Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Sinthee Police Station

চোরাই মালের তালিকা দিয়ে কিনে আনতে বলেছিল সিঁথি থানা! তদন্তে নতুন মোড়

তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিক এবং শীর্ষ কর্তারা এই অভিযোগ সামনে আসতে কার্যত চমকে গিয়েছেন।

তদন্তের প্রয়োজনে আসুরা বিবিকে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হবে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

তদন্তের প্রয়োজনে আসুরা বিবিকে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হবে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৮:২৬
Share: Save:

যে নথি একেবারে থানার নিজস্ব, পুলিশ আধিকারিকদের কাছেই থাকার কথা, সে কাগজই এ বার মিলল আম জনতার কাছে! সিঁথি-কাণ্ডে এমন গাফিলতির উদাহরণ প্রকাশ্যে আসতে চমকে গিয়েছেন কলকাতা পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা।

সিঁথি থানায় পুলিশি হেফাজতে মৃত রাজকুমার সাউয়ের ছোট ছেলে বিজয় সাউ বুধবার একটি কাগজ দেখিয়ে গুরুতর এক অভিযোগ তুলেছেন। কাগজটি পুলিশের ‘পার্সোনাল ডায়েরি’র একটি পাতা। সরকারি ওই কাগজের নীচে ক্রমিক নম্বর লেখা, ই-৮০৭২। পুলিশ ইনস্পেক্টরদের নিজেদের থানা সংক্রান্ত কাজকর্মের খতিয়ান লিখে রাখার জন্য সরকার থেকেই দেওয়া হয় ওই পার্সোনাল ডায়েরি। বিজয় যে কাগজ দেখাচ্ছেন,সেখানে মার্বেল পালিশ মেশিন, বাথরুম ফিটিংস-এর একাধিক সরঞ্জামের নাম এবং সে সবের দাম লেখা। ওই যুবকের দাবি, সিঁথি থানার অভিযুক্ত আধিকারিকদের একজন সৌমেন্দ্রনাথ দাস ওই পাতায় লেখা সমস্ত সরঞ্জাম তাঁদের কিনে দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিনে না দিতে পারলে, নগদ টাকা দেওয়ার কথাও বলেন সৌমেন্দ্রনাথ, এমনটাই দাবি বিজয়ের।

বুধবার পুলিশ হেফাজতে ওই মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে নেমে, কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিক এবং শীর্ষ কর্তারা এই অভিযোগ সামনে আসতে কার্যত চমকে গিয়েছেন। বিষয়টিকে তাঁরা থানার আধিকারিকদের বড়সড় গাফিলতি বলেই মনে করছেন। পার্সোনাল ডায়েরিতে যে সব জিনিসের নাম লেখা এবং গত ১৭ জানুয়ারি স্থানীয় প্রোমোটার প্রদীপ পালের করা এফআইআরে উল্লেখ করা চুরি যাওয়া জিনিসপত্রের যে তালিকা, তা হুবহু মিলছে। আর সেখান থেকেই প্রশ্ন, চুরির মামলায় তদন্তকারী আধিকারিকচোরাই জিনিসপত্র উদ্ধারের চেষ্টা না করে এ ভাবে কাউকে কিনে দিতে বলবেন কেন?এ দিন পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা রীতি মতো বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন,‘‘যে কাগজ সম্পূর্ণভাবে থানার অভ্যন্তরীন কাজে ব্যবহারের জন্য, তা বাইরে এল কী করে, সেটাই তো ভেবে পাচ্ছি না!”

আরও পড়ুন:অভিযুক্ত পুলিশ, তাদের রিপোর্টেই আস্থা কমিশনের?
আরও পড়ুন:সিঁথি থানায় হেফাজতে মৃত্যু আগেও

পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্ত আধিকারিকরা দাবি করেছেন রাজা মণীন্দ্র রোডে পুরসভার নাইট শেল্টারের বাসিন্দা আসুরা বিবি যে চুরি করেছিলেন তার প্রমাণ পেয়েই তাঁকে জেরার জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়। তাঁর বয়ান থেকেই জানা গিয়েছিল যে, তিনি চোরাই মাল বিক্রি করেছিলেন রাজকুমারের দোকানে। কলকাতা পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকদের প্রশ্ন, যদি পর্যাপ্ত প্রমাণই থাকত তা হলে সোজা পথে চোরাই মাল উদ্ধার না করে বাঁকা পথ নিলেন কেন আধিকারিকরা? একই সঙ্গে প্রশ্ন, যদি চুরির ঘটনায় আসুরার যোগের প্রমাণ পেয়েই থাকেন তদন্তকারীরা, তা হলে সোমবার বিকেলে তাঁকে গ্রেফতার না করে ছেড়ে দেওয়া হল কেন? লালবাজারের এক কর্তাওএ দিন প্রশ্ন তোলেন,‘‘যাঁকে আমি মূল অভিযুক্ত হিসাবে পাকড়াও করে আনলাম এবং যাঁর বয়ানের ভিত্তিতে রাজকুমারকে জেরার জন্য নিয়ে এলাম তানায়, সেই অভিযুক্তকে কী ভাবে ছেড়ে দেওয়া হল?”

তবে যে আসুরা বিবিকে নিয়ে এই প্রশ্ন উঠছে, সেই তিনিই এ দিন পুলিশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। কারণ, মঙ্গলবার সকাল থেকেই তিনি বেপাত্তা। নাইট শেল্টারের নিরাপত্তারক্ষী আব্দুল আজিজকে তিনি জানিয়েছিলেন, চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন। যেহেতু আসুরা অন্তঃস্বত্ত্বা, তাই আজিজ কোনও রকম সন্দেহ করেননি। আসুরার সঙ্গে ছিলেন তাঁর বড় ছেলে বছর চোদ্দর আসাদুল এবং কোলের মেয়ে। নাইট শেল্টারেই তিনি রেখে গিয়েছেন বাকি তিন সন্তান নূর হোসেন গাজি, আলাউদ্দিন গাজি এবং আরিফাকে। বুধবার বিকেল পর্যন্ত নাইট শেল্টারে ফেরেননি তিনি। আসুরার বেপাত্তার খবর পেয়ে রাজকুমারের বড় ছেলে অজয়ের অভিযোগ, ‘‘আসুরাই ছিল পুলিশ হেফাজতে বাবাকে মারধরের এক মাত্র সাক্ষী। পুলিশই তাঁকে কোথাও সরিয়ে দিয়েছে।”পুলিশের যদিও দাবি, তাঁরা আসুরার হদিশ জানেন না।

স্থানীয় কাউন্সিলর তরুণ সাহা, যিনি ওই নাইট শেল্টারের তদারকি করেন তিনিও আসুরার ‘অন্তর্ধান’-এর মধ্যে কোনও রহস্য খুঁজে পাচ্ছেন না। এ দিন তিনি বলেন,‘‘এর আগেও বিভিন্ন সময়ে নাইট শেল্টারের পাঁচিল টপকে পালিয়েছিল আসুরা। বাচ্চাদের রেখে প্রায়ই ৫-৬ দিনের জন্য গায়েব হয়ে যেত।” কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আসুরার এই ‘নিখোঁজ’ হওয়া পাল্টা চাপে ফেলেছে পুলিশকে। প্রশ্ন উঠছে এক জন অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে জেরার সময় আদৌ পুলিশ কী কোনও চিকিৎসককে উপস্থিত রেখেছিল? তবে বুধবার বিকেলে এক শীর্ষ পুলিশকর্তা ইঙ্গিত দেন, আসুরার হদিশ মিলেছে। সূত্রের খবর, এক আত্মীয়র বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন আসুরা। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছে পুলিশ। এখন থেকে তদন্তের প্রয়োজনে আসুরাকে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হবে।

শীর্ষ পুলিশ আধিকারিকদের ইঙ্গিত, শুরু থেকে যা ঘটনাক্রম পাওয়া গিয়েছে, তাতে প্রকাশ্যে এসেছে অত্যন্ত দায়সারা তদন্তের একের পর এক উদাহরণ। এক তদন্তকারী বলেন,‘‘যদি ধরেও নেওয়া যায় যে রাজকুমারকে থানায় মারধর করা হয়নি, আচমকাই অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর, তাতেও পর পর এই গাফিলতির কোনও জবাব নেই অভিযুক্ত আধিকারিকদের কাছে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy