ফাইল চিত্র।
বাসমালিক সংগঠনগুলির সঙ্গে রবিবার রাজ্য প্রশাসনের বৈঠকের পরেও আগামী ২৮, ২৯ এবং ৩০ জানুয়ারির ধর্মঘট নিয়ে জট কাটল না। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বাস ধর্মঘট প্রত্যাহারের আবেদন জানানো হলেও পাঁচটি মালিক সংগঠন এ দিনও তাদের অবস্থানে অনড় থেকেছে। পেট্রল-ডিজ়েলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে এবং তেলের দামের উপরে জিএসটি চালুর দাবিতে ওই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাসমালিক সংগঠনগুলি।
এ দিন সমস্যার জট কাটাতে রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বাসমালিক সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসেন। পরিবহণ দফতরের ময়দান তাঁবুতে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক এ দিন বৈঠক চলে। সংগঠনগুলি তাদের দাবিদাওয়ার কথা লিখিত ভাবে আজ, সোমবার সরকারকে জানাতে পারে বলে খবর। প্রস্তাবিত ধর্মঘটের প্রেক্ষিতে গত শুক্রবার পাঁচটি বাসমালিক সংগঠনকে চিঠি দিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা জানানো হয়। সেই মতো এ দিন ময়দান তাঁবুতে জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটস, বাস মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট, মিনিবাস অপারেটর্স কোঅর্ডিনেশন কমিটি এবং ইন্টার অ্যান্ড ইন্ট্রা রিজিয়ন বাস সার্ভিসের প্রতিনিধিরা বৈঠকে যোগ দেন।
সরকারের পক্ষ থেকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের আবেদন জানানো হলেও বাসমালিকেরা পেট্রল-ডিজ়েলের মূল্যের উপরে জিএসটি চালুর দাবি জানান। বিষয়টি কেন্দ্রের এক্তিয়ারভুক্ত হওয়ায় এ নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি লেখার দাবিও জানান তাঁরা। ডিজ়েলের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এ দিন দৈনন্দিন বাস পরিষেবার সমস্যা নিয়ে বাসমালিকেরা সরব হলেও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ভাড়া বৃদ্ধির দাবি জানাননি তাঁরা।
এ নিয়ে জানতে চাইলে বাস মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক প্রদীপনারায়ণ বসু বলেন, ‘‘লিটার প্রতি ডিজ়েলের মূল্য ৭৯ টাকা ছাড়িয়েছে। কয়েক টাকা ভাড়া বৃদ্ধি করে এর সমাধান সম্ভব নয়। তাই কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতেই আমরা ধর্মঘটে অনড় থাকার কথা বলেছি।’’ রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানুষের অসুবিধার কথা বাসমালিকদের জানানো হয়। জয়েন্ট কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কৃষকদের সমর্থনে ধর্মঘট পালিত হলে ডিজ়েলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ধর্মঘটে অসুবিধে কোথায়?’’ বাসমালিকদের একাংশ এই আন্দোলন যে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে, তা জানান দিতে ওই সময়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের রাজ্যে সফরের প্রসঙ্গও তোলেন। তবে, রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের ধর্মঘট না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। বাসমালিকদের সমস্যা মেটাতে তাঁদের অন্তর্বর্তী সময়ে কিছু সুবিধে দেওয়া যায় কি না, সে প্রসঙ্গও বৈঠকে ওঠে। বাসমালিক সংগঠনগুলি তাদের সমস্যার কথা লিখিত ভাবে জানাতে সম্মত হয়।
এ দিন মিনিবাস অপারেটর্স কোঅর্ডিনেশন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক স্বপন ঘোষ বলেন, ‘‘ডিজ়েলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সারা দেশেই প্রতিবাদ জরুরি। সেই জন্যই আমরা জিএসটি চালুর দাবি জানিয়েছি। রাজ্য আমাদের সমস্যা সমাধানে আন্তরিক। আমরা তাঁদের সমস্যার কথা জানাব।’’ রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ দিন বৈঠক ইতিবাচক বলে দাবি করা হয়েছে। যদিওসমস্যা মেটাতে দু’পক্ষই আরও দু’দিন সময় নিয়েছে।
বাসমালিকদের একাংশের মতে, যে ভাবে তেলের দাম প্রতিদিন বাড়ছে তাতে ভাড়া দু’-এক টাকা ভাড়া বাড়িয়ে সমস্যা মিটবে না। বাসে প্রাক্ করোনা পরিস্থিতির মতো যাত্রী নেই। বহু মানুষ দীর্ঘ লকডাউনের জেরে কাজ হারিয়েছেন। এই অবস্থায় ভাড়া বৃদ্ধির দাবি করলে যাত্রীদের সমর্থন পাওয়া মুশকিল। বেশি ভাড়া আদায় করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত বচসার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। তাই রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা রেখে সমস্যার কথা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেই ধর্মঘটের রাস্তা নিতে হয়েছে। আপাতত, রাজ্য সরকার বাসমালিকদের সমস্যার প্রতি কতটা সহানুভূতিশীল থাকছে তার উপরেই নির্ভর করবে শেষ পর্যন্ত ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত, জানাচ্ছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy