Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

কঙ্কালের বয়স ছ’মাসের বেশি, বলছেন গোয়েন্দারা

দে পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য পার্থ পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, ছ’মাস আগে তাঁর দিদি দেবযানীর মৃত্যু হয়। তার পর থেকেই তিনি তাঁর খাটের পাশের একটি বেঞ্চে দিদির মৃতদেহ কম্বল চাপা শুইয়ে রেখে দিয়েছিলেন। কিন্তু এই দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে পুলিশ এবং ফরেন্সিক বিজ্ঞানীদের মধ্যে। কেন? তদন্তকারীরা জানিয়েছেন— যে কঙ্কালটি পার্থর ঘর থেকে মিলেছে, প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, সেটির বয়স অনেক বেশি। কঙ্কালের হাড়ের সন্ধিস্থলগুলি অনেকটাই ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। সেটা এত নতুন কঙ্কালে হয় না। কঙ্কাল পুরনো হলে তবেই তার হাড় ক্ষইতে শুরু করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাড়ের পরীক্ষার পরেই কঙ্কালটির সঠিক বয়স বোঝা যাবে। কঙ্কালটি আদৌ দেবযানীর কি না, তা-ও ডিএনএ পরীক্ষার পরেই নিশ্চিত হওয়া যাবে।

শুভাশিস ঘটক
শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৫ ০৩:১১
Share: Save:

দে পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য পার্থ পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, ছ’মাস আগে তাঁর দিদি দেবযানীর মৃত্যু হয়। তার পর থেকেই তিনি তাঁর খাটের পাশের একটি বেঞ্চে দিদির মৃতদেহ কম্বল চাপা শুইয়ে রেখে দিয়েছিলেন। কিন্তু এই দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে পুলিশ এবং ফরেন্সিক বিজ্ঞানীদের মধ্যে।

কেন?

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন— যে কঙ্কালটি পার্থর ঘর থেকে মিলেছে, প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, সেটির বয়স অনেক বেশি। কঙ্কালের হাড়ের সন্ধিস্থলগুলি অনেকটাই ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। সেটা এত নতুন কঙ্কালে হয় না। কঙ্কাল পুরনো হলে তবেই তার হাড় ক্ষইতে শুরু করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাড়ের পরীক্ষার পরেই কঙ্কালটির সঠিক বয়স বোঝা যাবে। কঙ্কালটি আদৌ দেবযানীর কি না, তা-ও ডিএনএ পরীক্ষার পরেই নিশ্চিত হওয়া যাবে।

আবার ফরেন্সিক বিজ্ঞানীদের মতে, একটি মৃতদেহ স্বাভাবিক নিয়মে ছ’মাসের মধ্যে কঙ্কালে পরিণত হয়ই না। একমাত্র নির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করলে তবেই এত দ্রুত কঙ্কাল তৈরি হতে পারে। কিন্তু তার জন্য বিশেষ পরিকাঠামো প্রয়োজন হয়। কোনও অনভিজ্ঞ ব্যক্তির পক্ষে বাড়িতে বসে কাজটা করে ফেলা সম্ভব নয় বলেই ওই বিজ্ঞানীদের বক্তব্য।

পুলিশের কাছে পার্থবাবু এ দিন দাবি করেছেন, গত বছর ডিসেম্বরে তাঁর দিদির মৃত্যু হয়েছে। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের মতে, মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মৃতদেহে পচন ধরতে শুরু করে। তাতে নানা জীবাণু জন্মায়। আর ওই জীবাণুর বিক্রিয়ার ফলে পচন ধরার পর ধীরে ধীরে মাংস গলতে থাকে। ক্রমে ওই মাংস হাড় থেকে ঝরে পড়তে থাকে। ওই সময় যে তীব্র দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়, বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই গন্ধ সাধারণ ভাবে চাপা দেওয়া যায় না। এক প্রবীণ ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘‘ক্রমাগত পচনের ফলে যখন মাংস গলতে শুরু করে, তখন ৪০ মিটার দূর থেকেও ওই দুর্গন্ধে টেকা দায় হয়ে ওঠে। দেহটি যদি কোনও বেঞ্চে রাখা থাকে, তবে তাতে দাগ থাকার কথা।’’ তদন্তকারীরা কিন্তু জানিয়েছেন, পার্থবাবুর ঘরের বেঞ্চে কোনও দাগ পাওয়া যায়নি। বেঞ্চের তলাতেও কোনও দাগ মেলেনি।

কৃত্রিম ভাবে পচন রোধ করা যায় কি? ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ উমাপ্রসন্ন ঘোষালের বক্তব্য, এক মাত্র ফর্মালিন জাতীয় রাসায়নিক ব্যবহার করে এ ধরনের পচন রোধ করা যায়। সে ক্ষেত্রে মৃতদেহ কফিন জাতীয় কাঠের বাক্সে রাখতে হবে। তাপমাত্রাও রাখতে হবে ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নীচে। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আর একটি পদ্ধতি অবলম্বন করেও দুর্গন্ধ এড়ানো যায়। সেটি হল, মৃতদেহটি অ্যাসিড দিয়ে গলিয়ে ফেলা। তা হলে কোনও ভাবেই গন্ধ পাওয়া যাবে না। এই পদ্ধতিতে চাইলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মৃতদেহ কঙ্কালে পরিণত করা যায়। ময়নাতদন্তের কাজে দক্ষ মানুষ উপযুক্ত পরিকাঠামোর সাহায্যে এ কাজ করতে পারেন। কোনও আনাড়ি হাতে তা করা সম্ভব নয় বলে বিশেষজ্ঞদের মত।

তা হলে? পার্থর বয়না ছাড়া, দেবযানী যে ছ’মাস আগে মারা গিয়েছেন, তার অন্য কোনও প্রমাণ এখনও পাননি তদন্তকারীরা। পার্থ-দেবযানীর কাকিমা মুক্তি দে এ দিন জানিয়েছেন, তিনি দেবযানীকে চার-পাঁচ বছর ধরে দেখেননি। গত ১১ মে পার্থবাবুর জন্মদিনে তাঁদের বাড়িতে গিয়েছিলেন মুক্তিদেবী। সে দিনও তিনি ওই বাড়িতে কোনও দুর্গন্ধ পাননি বলে জানিয়েছেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE