Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

থানায় রাত কাটল ‘অতিথির’, সঙ্গ দিলেন পুলিশকর্মীরা

শনিবার সারা রাত এ হেন ‘জজসাহেবকে’ পাহারাও দিতে হয়েছে পুলিশকে।

n আশ্রয়: উদ্ধার হওয়া সেই পেঁচা। শনিবার রাতে, ট্যাংরা থানায়। নিজস্ব চিত্র

n আশ্রয়: উদ্ধার হওয়া সেই পেঁচা। শনিবার রাতে, ট্যাংরা থানায়। নিজস্ব চিত্র

শিবাজী দে সরকার, কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৯ ০২:৫১
Share: Save:

থানায় দারোগার টেবিলে বসে আছে সে। কখনও গোল-গোল চোখ ঘুরিয়ে চারপাশে দেখছে। আবার ফাঁক পেলে চোখ বুজে একটু ঝিমিয়েও নিচ্ছে। অনেকটা সেই ‘হ য ব র ল’র জজসাহেবের মতো হাবভাব তার!

শনিবার সারা রাত এ হেন ‘জজসাহেবকে’ পাহারাও দিতে হয়েছে পুলিশকে। পাকা আম, পাউরুটি, রুটি-আনাজ মুখে রোচেনি তার। তবে গলা ভেজাতে বারকতক জলে মুখ দিয়েছে সে। আর রবিবার সকাল হতেই গাড়িতে চেপে রওনা দিয়েছে নতুন গন্তব্যে।

ঘটনার সূত্রপাত শনিবার রাত ন’টা নাগাদ। ট্যাংরা থানায় উপস্থিত হন এক মহিলা। তিনি জানান, থানার কাছেই ট্যাংরা রোডে একটি পেঁচা উড়ে এসে পড়েছে। এলাকায় কতগুলো বাঘা নেড়ি কুকুর রয়েছে। স্থানীয় কয়েক জন বাসিন্দা পেঁচাটিকে আগলে রেখেছেন। কিন্তু তাকে উদ্ধার না-করলে সেটি মারা যাবে। নাইট ডিউটিতে এসেই এমন সংবাদ। তবু দেরি করেননি এএসআই স্বপনকুমার মণ্ডল। রাস্তার পাশে পড়ে থাকা পেঁচাটিকে নিয়ে আসেন থানায়।

‘লক্ষ্মীর বাহন’ তো চুরি বা ডাকাতি করেনি। অতএব, তাকে হাজতে পোরা যাবে না। আইন বলছে, সে বন দফতরের অধীনে। পুলিশ সূত্রের খবর, রাতেই বন দফতরে খবর দেওয়া হয়। কিন্তু অত রাতে কেউ আসতে পারেননি। শেষমেশ ট্যাংরা থানার অতিরিক্ত ওসি প্রশান্ত ভৌমিকের নির্দেশে, ফল রাখার বড় প্লাস্টিকের ঝুড়িতে ঠাঁই হয় সেই পেঁচার। পুলি‌শ মহলে চোর-ডাকাত পালানোকে ‘পাখি উড়ে যাওয়া’ বলে। কিন্তু এই পাখি যাতে উড়ে না-যেতে পারে, তাই দারোগাদের টেবিলেই রাখা হয় তাকে। নজরদারির দায়িত্ব পড়ে স্বপনবাবুর উপরে।

থানায় রাতের ‘অতিথি’ সে। তাই আপ্যায়নের ব্যবস্থা না করলে কি চলে? অগত্যা থানার সামনেই গাছে পাকা টুকটুকে আম পেড়ে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু পাকা আম মুখে রোচেনি তার। এক পুলিশকর্মী একটু পাউরুটি এনে দেন। সেটাও তার মনে ধরেনি। এ সব দেখে এক পুলিশকর্মীর গিন্নি হাতে বানানো রুটি-আনাজের ভাগ দেন ‘অতিথি’কে। কিন্তু গন্ধ শুঁকেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে পেঁচা। তবে স্বপনবাবু জল দিলে তাতে গলা ভিজিয়েছিল সে। বন দফতরের কর্তারা বলছেন, পেঁচা এমনিতেই শিকারি পাখি। ফলে ফলমূল, রুটি-আনাজ তার রুচবে না। এর উপরে পাখিটি কোনও ভাবে চোট পেয়ে রাস্তায় পড়েছিল। ফলে মনুষ্যসমাজে এসে ঘাবড়িয়ে গিয়েছিল সে।

এ ভাবেই পেঁচা পাহারা দিয়ে রাত কাবার হয়েছে ট্যাংরা থানায়। ভোরের আলো ফুটতেই কিছুটা সিঁটিয়ে যায় নিশাচর প্রাণীটি। রবিবার সকাল ন’টা নাগাদ পৌঁছয় বন দফতরের একটি দল। পেঁচাটিকে খাঁচায় পুরে নিয়ে যান তাঁরা। বন দফতর সূত্রের দাবি, সেটিকে সল্টলেকের বন্যপ্রাণ উদ্ধার কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানেই পাখিটির চিকিৎসা হবে। সম্ভবত কোনও ভাবে ডানায় চোট পেয়েছিল সে।

‘অতিথি’ সৎকার করে বেশ খুশি ট্যাংরা থানার পুলিশকর্মীরাও। ভালয়-ভালয় তাকে বন দফতরের হাতে তুলে দিতে পেরে নিশ্চিন্তও। ট্যাংরা থানার এক কর্মী বলছেন, ‘‘পুলিশের চাকরিতে এসে রাতভর চোর, ডাকাত এমনকি মাতালও পাহারা দিতে হয়েছে। কিন্তু টেবিলের উপরে পেঁচা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে, এমন অভিজ্ঞতা আগে হয়নি। তবে আহত পাখিটিকে দেখে বড় মায়া হচ্ছিল।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

অন্য বিষয়গুলি:

Owl Kolkata Police Tangra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy