কেউ পথে নামছেন বিচারের দাবিতে, কেউ দলের শীর্ষ নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য। কেউ চাকরিহারাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন, কিন্তু শাসক পক্ষকে কটাক্ষ করলেও, পথে নেমে প্রতিবাদের রাস্তায় হাঁটেননি। আজ, সোমবার চাকরিহারাদের সঙ্গে কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখা করার কথা। তার আগে, রবিবার বিরোধী শিবিরের অবস্থান এমনই।
‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের চাকরি ফেরানো এবং মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ-সহ বিভিন্ন দাবিতে সিপিএমের পক্ষ থেকে ভাঙড়ের বামনঘাটা এলাকায় বাসন্তী হাইওয়েতে মিছিল হয় এ দিন বিকেলে। মিছিলে উপস্থিত সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তুষার ঘোষ বলেন, “লড়াই, আন্দোলন থেকে শুরু করে আইনি সহযোগিতা— সব ভাবেই দলের পক্ষ থেকে চাকরিহারাদের পাশে থাকব। সঙ্গে চাই, মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ।” যোগ্যদের পুনর্বহালের দাবিতে বামেরা এ দিন মেদিনীপুর শহরেও মিছিল করেন। বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র পুরুলিয়ার নেতৃত্ব চাকরিহারাদের সহানুভূতি জানাতে পুরুলিয়া ও রঘুনাথপুরে ইতিমধ্যে বিক্ষোভ করেছেন। সংগঠনের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক ব্যোমকেশ দাস জানান, শীঘ্রই স্কুলে স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা কালো ব্যাজ পরে দুর্নীতির প্রতিবাদ জানাবেন। বাঁকুড়াতেও এবিটিএ ও বিজেপি মিছিল, বিক্ষোভসভা করছে।
এ দিন রাজ্য জুড়ে রামনবমীর মিছিলেই ব্যস্ত ছিলেন বিজেপি নেতারা। আজ, সোমবার কালীঘাট অভিযানের কথা বলা হয়েছে বিজেপির তরফে। এই পদক্ষেপ কি যথেষ্ট? বিজেপির কাটোয়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “রামনবমী পালন দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রেরণা জোগাচ্ছে। সেই কারণেই সুপ্রিম কোর্টে রায়ের আবহে এত মানুষ যোগ দিচ্ছেন।” কিন্তু এমন কোনও মিছিলের সঙ্গে দুর্নীতি বিরোধিতাকে যোগ করলে কি জনমত তৈরির কাজ সহজ হত না? দুর্গাপুরের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, “মানুষ যে এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে আছে, রামনবমীতে এত লোকের রাস্তায় নামাই তার প্রমাণ।”
যদিও বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, “রামনবমী পালনের সঙ্গে চাকরিহারাদের সম্পর্ক নেই। তবে কালীঘাট অভিযানের উদ্দেশ্য, চাকরি-দুর্নীতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী-সহ দুর্নীতিতে যুক্তদের শাস্তি এবং যোগ্য প্রার্থীদের পুনরায় নিয়োগের দাবি।” জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায় বলেন, “রামনবমীর মিছিল শুধু বিজেপির ডাকে হয়নি। কালীঘাট অভিযানে সরকারের উপরে চাপ বাড়বে।” বহরমপুর সাংগঠনিক জেলা বিজেপি সভাপতি মলয় মহাজন বলেন, “যাদের জন্য যোগ্যদের এই অবস্থা, তাদের শাস্তির দাবিতে নানা কর্মসূচি করছি।” হাওড়ায় বিজেপির নেতারা রামনবমীর শোভাযাত্রায় ব্যস্ত থাকায় এ নিয়ে কথা বলতে পারেননি।
সিপিএমের বীরভূম জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, “সহমর্মিতা থাকলেও, কিছু করার পরিস্থিতি নেই। যা করতে হবে, সেটা রাজ্য সরকারকেই করতে হবে।” সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “তৃণমূলের লোকজন চাকরিহারাদের বাড়ি গিয়ে সরকার বিরোধী কথা না বলার জন্য হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন।” জেলা তৃণমূল সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর পাল্টা দাবি, ভিত্তিহীন অভিযোগ। বীরভূমের কংগ্রেস সভাপতি মিল্টন রশিদের বক্তব্য, “দলের শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেছিলাম। যাঁরা প্রকৃত যোগ্য, তাঁদের সর্বতো ভাবে সাহায্য করার কথা বলেছেন তিনি।” মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাসও জানান, মিটিং মিছিল করছেন তাঁরা।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)