এনআরএস থেকে বেলগাছিয়াতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আহত মা-কুকুরটিকে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (এনআরএস) থেকে উদ্ধার হওয়া ১৬টি কুকুরছানাকে পিটিয়ে মারা হয়েছিল বলে পুলিশের দাবি। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট থেকে এই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে বলে লালবাজার সোমবার জানিয়েছে। এই ঘটনায় ছ’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তবে কুকুরছানা পেটানোর ভিডিয়ো ভাইরাল হলেও এখনও কেন কাউকে গ্রেফতার করা গেল না, প্রশ্ন তুলেছেন পশুপ্রেমীরা। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটি সেখানকার নার্সিং হস্টেল চত্বরে ছানাগুলিকে পেটানোর জায়গা চিহ্নিত করতে পেরেছেন বলে খবর।
সোমবার বেলগাছিয়া পশু হাসপাতালে ময়না-তদন্তের পর এক চিকিৎসক জানান, ১৬টির মধ্যে ১২টি কুকুরছানার মৃত্যু হয়েছে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের জেরে। বাকি চারটির মধ্যে দু’টি কুকুরছানার পাকস্থলি আর অন্য দু’টির লিভার ফেটে মৃত্যু হয়েছে। ওই পশু চিকিৎসকের কথায়, ‘‘কিছু দিয়ে বারবার মারার ফলেই এমন হয়ে থাকতে পারে। তবে সকলের মৃত্যুর সময় এক না-ও হতে পারে। দিন দু’য়েকের মধ্যেই চূড়ান্ত রিপোর্ট দেব আমরা।’’ ফলে পশুপ্রেমীদের অভিযোগ, কয়েক দিন ধরে পরিকল্পনা করেই নানান সময়ে কুকুরছানাগুলিকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। যদিও পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, কুকুরছানাগুলিকে এক জায়গায় জড়ো করেই পেটানো হয়েছিল। জীবিত কুকুরটিকে এদিন বেলগাছিয়া পশু হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তার অবস্থা স্থিতিশীল।
রবিবার রাতেই একটি ভিডিয়ো (ওই ভিডিয়োর সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। তাতে দেখা গিয়েছে, দুই মহিলা একটি কুকুরছানাকে বেধড়ক লাঠিপেটা করছেন। ভিডিয়োটি পোস্ট করে আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজের পড়ুয়ারা দাবি করেছেন, তাঁরা এনআরএস হাসপাতালের নার্সিং হস্টেলের মধ্যে কুকুরছানাগুলিকে পিটিয়ে মারতে দেখেছেন। পশুপ্রেমীদের একাংশের দাবি, এই ঘটনায় এনআরএস হাসপাতালের দুই নার্সের নাম সামনে এলেও পুলিশ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘হাসপাতালের প্লাস্টিকের মধ্যে থেকেই এতগুলো কুকুরছানার মৃতদেহ উদ্ধার হল। ভিডিয়োয় হাসপাতালের মধ্যেই কুকুর পেটানোর ছবি দেখা গেল, তবু পুলিশের সন্দেহ?’’ ধৃতদের গ্রেফতারির দাবিতে এন্টালি থানার সামনে বিক্ষোভও দেখান তাঁরা।
আরও পড়ুন: ‘যারা ওকে ছুড়ে নীচে ফেলেছিল, তারা এখন পাশ করা ডাক্তার!’
লালবাজার অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে জানিয়েছে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২৯ (৫০ টাকা বা তার বেশি মূল্যের পশুকে আহত করা বা মেরে ফেলা), ২০১ (প্রমাণ লোপাট) এবং ‘প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি টু অ্যানিমেলেস অ্যাক্ট, ১৯৬০’-এর ১১ (এল) ধারায় রবিবারই মামলা রুজু হয়েছে। পুলিশের আরও দাবি, হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ অস্পষ্ট থাকায় চিহ্নিতকরণে সমস্যা হচ্ছে। ঘটনার তদন্ত করছে এন্টালি থানা। থানাও জানিয়েছে, ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োটি কবে তোলা না দেখে এখনই কিছু করা সম্ভব নয়। ময়নাতদন্তের সম্পূর্ণ রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত এখনই কিছু করা সম্ভব নয়। আইনজীবীরা অবশ্য বলছেন, মামলায় উল্লিখিত ধারাগুলিতে সর্বোচ্চ দু’ থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত হাজতবাসের সাজা হতে পারে। তবে কারও এমন সাজা হয়েছে বলে কেউ মনে করতে পারেন না।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এদিন সকালে ডেপুটি সুপার দ্বৈপায়ন বিশ্বাসের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করেন। হাসপাতালের নিরাপত্তা প্রধান বি কে মল্লিক এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার সৌম্য ভট্টাচার্য কমিটিতে রয়েছেন। মৃত কুকুরছানাগুলিকে যাঁরা প্রথম প্লাস্টিক থেকে বার করেছিলেন, তাঁদের সঙ্গে কমিটি বৈঠক করেছে। বৈঠকে উপস্থিত, পশুপ্রেমী অনিতা দাস বসাক বলেন, ‘‘হাসপাতাল ওই দুই নার্সিং স্টাফের সঙ্গে কথা বলেছে। ওঁরা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পুলিশ ওদের সঙ্গে কথা বলুক। আসলে হাসপাতাল মিথ্যা বলছে, ওই দুই নার্সিং স্টাফকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’
এনআরএস হাসপাতালের সুপার সৌরভ চট্টোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘নার্সিং স্টাফকে বাড়ি পাঠানোর অভিযোগ ভুল। কমিটি কাদের সঙ্গে কথা বলেছে, এখনও জানি না। তারা সব দেখে রিপোর্ট দেবে। আমাদের হাসপাতালে কুকুর রয়েছে ঠিকই। তবে ওই হস্টেলে সে ভাবে কুকুরের উপদ্রবের অভিযোগ পাইনি।’’ নার্সিং হস্টেলে কুকুরছানা পিটিয়ে মারার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন এনআরএস হাসপাতালের নার্সিং সুপার মণীষা ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘আমার হস্টেলের মেয়েদের এত সময় নেই। ওরা মারবে, আবার প্লাস্টিকে ভরে ফেলবে, এত সময় কোথায়?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy