয়, একই সঙ্গে সমাজ-সচেতনও হতে হবে পড়ুয়াদের। আর সেই কারণেই শহরের বিভিন্ন স্কুল পঠনপাঠনের পাশাপাশি পড়ুয়াদের সামাজিক কাজকর্মে যুক্ত করতেও উদ্যোগী হচ্ছে। সম্প্রতি দিল্লিতে অনাহারে ও অপুষ্টিতে তিনটি শিশুর মৃত্যুর ঘটনার পরে স্কুলপড়ুয়াদের সমাজ-সচেতন করাটা আরও বেশি জরুরি বলে মনে করছেন অনেকেই।

আইসিএসই বোর্ডের অধীনস্থ স্কুলগুলিতে ‘সোশ্যালি ইউজফুল প্রোডাক্টিভ ওয়ার্ক’ নামর একটি বিশেষ বিষয় রয়েছে। তাতে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের দিয়ে নানা ধরনের সামাজিক কাজ করানো হয়। প্রতিটি পরীক্ষায় এর জন্য বরাদ্দ থাকে গ্রেড। অন্য কোনও পরীক্ষায় ছাড় পেলেও এই বিষয়টিতে কোনও ছাড় নেই। বিভিন্ন সামাজিক কাজের মধ্যে রয়েছে দরিদ্র শিশুদের পড়ানো, তাদের খেতে দেওয়া, বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে খাবার দেওয়া, এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, গাছ বাঁচানোর মতো নানা ধরনের উদ্যোগ। শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, শুধুমাত্র পুথিগত বিদ্যা আয়ত্ত করতে গিয়ে সমাজ থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছে শিশুদের মন। তাদের মাটির আরও কাছকাছি নিয়ে আসতে স্কুলের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

বেশ কয়েকটি স্কুলে দুঃস্থ শিশুদের খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। শ্রী শিক্ষায়তন স্কুলের শিশুরা সপ্তাহে এক দিন এক মুঠো চাল ও এক মুঠো ডাল এনে স্কুলকে দেয়। সেখান থেকে তা সরবরাহ করা হয় দরিদ্র শিশুদের। স্কুলের মহাসচিব ব্রততী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘যাদের আছে, তাদের দেওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। না হলে সমাজ চলবে না। আমরা তাই চেষ্টা করি, এক মুঠো চাল-ডাল দিয়েও যে সমাজকে বাঁচানো যায়, সেটাই শেখাতে।’’ সম্প্রতি মহাদেবী বিড়লা ওয়ার্ল্ড অ্যাকাডেমি প্রতি দিন দরিদ্র শিশুদের খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। যে খাবার সরবরাহ করে স্কুলের পড়ুয়ারাই। প্রিন্সিপাল অঞ্জনা সাহা বলেন, ‘‘এই খাবার দেওয়ার পদ্ধতির ফলে স্কুলপড়ুয়া এবং সমাজকে একসঙ্গে সচেতন করা যায়। কারণ, অনেকেই আমাদের এই কর্মসূচি দেখে নিজেরাও করবেন বলে মনে করেছেন। এ ভাবেই তো সচেতনতা বাড়বে।’’

তাঁদের আক্ষেপ, দিল্লির পটপরগঞ্জ রোডের কাছাকাছি মান্ডাবলির পণ্ডিত চকের দু’নম্বর গলি এলাকায় যদি এ রকম স্কুল থাকত, তা হলে হয়ত মানসী, পারুল ও শিখা নামের ওই তিন শিশুকে অনাহারে মরতে হত না।

স্কুলপড়ুয়াদের মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পক্ষে আইসিএসই স্কুল সংগঠনের সম্পাদক নবারুণ দে বলেন, ‘‘সমাজ-সচেতনতায় বোর্ড তো বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছেই। পাশাপাশি, স্কুলগুলিও নিজেদের মতো করে সচেতনতা প্রসারের কাজ করে। দিল্লির মতো ঘটনা আটকাতে হলে সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। পড়শিরা কেউ ওই তিন শিশুকে খাবার দিলে এই মর্মান্তিক ঘটনা শুনতে হত না।’’

সরকারি ও সরকার-পোষিত স্কুলে কি পড়ুয়াদের সমাজ-সচেতন করার জন্য কোনও পদক্ষেপ করা হয়? কলকাতার সর্বশিক্ষা মিশনের এক কর্তা জানান, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও দফতরের উদ্যোগে নানা ধরনের সামাজিক কাজ করা হয়। তবে দরিদ্রদের খেতে দেওয়া বা শিক্ষা দেওয়ার মতো পদক্ষেপ দফতর থেকে করা হয় না। কোনও স্কুল নিজেদের মতো করে তা করতে পারে।

হিন্দু স্কুলের তরফে আলোকময় ঘোষ বলেন, ‘‘নানা অনুষ্ঠানে পড়ুয়াদের নিয়ে যাওয়া হয়। বিশেষ করে ট্র্যাফিক সচেনতায় যোগ দেওয়া হয়।’’ কিন্তু পথে নেমে সামাজিক মূল্যবোধের পাঠ দেওয়ায় যে খামতি থেকে যাচ্ছে, সেটা মানছেন অনেক শিক্ষকই।

অন্য বিষয়গুলি:

Student Social Work Hindu School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE