সমস্ত দেশের পাশাপাশি ভারতের পণ্যের উপরেও ন্যূনতম ১০% আমদানি শুল্ক কার্যকর করেছে আমেরিকা। আগামী ৯ এপ্রিল থেকে এ দেশের সামগ্রীর উপরে ২৬% পাল্টা শুল্ক চাপানোর কথা তাদের। বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রাক্তন মুখ্য অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর বক্তব্য, আমেরিকার শুল্কের কিছুটা প্রভাব ভারতীয় অর্থনীতিতে পড়বে। তবে বিরূপ প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে আমেরিকার বাজারেই। এই অবস্থায় পাল্টা শুল্ক না চড়িয়ে ভারতের উচিত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া। যদিও বিরোধী দল কংগ্রেসের প্রশ্ন, ভারত কেন পাল্টা পদক্ষেপ করছে না?
রবিবার কৌশিক এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘ভারতের উপরে আমেরিকার ২৬% আমদানি শুল্ক বিভ্রান্তিকর। তার কিছুটা বিরূপ প্রভাব এ দেশে পড়বে। তবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমেরিকা নিজে। বিশ্ব জুড়ে ডলারের প্রতি আস্থা কমবে।’’ তবে একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, এর পাল্টা পদক্ষেপ করা ভারতের উচিত হবে না। বরং দিল্লির উচিত শুল্কে ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো। ঠিক যে চেষ্টা করছে ইউরোপ, কানাডা এবং চিন। নতুন বাণিজ্য চুক্তি করার জন্য এটাই সেরা সময়। ফলে এই শুল্ক ভারতের সামনে নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে।
অন্য দিকে, কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা এক্স-এ একটি দীর্ঘ পোস্টে কোন দেশ ট্রাম্প-শুল্কের বিরুদ্ধে কী ধরনের পদক্ষেপ করেছে বা উদ্যোগী হয়েছে, তার তালিকা দিয়েছেন। সঙ্গে তাঁর আক্ষেপ, ‘‘ট্রাম্প প্রশাসনের আগ্রাসী শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বহু দেশ দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশে ৫৬ ইঞ্চি ছাতি বাজানোর পাশাপাশি যদি বিদেশের তথাকথিত বন্ধুর বিরুদ্ধে একই রকম সংকল্প গ্রহণ করতে পারতেন...।’’
খেরার বক্তব্য, চিন আমেরিকা থেকে আসা সমস্ত পণ্যের উপরে অতিরিক্ত ৩৪% শুল্ক চাপিয়েছে। অভিযোগ জানিয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায়। ফ্রান্সের প্রস্তাব, আমেরিকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রস্তাবিত সমস্ত বিনিয়োগ স্থগিত রাখা হোক। ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামে শুল্কের পাল্টা পদক্ষেপের জন্য ওয়াশিংটনের ২৮০০ কোটি ডলারের পণ্যকে চিহ্নিত করেছে ইইউ। ব্রিটেনও আমেরিকার বিভিন্ন পণ্যকে চিহ্নিত করা শুরু করেছে। কানাডা আমেরিকার গাড়ির উপরে ২৫% কর বসিয়েছে। কংগ্রেস নেতার বক্তব্য, ‘‘আমেরিকা যাতে কঠোর না হয়, সেই লক্ষ্যে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী সে দেশে যাতায়াত করছেন।... অন্যান্য দেশ যখন পাল্টা শুল্ক চাপানোর ব্যাপারে কড়া অবস্থান নিচ্ছে, তখন ভারত উল্টো পথে হেঁটে শুল্ক কমাচ্ছে।’’ উল্লেখ্য, দেশীয় শিল্পের আপত্তি সত্ত্বেও বৈদ্যুতিক গাড়ির আমদানির উপরে শর্তসাপেক্ষে শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, ইলন মাস্কের টেসলার লগ্নির পথ প্রশস্ত করার উদ্দেশ্যেই এই পদক্ষেপ।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)