প্রতীকী চিত্র।
লকডাউনের সময়ে অ্যাপের মাধ্যমে ভুয়ো নথি জমা দিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে একটি মোবাইল পরিষেবা সংস্থার কয়েকশো সিম সংগ্রহ করে জালিয়াতির ব্যবসা ফেঁদে বসেছিল প্রতারকেরা। ওই সমস্ত সিম ব্যবহার করে লকডাউনের সময়ে অনলাইনে একাধিক বার প্রতারণা করেছে তারা। ওই প্রতারণা চক্রের দু’জন চাঁইকে গ্রেফতার করার পরে তাদের জেরা করে এমনই তথ্য জানতে পেরেছে এন্টালি থানার পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃতদের নাম নীরজকুমার সিংহ ও পঙ্কজকুমার দাস। তারা দু’জনেই ওই মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার কর্মী ছিল। ধৃতদের জেরা করার জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানাতে চলেছে চিৎপুর থানার পুলিশও। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘এন্টালি থানার এই মামলায় ধৃতেরা যে ফোন ব্যবহার করত, সেই একই ফোন চিৎপুরের একটি মামলার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়েছে। তাই তাদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে অবিলম্বে আদালতে আবেদন করা হবে। এই ঘটনায় বড় চক্র জড়িয়ে রয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।’’
সেপ্টেম্বর মাসের শেষ এবং অক্টোবরের শুরুর দিকে ওই মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা এয়ারটেলের তরফে চিৎপুর ও এন্টালি থানায় লিখিত অভিযোগে জানানো হয়েছিল যে, ভুয়ো পরিচয় দিয়ে তাদের সংস্থার কয়েকশো সিম কেউ বা কারা ব্যবহার করেছে। সংস্থার তরফে ওই সিমগুলি বন্ধ করে দেওয়ার পরেও কেউ টেলিকম সংস্থায় অভিযোগ দায়ের করতে আসেননি। তদন্তে নেমে সম্প্রতি এন্টালি থানার পুলিশ কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিটের বাসিন্দা নীরজকুমার ও পঙ্কজকুমারকে গ্রেফতার করে।
পুলিশ সূত্রের খবর, আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা এলাকায় একটি মোবাইলের দোকান রয়েছে নীরজের। পুলিশ জানিয়েছে, যে দোকানের ঠিকানা দেখিয়ে নীরজ ওই সিমগুলি বিক্রি করেছে বলে ওই মোবাইল পরিষেবা সংস্থাকে জানিয়েছিল, আদতে তার কোনও অস্তিত্বই নেই।
তদন্তকারীরা জানান, মূল অভিযুক্ত পঙ্কজ যে তিনটি মোবাইলের মাধ্যমে সিমগুলিকে সক্রিয় করত, তার মধ্যে একটি মোবাইল শনিবার তার বাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই মোবাইলে ‘পিক্স আর্ট’, ‘মন্ত্রা’ নামে নানা অ্যাপ রয়েছে, যাদের মাধ্যমে ছবি, নাম-ঠিকানা বদল এবং নতুন সিম সক্রিয় করার কাজ সহজে করতে পারত সে। এন্টালি থানার এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘লকডাউনের শুরু থেকে টেলিকম সংস্থার অফিস বন্ধ থাকায় প্রতারকেরা বিভিন্ন অ্যাপ কাজে লাগিয়ে বড়সড় প্রতারণার জাল বুনেছিল। অ্যাপের মাধ্যমে ভুয়ো নথি জমা দিয়ে কয়েকশো সিম সক্রিয় করেছে ওরা।’’
পুলিশ জানিয়েছে, প্রতারকেরা এ ভাবেই ভুয়ো নথি জমা দিয়ে চিৎপুর থানা এলাকায় ৪১৩টি, এন্টালি থানা এলাকায় ১৪৭টি সিম সক্রিয় করেছিল। বিভিন্ন নামে একই মানুষের ছবি একাধিক বার ব্যবহার করেছিল তারা। ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে, মূলত বাংলাদেশ থেকে অবৈধ ভাবে যাঁরা এ দেশে ঢোকেন, তাঁরাই পার্ক স্ট্রিট এলাকা থেকে এই সমস্ত সিম বেশি দাম দিয়ে কিনতেন। এ ছাড়া অনলাইন প্রতারণার সঙ্গে যুক্তরাও এই সিমগুলি ব্যবহার করত। পুলিশ জানিয়েছে, মূল অভিযুক্ত পঙ্কজ নিজের বাড়িতে একটি মোবাইলের মাধ্যমে লোকাল এরিয়া পেমেন্ট ইউনিট নম্বর দিয়ে এই সিমগুলি সক্রিয় করত। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘তদন্তে দেখা গিয়েছে, অনলাইন প্রতারকেরা প্রচুর পরিমাণে এই সিম মজুত করত। এক-একটি সিম ব্যবহার করে দু’-তিন বার প্রতারণা করার পরে সেই সিম আর ব্যবহার করা হত না। ৫-৭ দিন পর পরই ধৃতদের কাছে সিম নিতে আসত এক ব্যক্তি। তার খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’
পুলিশ জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সে বিষয়ে এয়ারটেলকে সতর্ক করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এয়ারটেলের তরফে জানানো হয়েছে, জাল নথি দেখিয়ে সিম কার্ড নেওয়ার বিষয়ে ‘ল এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি’র সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। টেলি যোগাযোগের নির্দিষ্ট ধারা অনুযায়ী যাতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তার জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy