কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভোগান্তি হচ্ছে রোগীদের। প্রশ্ন হল, আর কত দিন এ ভাবে চলবে এই মেডিক্যাল কলেজ? ফাইল চিত্র।
কর্তৃপক্ষ দায় এড়াচ্ছেন। প্রশাসনের শীর্ষ স্তর কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছে। পড়ুয়ারাও হাসপাতালের অচলাবস্থা কাটানোর কথা ভাবছেন না। সব মিলিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভোগান্তি হচ্ছে রোগীদের। প্রশ্ন হল, আর কত দিন এ ভাবে চলবে এই মেডিক্যাল কলেজ?
যদিও পড়ুয়াদের দাবি, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে তাঁদের অনশন বা আন্দোলনের সঙ্গে রোগী পরিষেবার কোনও সম্পর্ক নেই। শাসকদলের তরফে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে পরিষেবা বিঘ্নিত করা হচ্ছে। যদিও কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, প্রতিদিন কলকাতা মেডিক্যালের পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। এক দিকে অনশনরত পড়ুয়াদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে চিন্তা, অন্য দিকে আন্দোলনের জেরে মনঃসংযোগ নষ্ট হচ্ছে। ফলে, ওষুধ কেনার মতো গুরুত্বপূর্ণ ফাইল থেকে শুরু করে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় নথিতে সই হচ্ছে না। প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতেও সমস্যা হচ্ছে।
তাই আপাতত কলেজে না এসে স্বাস্থ্য ভবন থেকে কাজ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বিশ্বাস। একই পথে হেঁটে উপাধ্যক্ষ তথা সুপার অঞ্জন অধিকারী বললেন, ‘‘খুব প্রয়োজনে আসব। না হলে স্বাস্থ্য ভবনে বসেই কাজ চালাতে হবে। প্রতি মুহূর্তে চিন্তা করতে হচ্ছে, কী করা যায়। অবসর থেকে শুরু করে ওষুধ কেনার ফাইলেও সই করা হচ্ছে না।’’
তা হলে কোনও রোগীর যদি অধ্যক্ষ বা সুপারকে প্রয়োজন হয় বা তাঁদের সইয়ের দরকার লাগে, তা হলে কী হবে? স্বাস্থ্য ভবনে ছুটতে হবে? এক কর্তার কথায়, ‘‘কিছুটা সমস্যা হয়তো হবে। কিন্তু প্রতিদিন চাপা উত্তেজনা নিয়ে কাজে মন দেওয়া সম্ভব নয়। ওষুধ কেনা থেকে রোগী পরিষেবা সংক্রান্ত কাগজে সই বা আলোচনা দিনের পর দিন আটকে থাকলে অন্য সমস্যা তৈরি হবে।’’
তিনি জানান, পড়ুয়ারা যেখানে অনশন করছেন, সেখানে কোনও ওয়ার্ড নেই। ফলে রোগীদের সমস্যা হচ্ছে না ঠিকই, কিন্তু অধ্যক্ষ ও সুপারের উপরে পরোক্ষ চাপ থাকছে। বরিষ্ঠ শিক্ষক-চিকিৎসকদের অনেকেই কলেজে আসতে ভয় পাচ্ছেন। পাছে নির্বাচন নিয়ে তাঁদের সঙ্গেও বচসা হয় পড়ুয়াদের। এক শিক্ষক-চিকিৎসকের কথায়, ‘‘পড়ুয়াদের দাবিকে অনৈতিক বলছি না। কিন্তু ওঁদের ব্যবহার অত্যন্ত রূঢ়। সুষ্ঠু ভাবে তো কথাই বলা যাচ্ছে না। তাই অনেকেই চাপা আতঙ্ক থেকে সাহস পাচ্ছি না।’’ এ ক্ষেত্রেও ভোগান্তি হচ্ছে সেই রোগীদেরই। প্রশাসন ও পড়ুয়া, দু’তরফের অনমনীয় মনোভাব সেই ভোগান্তিই বাড়িয়ে তুলছে। এমন অবস্থায় কোনও রোগীর খারাপ কিছু ঘটলে দায় কার? এখন সেই প্রশ্নও উঠছে।
যদিও পড়ুয়াদের দাবি, ‘‘আমরা খারাপ ব্যবহার করছি না। শুধু দাবি করেছি, নির্বাচন হোক। আর আলোচনা করতে গিয়ে শিক্ষকদের হাতে আমরাই প্রহৃত হয়েছি।’’ আন্দোলনকারীদের আরও দাবি, ‘‘আমাদের জন্য পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে মিথ্যা রটনা চলছে। কারণ, আমরাই প্রশ্ন তুলেছি, কার নির্দেশে কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগার ও রেডিয়োথেরাপি বন্ধ ছিল, তার তদন্ত করতে হবে। পড়ুয়াদের পাশাপাশি রোগী পরিষেবার স্বার্থে লড়াইয়ের জন্যই নির্বাচিত ছাত্র সংসদের দাবি তুলেছি।’’
এ দিকে, প্রশাসন সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কোনও কলেজে ভোট হবে না। কলকাতা মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের দাবি, পড়ুয়াদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল মনোনীত ছাত্র সংসদ তৈরি করার। কিন্তু মানতে নারাজ আন্দোলনকারীরা।
শনিবার নাগরিক কনভেনশনের আয়োজন করেছিলেন আন্দোলনকারীরা। তাতে সশরীরে খ্যাতনামা বিশেষ কেউ যোগ না দিলেও, ভিডিয়ো-বার্তা পাঠিয়েছেন অভিনেতা, নাট্যকার, প্রাক্তন বিচারপতি থেকে বিভিন্ন স্তরের মানুষ। প্রত্যেকেই পাশে থাকার কথা বলেছেন। আন্দোলনকারীদের তরফে অনিকেত কর বলেন, ‘‘রাজ্যে গণতন্ত্রকে হত্যার বড় উদাহরণ, মেডিক্যালের নির্বাচন আটকে দেওয়া। সমাজের সকলে একত্রিত হয়ে এই আন্দোলনকে বৃহত্তর করা হবে।’’ এ দিন অনশন মঞ্চ থেকে কনভেনশনে এসেছিলেন পড়ুয়া রণবীর সরকার। তাঁর কথায়, ‘‘বিশেষ কোনও দাবি আমাদের ছিল না। নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা যদি অন্যায় হয়, তা হলে ছাত্রদের ক্ষমতা বেশি, না শাসকদলের, তা শেষ পর্যন্ত আমরা দেখব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy