নতুন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন নিয়ে পার্টি কংগ্রেস উদগ্রীব। নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির নামের প্যানেল পেশ করেছেন বিদায়ী পলিটব্যুরোর কো-অর্ডিনেটর। সেই তালিকায় নিজের নাম জোড়ার দাবিতে আপত্তি তুলে দিলেন নাসিকের সিটু নেতা ডি এল কারাড! সমর্থন করলেন মহারাষ্ট্রের আরও এক জন। অগত্যা ভোটাভুটির ঘোষণা করতে হল প্রকাশ কারাটকে।
বিদায় বেলায় কারাটকে বেগ গিয়ে দিলেন এই কারাড! কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের প্রশ্নে সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসে কোনও কালে ভোটাভুটি হয়েছে কি না, কেউই ঠিক মনে করতে পারছেন না। বেনজির কাণ্ড ঘটিয়েও পার্টি কংগ্রেসের কক্ষে কারাড অবশ্য সুবিধা করতে পারেননি। সিপিএম সূত্রের খবর, তাঁর দাবির পক্ষে পড়েছে ৩৩টি ভোট। আর বিপক্ষে ৬৬১। নানা অভিযোগে দলে আগেই কমিশনের মুখে পড়েছিলেন সিটুর ওই নেতা। এ বার পার্টি কংগ্রেসে একটু দাগ রেখে গেলেন!
মাদুরাইয়ে সিপিএমের ২৪তম পার্টি কংগ্রেসের শেষ দিনে ভোটাভুটির পরে গঠিত হয়েছে ৮৫ জনের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি। তার মধ্যে একটি জায়গা ফাঁকা। বাকি ৮৪ জনের মধ্যে ৩০ জন নতুন। কমিটিতে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব ১৭% থেকে বেড়ে হয়েছে ২০%। নতুন সাধারণ সম্পাদক এম এ বেবির মতে, ‘‘মহিলাদের গুরুত্ব বাড়াতেই হবে। সেই সঙ্গে তরুণ নেতৃত্বকে সুযোগ দিতে হবে। বর্ষীয়ান যে নেতারা কমিটি থেকে সরে গেলেন, তাঁরা দলের কাজে নানা ভাবে সহায়তা করবেন।’’
কেন্দ্রীয় কমিটিতে বাংলার ১৩ জন প্রতিনিধির মধ্যে সরে গিয়েছেন সূর্যকান্ত মিশ্র, রবীন দেব, অমিয় পাত্র, রেখা গোস্বামী ও অঞ্জু কর। এই পাঁচ জনের জায়গায় এসেছেন নতুন পঞ্চ-মুখ— যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদক কনীনিকা ঘোষ, উত্তরবঙ্গ থেকে দার্জিলিঙের জেলা সম্পাদক সমন পাঠক এবং হুগলি ও পূর্ব বর্ধমানের আরও দুই জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ ও সৈয়দ হোসেন। সিপিএমের সাংগঠনিক নিয়মে, একসঙ্গে তিন স্তরের কমিটিতে থাকা যায় না। ফলে, তিন জেলা সম্পাদকের জন্য আপাতত বিশেষ অনুমতি নিলেও পরে তাঁদের জেলায় বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন হয়েছিল গত বার শমীক লাহিড়ী ও সুমিত দে-র ক্ষেত্রে।
বাংলায় সিপিএমের আন্দোলন ও ভিড় টানার মুখ, ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষীর যে দলে দ্রুত উত্থান ঘটছে, তার ইঙ্গিত মিলছিলই। এ বার মাদুরাইয়ে তাঁকে বসানো হয়েছিল পার্টি কংগ্রেস পরিচালনার ‘প্রেসিডিয়াম’ বা সভাপতিমণ্ডলীতে। অল্প সময়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পাওয়ার পরে মীনাক্ষী বলছেন, ‘‘আমাদের দলে ব্যক্তির জন্য আলাদা করে কিছু হয় না। দিল্লিতে যখন আরএসএস-বিজেপি এবং বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় বসে আছে, তখন বামপন্থীদেরই দায়িত্ব বাড়ছে। বিশেষ করে, বাংলায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের পরে আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’’ রাজ্যে তাঁরা আন্দোলনের ঝাঁজ বাড়াবেন বলে জানিয়েছেন মীনাক্ষী।
পার্টি কংগ্রেসে ভুল-ত্রুটি বিশ্লেষণ ও আত্মসমালোচনার পরে নতুন করে সব ধরনের মেহনতি মানুষের কাছে গিয়ে কাজ শুরু করার ডাক দিয়েছেন নতুন সাধারণ সম্পাদকও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাদের শ্রেণিভিত্তিক ও গণ-সংগঠন মিলিয়ে (‘ক্লাস’ ও ‘মাস’) পাঁচ কোটির বেশি সদস্য। ঠিকমতো কাজ করলে অনেক সংখ্যক মানুষকে আমরা সংগঠিত করতে পারি।’’
পার্টি কংগ্রেস শেষে শহরের অন্যত্র সিপিএমের সমাবেশে ভিড় হয়েছিল চোখে পড়ার মতোই। সেখানে বৃন্দা কারাট বলেছেন, ‘‘আমাদের নতুন সাধারণ সম্পাদকের নাম বেবি হলেও আসলে উনি এক জন যোদ্ধা!’’ বেবি-সহ নতুন নেতৃত্বের নির্বাচনে শুভেচ্ছা জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স ও সভাপতি শাহ আলম।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)