ঘটনা-১। প্রাক্তন উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিক নিউ টাউনের এক বহুতলের ফ্ল্যাটের একাকী বাসিন্দা। বয়স সত্তর। তিন বছর হল স্ত্রী প্রয়াত হয়েছেন। এক ছেলে থাকেন ক্যালিফোর্নিয়ায়। সম্প্রতি এক প্রতিবেশীকে একা ঘরের মধ্যে অসুস্থ হয়ে মারা যেতে দেখেছেন। যদি সেই প্রতিবেশীর মতোই অবস্থা তাঁর হয় সেই ভেবেই এখন আতঙ্কিত ওই বৃদ্ধ।
ঘটনা-২। সল্টলেকের বাসিন্দা এক বৃদ্ধা একমাত্র ছেলের ‘অত্যাচারে’ জর্জরিত। মাতৃস্নেহের বশে মুখ ফুটে সেই অত্যাচারের কথা পুলিশ কিংবা প্রতিবেশীদের বলতে পারেননি দীর্ঘদিন। অথচ নিজের মধ্যেই দিনের পর দিন গুমরেছেন। শেষ পর্যন্ত এক দিন তাঁর ঘটনা জানতে পারল পুলিশ। বৃদ্ধার কথা মতো ছেলের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি ঠিকই। তবে বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মতো মানসিক সাহস দিয়েছে।
বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার জ্ঞানবন্ত সিংহের কথায়, ‘‘শুধু শাসন নয়, পুলিশ স্নেহও করতে পারে।’’
পুলিশের সেই ‘স্নেহ’র অংশীদার অবশ্যই হতে পারেন একাকী বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা। যাঁদের সন্তানেরা দূরে থাকেন অথবা যাঁরা নিঃসন্তান, সেই বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সাহায্যের জন্য পরিকল্পনা নিয়েছে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সঙ্গে গল্প করা থেকে শুরু করে অসুখ-বিসুখে পাশে থাকা— সবেরই ব্যবস্থা করবে পুলিশ। এমনকী, নিঃসঙ্গ প্রবীণ নাগরিকদের বিনামূল্যে মনোবিদের পরামর্শেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বিধাননগর পুলিশের সমাজকল্যাণমূলক কাজের শাখা ‘সাঁঝবাতি’ জানাচ্ছে, একাকীত্বের কারণে অনেকেই মানসিক অবসাদে ভুগছেন। সাঁজবাতির নোডাল অফিসার সুমিত ভট্টাচার্য জানান, বিশেষ হেল্পলাইন নম্বরের ও পার থেকে বলা হচ্ছে, ‘‘ছেলে বিদেশে। হাঁটুর ব্যথার জন্য একটু হাঁটতে বেরোতেও পারি না। একা থাকি। ঘরে কথা বলার কেউ নেই। একটু কথা বলতে চাই।’’ বিধাননগর পুলিশ জানাচ্ছে, ওই বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের মনের ভার লাঘব করতে এখন সিভিক পুলিশেরা সাঁঝবাতির দফতরের ফোনে প্রতিদিন গল্পের ঝাঁপি খুলে বসছেন।
নোডাল অফিসার সুমিতবাবুর কথায়, ‘‘সিভিক পুলিশেরা ওই বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলছেন। যদি মনে হয় তাঁদের মধ্যে কোনও অবসাদ কাজ করছে, তখন তাঁদের জন্য মনোবিদের পরামর্শের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’ কখনও-সখনও একলা প্রবীণ নাগরিকদের সঙ্গে গল্প করতে তাঁদের বাড়িতেও সাঁঝবাতির লোকজনকে পাঠানো হচ্ছে
বলে জানিয়েছে পুলিশ। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গোলমাল মিটিয়ে দিয়ে তাঁদের দাম্পত্য জীবন অটুট রাখার কাজ করতেই অনেক বছর আগে বিধাননগর (উত্তর)
থানায় এই ‘সাঁঝবাতি’ শাখার সূচনা হয়েছিল। এখন বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের দিকেও নজর দিচ্ছে পুলিশ।
পুলিশের ওই উদ্যোগ এক সময় শুধুমাত্র সল্টলেকে চালু হয়েছিল। এ বার তা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে রাজারহাট, নিউ টাউন, লেক টাউন, বাগুইআটি-সহ কমিশনারেটের বিভিন্ন এলাকায়। যেখানে প্রতিটি থানাতেই ওই কাজের জন্য এক জন করে নোডাল অফিসারকে নিয়োগ করা হচ্ছে। তবে শর্ত দু’টি। শুধু সেই বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদেরই দেখাশোনা করা হবে যাঁরা বিধাননগর কমিশনারেট এলাকার বাসিন্দা এবং কার্যত আত্মীয়-পরিজনহীন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy