প্রোমোটারি সিন্ডিকেট ঘিরে রাজারহাট-নিউ টাউনে গোষ্ঠী সংঘর্ষের কথা এত দিন বারবার উঠে আসছিল। এ বার এক প্রোমোটারের হাতে আর এক প্রোমোটারের খুন হওয়ার ঘটনার সূত্রে কড়েয়ার প্রোমোটারি-রাজের ‘স্বর্গরাজ্য’ও অনেকের চোখে স্পষ্ট হয়ে গেল।
মাস সাতেক আগে কড়েয়া থানা এলাকার পাম অ্যাভিনিউয়ে প্রোমোটারি নিয়ে গোলমালের জেরে এক যুবককে খুন হতে হয়েছিল। মঙ্গলবার সকালে আর এক প্রোমোটারের খুন হওয়ার ঘটনাটি এ তল্লাটে প্রোমোটার-চক্রের বেপরোয়া দুঃসাহসের ছবিটাই মেলে ধরছে বলে লালবাজারের কর্তাদের একাংশ মেনে নিচ্ছেন।
কলকাতা পুরসভার ৬৪, ৬৫ এবং ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের একাংশ জুড়ে কড়েয়া থানা এলাকা। পুরসভা সূত্রের খবর, কেবল কড়েয়া থানা এলাকাতেই বেআইনি বাড়ি রয়েছে প্রায় দু’হাজার। যার মধ্যে প্রায় ৪০০টি নির্মীয়মাণ। অভিযোগ, এখানকার প্রোমোটার-দুষ্কতীদের এতটাই দাপট যে, ওই সমস্ত বেআইনি নির্মাণ ভাঙার সাহস পায় না পুরসভা। উল্টে, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা থেকে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে যোগসাজশে প্রোমোটারেরা অনেকেই প্রভাবের বহরে নিজেদের এলাকায় মূর্তিমান আইন হয়ে উঠেছেন।
এই ছবির সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়ির দাম বেড়েছে এ তল্লাটে। এই এলাকায় সম্প্রতি একটি অভিজাত শপিং মল গজিয়ে ওঠার পরেই গোটা এলাকায় জমির দাম হুহু করে বাড়ছে। সেই মলের পিছনে সামসুল হুদা রোড, ব্রাইট স্ট্রিটে ফ্ল্যাটের দাম বর্গফুট পিছু চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্রাইট স্ট্রিটের এক প্রোমোটারের কথায়, ‘‘ফ্ল্যাট তৈরি করতে প্রতি বর্গফুটে খরচ প্রায় হাজার টাকা। বিক্রির সময়ে ওই দাম বেড়ে হয় বর্গফুটে চার হাজার টাকা।’’ ওই প্রোমোটারের কথা অনুযায়ী, ব্রাইট স্ট্রিটে কোনও ক্রেতা ১৫০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনলে প্রোমোটারের আয় প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা।
হাওয়ায় টাকা উড়ছে দেখেই এলাকার বহু অল্প শিক্ষিত তরুণ প্রোমোটারির কারবারে ঝুঁকছেন। ব্রাইট স্ট্রিটের এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘কড়েয়া থানা এলাকায় প্রোমোটিংয়ের কাজ শুরু হলে বাইরের কোনও প্রোমোটার এই এলাকায় ঘেঁষতে পারেন না। কেবল কড়েয়া থানা এলাকার প্রোমোটারেরাই কাজ করার সুযোগ পান। এমনকী, এই এলাকার এক সময়ের দাগি দুষ্কৃতীরাও পরে প্রোমোটিংয়ের পেশায় ‘পুনর্বাসন’ পেয়েছেন। অনেকেই পরে অপরাধ জগৎ থেকে সরে এলেও তাঁদের কথার খেলাপ করার সাহস কেউ সচরাচর দেখাতে পারেন না।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সকালে ব্রাইট স্ট্রিটে গুলি চালানোর ঘটনায় মৃত ও ধৃত দুই প্রোমোটারই বছর পাঁচেক আগে প্রোমোটিং ব্যবসা শুরু করেছেন। গুলি চালানোয় অভিযুক্ত শেখ ইদ্রিস ওরফে ভোলা খুনের আসামি। টানা আট বছর জেল খেটেছে সে। আবার মৃত ফজলুর রহমানেরও দু’দশক আগে পুলিশের খাতায় নাম ছিল। স্থানীয় সূত্রের খবর, ভোলা, ফজলুরদের সঙ্গে বরাবরই রাজনৈতিক নেতাদের দহরম মহরম। বারবার জেলে গেলেও ভোলার প্রভাব একফোঁটা খর্ব হয়নি।
প্রোমোটারি নিয়ে ঝামেলার জেরে গত বছরের ২৯ জুন রাতে কড়েয়ার পাম অ্যাভিনিউয়ে শেখ শাখাওয়াত ওরফে জুবের নামে এক যুবককে কয়েক জন লাঠি, রড দিয়ে পেটায়। এই ঘটনার দিন কয়েক পরে মারা যান জুবের।
এ দিন নিহত আতিকুলের এক প্রতিবেশী বলছিলেন, ‘‘এক-একটা খুনের ঘটনা বুঝিয়ে দেয়, আসলে কতটা উত্তপ্ত হয়ে আছে এই এলাকা। ছোটখাটো ঝগড়াই যে কোনও দিন বিস্ফোরক হয়ে উঠতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy