—প্রতীকী চিত্র।
নিউ আলিপুরের বৃদ্ধ মলয় মুখোপাধ্যায়কে খুনের ঘটনায় জড়িত দুই দুষ্কৃতীকে ইতিমধ্যেই কাকদ্বীপ থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই দু’জনকে খুঁজে বার করার দায়িত্ব পড়েছিল কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশের যৌথ তদন্তকারী দলের উপরে। সূত্র বলতে ছিল দু’টি নাম। জাকির হোসেন মোল্লা, পিতা জালালউদ্দিন মোল্লা। জালালউদ্দিনের মারফতই খুনের কিনারা করল ডিসি (সাউথ) তথা দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রাক্তন পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠীর নেতৃত্বে কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশের যৌথ তদন্তকারী দল।
কী ভাবে? পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, স্থানীয় ‘সোর্স’ ছাড়াও এই কাজে তাদের হাতিয়ার ছিল ভোটার তালিকাও। থানার পুলিশকর্মীদের পাশাপাশি সিভিক ভলান্টিয়াররাও ভোটার তালিকা পরীক্ষার কাজ শুরু করেন। এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘সাহেব (প্রবীণ ত্রিপাঠী) বলে দিয়েছিলেন, আসল আসামিকে লুঠের মাল সমেত গ্রেফতার করতে হবেই।’’
দক্ষিণ ২৪ পরগনার একের পর এক থানা এলাকায় ভোটার তালিকা পরীক্ষা করতে গিয়ে প্রায় হাজারখানেক পিতা জালালউদ্দিন পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু ছেলে জাকিরের নাম পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষে বৃহস্পতিবার কুলপি এলাকায় ভোটার তালিকা পরীক্ষা করতে গিয়ে ছেলে জাকিরের নাম মেলে। আরও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিশ্চিন্তপুরের ১ নম্বর ঘাটের কাছে তার বাড়ি।
তদন্তকারীরা জানান, প্রথমে ওই এলাকার বাসিন্দাদের দু’টি ছবি দেখানো শুরু হয়। কিন্তু অধিকাংশই শনাক্ত করেননি। তখন সাদা পোশাকে জাকিরের বাড়িতে শুরু হয় নজরদারি। শনিবার জালালউদ্দিনকে একটি চায়ের দোকানে ধরা হয়। ছবি দু’টি দেখিয়ে প্রশ্ন করা হয়, তিনি তাদের চেনেন কি না। নির্বিকার জালালউদ্দিন বলেন, এক জন তাঁর ছেলে জাকির, অন্য জন ভাইপো সুরজ। আরও জানান, ওরা কলকাতায় কাজ করে। কিন্তু সপ্তাহ দু’য়েক বাড়িতে এসে রয়েছে। বাইরে বিশেষ বেরোচ্ছে না। সঙ্গে এনেছে মুখ বাঁধা দু’টি বস্তা।
এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘এর পরেই নিশ্চিত হই, জাকির এবং সুরজ ওই বাড়িতে রয়েছে।’’ রবিবার ভোরে বাড়ি ঘিরে ফেলে পুলিশ। বিছানা থেকে তোলা হয় দু’জনকে। বস্তা দু’টি থেকে মেলে মলয়বাবুর বাড়ি থেকে লুঠ হওয়া জিনিস।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ৫ অগস্ট মলয়বাবুকে খুনের পর দিন কুলপির এক ভ্যানচালককে তাঁর মোবাইলটি বিক্রি করে জাকির ও সুরজ। ওই ভ্যানচালক মলয়বাবুর ফোনে সিম কার্ড ভরতেই পুলিশের নেটওয়ার্কে ধরা পড়ে যায়। ওই ভ্যানচালক পুলিশকে জানান, জাকির ও সুরজ ২০০ টাকায় ফোনটি বিক্রি করেছে।
তার পরেই ডিসি (সাউথ) এক প্রকার নিশ্চিত হন, মলয়বাবুর খুনিরা দক্ষিণ ২৪ পরগনায় গা-ঢাকা দিয়েছে। তিনি কাকদ্বীপ, কুলপি, ফ্রেজারগঞ্জ ও উস্তি থানার অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ভ্যানচালকের বয়ান ও মলয়বাবুর বাড়ির সামনের সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী দুই দুষ্কৃতীর ছবি আঁকা হয়। এক অফিসারের কথায়, ‘‘এলাকার দাগি আসামিদের ওই ছবি দেখানো হয়। পাশাপাশি শুরু হয় ওই চারটি থানা এলাকার কয়েক লক্ষ ভোটারের তালিকা পরীক্ষার কাজও।’’ তাতেই বাজিমাত হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy