কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।—ফাইল চিত্র।
হাসপাতালে ডায়ালিসিসের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু ওই রোগীদের ফলো-আপের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখানোর কোনও ব্যবস্থাই নেই! অন্য বিভাগের রোগীর কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দিলেও সমস্যা একই। বহু ক্ষেত্রে কিডনির চিকিৎসার জন্য রোগীদের এসএসকেএম হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হচ্ছে। এমনই পরিস্থিতি শহরের অন্যতম, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের।
কিডনি সংক্রান্ত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন নেফ্রোলজি বিভাগের। তার অস্তিত্বই নেই এখানে! হাসপাতাল সূত্রের খবর, বিভাগ তৈরির জন্য গত তিন বছর আগে আবেদন করেও লাভ হয়নি। মূলত নেফ্রোলজি সংক্রান্ত পরিষেবা সামলাতে চলতি বছরে যোগ দিয়েছেন এক জন রেসিডেন্সিয়াল মেডিক্যাল অফিসার (আর এম ও)। তাতেও সমস্যা মেটেনি বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরাই। তাঁদের দাবি, বিশেষজ্ঞ মতামত দূর, এখনও মেডিসিন-সহ বিভিন্ন বিভাগ থেকে চিকিৎসকদের ছুটতে হচ্ছে ওই পরিস্থিতি সামলাতে। ফলে ক্ষতি হচ্ছে পরিষেবার। মানছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও।
অথচ পাঁচ বছর আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কাঠখড় পুড়িয়ে এক জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে পেয়েছিলেন। ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর’ পদমর্যাদার সেই নেফ্রোলজিস্ট, আলাদা বিভাগ না থাকায় ২০১৪ সালে মেডিসিন বিভাগে যোগ দেন। হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশের মতে, এর পরই ইতিবাচক পরিবর্তন আসে কিডনি চিকিৎসার পরিষেবায়।
পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে হাসপাতাল চত্বরে শুরু হয় ডায়ালিসিস। সপ্তাহে দু’দিন ডায়ালিসিসের ফলো-আপ রোগীদের দেখতেন ওই চিকিৎসক। বিশেষজ্ঞ মতামতের জন্য অন্য বিভাগ থেকেও রোগীদের সেখানে রেফার করা হত। হাসপাতাল সূত্রের খবর, লোকমুখে ‘নেফ্রোলজি বিভাগের ওপিডি’ বলে প্রচার হয়ে যায় সেটি। ‘ওপিডি’-তে দিনে ৫০-১০০ রোগী একা দেখতেন ওই চিকিৎসক। পাশাপাশি মাসে ৭০০টি ডায়ালিসিস ও রোজ ১০-১৮টি রেফার কেস আসত তাঁর কাছে।
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ওই চিকিৎসক বিস্ময়কুমার শ্রীবাস্তব থাকায় জটিল সমস্যার সমাধানও মিলছিল। কিন্তু শাসকদলের ঘনিষ্ঠ কিছু চিকিৎসকের তাঁকে পছন্দ না হওয়ায় সমস্যার সূত্রপাত। ২০১৭ সাল থেকে হাসপাতালে যাওয়া বন্ধ করে পদত্যাগ পত্র জমা দেন ওই চিকিৎসক। বিস্ময়কুমার অবশ্য বলছেন, “কোনও চাপ বা মতান্তর নয়, স্বাস্থ্যের কারণে কাজের চাপ নিতে পারছিলাম না। তাই হাসপাতালে যাওয়া বন্ধ করেছি।” তিনি জানান, নেফ্রোলজি বিভাগ তৈরির জন্য ২০১৫ সালে আলোচনা শুরু হয়েছিল। বিভাগ হলে আরও চিকিৎসক থাকতেন, তখন এই সমস্যা হত না।
প্রশ্ন, প্রক্রিয়া শুরুর পরে তিন বছর পেরিয়ে গিয়েছে, কেন বিভাগ তৈরি হল না?
এ জন্য মূলত ডাক্তারের অভাবকে দায়ী করছেন সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস। তিনি বলছেন, “বিশেষজ্ঞ মতামত চেয়ে প্রতিবার এস এস কে এম-এর দ্বারস্থ হতে হয়। তাতে চিকিৎসায় কিছুটা দেরি হয়ে যায়। এত বড় হাসপাতালে অবশ্যই নেফ্রোলজি বিভাগ থাকা জরুরি। স্বাস্থ্য ভবনে আবেদন করেছি। কয়েক মাস অন্তর ‘রিমাইন্ডার’ দেওয়া হয়। তবে কোনও সাড়া পাইনি।” বিস্ময়কুমার প্রসঙ্গে তাঁর মত, “ওঁর ব্যক্তিগত সমস্যা থাকায় আসা বন্ধ করেছেন। এর বেশি কিছু জানা নেই।”
স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলছেন, ‘‘বিষয়টি জানি। কিন্তু ডাক্তার কোথায়? বিভাগ তৈরি করতে যে লোকবল দরকার, আগে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। বিভাগের জন্য শয্যা তৈরি করতে হবে। এ সব না করে বিভাগ করে কোনও লাভ নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy