Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

স্ত্রীকে ছ’টুকরো করে খুনে স্বামী-সহ তিন জনের ফাঁসি

সরকারি কৌঁসুলি তপন রায় জানান, তিন জনের নাম সুরজিৎ দেব, লিপিকা পোদ্দার ও সঞ্জয় বিশ্বাস। লিপিকার সাহায্যে স্ত্রী জয়ন্তী দেবকে খুন করেছিল সুরজিৎ। সঞ্জয় ওই মহিলার দেহ ছ’টুকরো করে, ট্রলি ব্যাগে ভরে পাচার করে।

জয়ন্তী দেব

জয়ন্তী দেব

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৯ ০৩:০৭
Share: Save:

একটি খুনের ঘটনায় তিন জনকে ফাঁসির নির্দেশ দিল শিয়ালদহ আদালত। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছে মৃত মহিলার স্বামী, তার এক বান্ধবী এবং এক কসাই। সোমবার শিয়ালদহ প্রথম অতিরিক্ত দায়রা আদালতের বিচারক জীমূতবাহন বিশ্বাস ওই রায় দেন।

সরকারি কৌঁসুলি তপন রায় জানান, তিন জনের নাম সুরজিৎ দেব, লিপিকা পোদ্দার ও সঞ্জয় বিশ্বাস। লিপিকার সাহায্যে স্ত্রী জয়ন্তী দেবকে খুন করেছিল সুরজিৎ। সঞ্জয় ওই মহিলার দেহ ছ’টুকরো করে, ট্রলি ব্যাগে ভরে পাচার করে। তিন জনের বিরুদ্ধে খুন, সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাট-সহ একাধিক ধারায় ওই সাজা দেওয়া হয়েছে। এ দিন সুরজিৎ নিজের মেয়ের কথা বলে বিচারকের কাছে কম শাস্তি দানের আবেদন করেছিল। লিপিকাও নিজের সন্তানদের কথা বলে একই আবেদন করে। লঘু শাস্তির আর্জি জানায় সঞ্জয়ও। বিচারক অবশ্য কারও আবেদনেই কান দেননি। তিনি বলেন, ‘‘নিখুঁত পরিকল্পনা করে এই খুন। এমন ঘটনা বিরলের মধ্যে বিরলতম। আমার চাকরি জীবনে এমন দেখিনি।’’ সাজা শুনে এজলাসেই কেঁদে ফেলে সুরজিৎ। সঞ্জয় অবশ্য মামলার তদন্তকারী অফিসারকেই সাজার জন্য দায়ী করেছে।

অভিযুক্তদের আইনজীবী উত্তম ঘোষ জানান, এই রায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা উচ্চ আদালতে যাবেন। এ দিন সুরজিতের এক দাদা আদালতে এলেও রায় ঘোষণার আগেই তিনি চলে যান। অন্য সাজাপ্রাপ্তদের পরিবারের কোনও সদস্যই ঘটনার পর থেকে যোগাযোগ করেনি বলে দাবি করেছেন আইনজীবীরা।

রেলপুলিশ জানিয়েছে, ২০১৪ সালের ২০ মে সন্ধ্যায় শিয়ালদহ স্টেশনের বাইরে ভিআইপি পার্কিং লটে ডিউটি করছিলেন রেলপুলিশের সাব-ইনস্পেক্টর অভিজিৎ সাহা। হঠাৎই তাঁর চোখে পড়ে, একটি ট্রলি ব্যাগ এবং হোল্ড অল ধরে টানাটানি করছে একটি কুকুর। আর হোল্ড অলের ভিতর থেকে রক্ত বেরোচ্ছে। সন্দেহ হওয়ায় অভিজিৎবাবু অন্য পুলিশকর্মীদের ডেকে ট্রলি ব্যাগটি খোলেন। দেখা যায়, ভিতরে রয়েছে এক মহিলার কাটা মাথা, হাত ও পায়ের অংশ। হোল্ড অল থেকে উদ্ধার হয় দেহের বাকি অংশ। ঘটনার তদন্ত-ভার বর্তায় সাব-ইনস্পেক্টর এবং বর্তমানে বালিগঞ্জ রেলপুলিশের ওসি তুলসি দাস লাহার উপরে।

তদন্তকারীরা জানান, ট্রলি ব্যাগ থেকে পাওয়া একটি রসিদের সূত্র ধরে জানা যায়, ওই মহিলার নাম জয়ন্তী দেব। বাড়ি লেক টাউনে। পুলিশ সেখানে গিয়ে জানতে পারে, মহিলার স্বামীর নাম সুরজিৎ দেব। তাঁদের একটি মেয়ে রয়েছে। স্বামীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে প্রায়ই ওই দম্পতির মধ্যে অশান্তি হত। তার জেরে ঘটনার চার বছর আগে থেকেই আলাদা থাকতেন জয়ন্তী ও সুরজিৎ। জয়ন্তী লেক টাউনে থাকলেও সুরজিৎ থাকত

বিরাটিতে। তদন্তকারীরা আরও জানতে পারেন, ঘটনার কয়েক দিন আগে থেকে লেক টাউনের ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করে ওই দম্পতি। স্থানীয়েরা পুলিশকে জানিয়েছিলেন, ঘটনার দিন দুপুরে দু’জনের মধ্যে অশান্তি চরমে ওঠে। কিন্তু রাত থেকে তাদের আর দেখা যায়নি।

তদন্তকারীরা জানান, এর পরেই সুরজিতের খোঁজ শুরু হয়। জয়ন্তীর দেহ উদ্ধারের পরের দিন, ২১ মে তাকে আটক করে পুলিশ। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রীকে খুনের কথা স্বীকার করে সে। একই সঙ্গে জানায়, ঘটনার পিছনে রয়েছে তার বান্ধবী লিপিকা এবং বিরাটিরই বাসিন্দা, পেশায় কসাই সঞ্জয়।

কী ভাবে খুন করা হয়েছিল জয়ন্তীকে?

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ঘটনার দিন অর্থাৎ ১৯ মে সন্ধ্যায় সুরজিৎ ও জয়ন্তীর ঝগড়া চরমে ওঠে। সে সময়ে তাদের মেয়ে ছিল জেঠুর বাড়িতে। গোলমালের মধ্যে স্ত্রীর মাথায় প্রদীপ দানি দিয়ে মারে সুরজিৎ। অচৈতন্য হয়ে পড়েন জয়ন্তী। এর পরেই সুরজিৎ ফোন করে লিপিকাকে ডাকে। পুলিশের দাবি, লিপিকা যখন আসে, তখনও বেঁচে ছিলেন জয়ন্তী। দু’জনে মিলে রাতে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করে ওই মহিলাকে। দেহ লোপাটের জন্য লিপিকা যোগাযোগ করে সঞ্জয়ের সঙ্গে। ১২ হাজার টাকার বিনিময়ে দেহটি পাচার করতে রাজি হয় ওই যুবক। সেই মতো জয়ন্তীর দেহ ছ’টুকরো করে ট্রলি এবং হোল্ড অলে ভরে, গাড়ি ভাড়া করে শিয়ালদহে যায় তিন জন। প্রথমে তাদের গন্তব্য ছিল বাবুঘাট। কিন্তু সেখানে গেলে ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে দেখে শিয়ালদহের পার্কিং লটে ব্যাগ দু’টি ফেলে তিন জন চলে যায়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy