Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

ক্যামেরার সূত্র ধরে বৃদ্ধ খুনে পাকড়াও দুই যুবক

কাল হল পুরনো ‘বন্ধুত্ব’। পুলিশ বলছে, সেই বন্ধুই ফাঁস করে দিয়েছে নিউ আলিপুরের ‘ও’ ব্লকের বাসিন্দা, বৃদ্ধ মলয় মুখোপাধ্যায়কে খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের পরিচয়।

গ্রেফতার: নিউ আলিপুরে বৃদ্ধ খুনে অভিযুক্ত জাকির হোসেন মোল্লা এবং সুরজ মোল্লা। শনিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

গ্রেফতার: নিউ আলিপুরে বৃদ্ধ খুনে অভিযুক্ত জাকির হোসেন মোল্লা এবং সুরজ মোল্লা। শনিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৭ ০০:৩২
Share: Save:

অপরাধের পরে পুলিশের জাল এড়িয়ে নির্বিঘ্নেই গা-ঢাকা দিয়েছিল অভিযুক্তেরা। কিন্তু কাল হল পুরনো ‘বন্ধুত্ব’। পুলিশ বলছে, সেই বন্ধুই ফাঁস করে দিয়েছে নিউ আলিপুরের ‘ও’ ব্লকের বাসিন্দা, বৃদ্ধ মলয় মুখোপাধ্যায়কে খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের পরিচয়। পুলিশ জানিয়েছে, এক দাগি দুষ্কৃতীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য কাজে লাগিয়েই শনিবার সকালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপি থেকে দুই যুবককে পাকড়াও করেছেন তদন্তকারীরা।

ডি সি (সাউথ) প্রবীণ ত্রিপাঠী জানিয়েছেন, ধৃতদের নাম জাকির হোসেন মোল্লা এবং সুরজ মোল্লা। তারা দাগি চোর। গত পাঁচ তারিখ রাতে নিউ আলিপুরের ও ব্লকে নিজের তিনতলা বাড়িতে খুন হন অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার মলয়কুমার মুখোপাধ্যায়। পুলিশের দাবি, সেই ঘটনায় নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকারও করেছে ধৃত দুই দুষ্কৃতী। তাদের কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন এবং সোনার আংটি-সহ একাধিক রুপো ও তামার সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, চুরিতে বাধা পেয়েই মলয়বাবুকে খুন করেছিল অভিযুক্তেরা। আজ, রবিবার ধৃতদের আদালতে হাজির করা হবে।

লালবাজারের খবর, মলয়বাবুর খুন যে চোরেদের কাজ, তা মোটামুটি বুঝতে পেরেছিলেন তদন্তকারীরা। কিন্তু অপরাধীদের কোনও সূত্র মিলছিল না। শেষমেশ ওই পাড়ার একটি দোকান এবং এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের নজরদারি ক্যামেরার ছবিতে দেখা যায়, ঘটনার রাতে তিনটের পরে নিউ আলিপুরের ওই বাড়ি থেকে তারাতলা মোড় পর্যন্ত দুই যুবক হেঁটে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই কাকদ্বীপ থেকে মলয়বাবুর চুরি যাওয়া ফোনটি উদ্ধার হয়। সেটি অবশ্য এক ভ্যানচালক কুড়িয়ে পেয়েছিলেন। তা থেকেই তদন্তকারীরা বুঝতে পারেন, অপরাধীদের সঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনার যোগ রয়েছে।

এ দিন ডি সি (সাউথ) জানান, অপরাধীদের চিহ্নিত করতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাধিক থানার সাহায্য নেওয়া হয়। সেই ফুটেজের অস্পষ্ট ছবি দেখেই জেলা পুলিশের এক অফিসারের ‘সোর্স’ (যে নিজেও দাগি আসামি) ওই দু’জনের পরিচয় ও ঠিকানা জানিয়ে দেয়। তার পর থেকেই ওত পেতে থেকে শনিবার পাকড়াও করা হয় দু’জনকে। বেহালার সাহেবমাল এলাকায় ওই দু’জনের ডেরা রয়েছে।

পুলিশের দাবি, ধৃতেরা জেরায় জানিয়েছে, তারা আগেও ওই বাড়িতে এসেছিল। বছর দুয়েক আগে মলয়বাবুর বাড়ির পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢুকে আমও পেড়েছিল তারা। বছর তিনেক আগে বাড়ির সামনে প্লাস্টিক কুড়োতে এসে মলয়বাবুর তাড়াও খেয়েছিল। সম্প্রতি ওই বাড়ির চারপাশে এসে ‘রেকি’ করেছিল দু’জন। তার পরে ওই রাত ১টা নাগাদ পাঁচিল টপকে বাড়ির চৌহদ্দিতে ঢোকে তারা। ঘণ্টা তিনেক লুকিয়ে থাকার পরে রাত দেড়টা নাগাদ একতলার দরজা ভেঙে দোতলায় ওঠে। দোতলার ঘরের আলমারি ভেঙে জিনিসপত্র চুরি করে। রাত তিনটে নাগাদ আওয়াজে মলয়বাবুর ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। তিনি বাধা দিতে গেলে দুই চোর তাঁকে গলা টিপে খুন করে। তার পরে হেঁটে তারাতলা মো়ড় এবং সেখান থেকে বাসে চেপে কুলপি চলে যায়।

ঘটনার রাতে ওই বাড়ির দোতলার বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলেন এক পরিচারিকা। অভিযুক্তেরা দরজা ভেঙে উপরে উঠে বৃদ্ধকে খুন করল, অথচ ওই পরিচারিকা কিছুই টের পেলেন না? ডি সি (সাউথ) বলেন, ‘‘ওই পরিচারিকাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ নিয়ে এখনই কিছু বলা যাবে না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE