যতই কাদা ছোড়া হোক, শেষ পর্যন্ত ভোটে জেতেন তাঁদের মতো ‘রক্ষণশীল’ নেতারাই। ‘উদারপন্থী’-দের একহাত নিয়ে এই দাবি করলেন ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। আর এই প্রসঙ্গে তিনি নাম নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের। তাঁর দাবি, দক্ষিণপন্থী রক্ষণশীল নেতাদের উত্থানে হতাশ হয়ে পড়ছেন উদারপন্থীরা। বিশেষত, দ্বিতীয় বার ভোটে জিতে ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফেরার পরে। তবে তাতে রক্ষণশীলদের জয়রথ থামবে না। শনিবার ওয়াশিংটনে ‘কনজারভেটিভ পলিটিক্যাল অ্যাকশন কনফারেন্স’ (সিপিএসি)-এ গিয়ে এই দাবি করেছেন মেলোনি। ইটালিতে তাঁর বিরোধীরাই অবশ্য মেলোনির এই মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন। এই সম্মেলনকে ‘নব্য ফ্যাসিবাদীদের জমায়েত’ বলেও কটাক্ষ করেছেন বিরোধী নেতারা। সেই বিতর্কে ঘি পড়ে, যখন ট্রাম্পের প্রাক্তন মুখ্য কৌশলী সম্মেলনের সময় নাৎসিদের মতো কুর্নিশ জানান।
আমেরিকার সিপিএসিতে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগ দিয়েছিলেন মেলানি। এই যোগদান নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে তাঁর নিজের দেশ ইটালিতে। সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘নব্বইয়ের দশকে যখন বিল ক্লিন্টন টোনি ব্লেয়ার বিশ্ব বাম উদারপন্থী নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন, তখন তাঁদের রাষ্ট্রনায়ক বলা হয়েছিল। আজ যখন ট্রাম্প, মেলোনি, জাভিয়ের মিলেই (আর্জেন্তিনার প্রেসিডেন্ট), মোদী কথা বলি, তখন ওঁরা বলেন গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক।’’ এর পরে বামপন্থীদের প্রতি সুর চড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘এ সব হল বামপন্থীদের দ্বিচারিতা। যদিও এ সব আমাদের সয়ে গিয়েছে। তবে ভাল খবর হল, মানুষজন ওঁদের মিথ্যায় এখন আর বিশ্বাস করেন না। ওঁরা যতই কাদা ছুড়ুক, নাগরিকেরা আমাদের ভোট দেন।’’
এর পরে ট্রাম্পের প্রশংসা করেন মেলানি। তিনি দাবি করেন, ট্রাম্প ভোটে জয়ী হয়ে দ্বিতীয় বার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরেই বামপন্থীদের সমালোচনা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ট্রাম্পের জয়ে বামপন্থীরা ঘাবড়ে গিয়েছে। ওদের বিরক্তি হিস্টিরিয়ায় পরিণত হয়েছে। রক্ষণশীলেরা জিতছেন বলে নয়, বিশ্ব জুড়ে তাঁরা হাত মেলাচ্ছেন বলেই বামপন্থীদের সমস্যা।’’
আরও পড়ুন:
প্রসঙ্গত, জানুয়ারি মাসে ট্রাম্প যখন শপথ নিয়েছিলেন, তখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যভুক্ত দেশগুলির মধ্যে একমাত্র ইটালির প্রধানমন্ত্রী মেলোনিই তাতে যোগ দিয়েছিলেন। সেই নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল ইটালির বিরোধী দল-সহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যভুক্ত দেশগুলির একাংশ। এ বার সিপিএসি মেলোনির যোগদান নিয়ে কটাক্ষ করেছেন বিরোধী সাংসদেরা। ট্রাম্পের প্রাক্তন মুখ্য কৌশলী স্টিভ বান্নোনের নাৎসি ভঙ্গিতে কুর্নিশ জানানোর পরে সেই বিতর্ক আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সিপিএসি সম্মেলনে যোগদান থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন ফ্রান্সের ন্যাশনাল র্যালি (আরএন) পার্টির নেতা জর্ডন বারডেল্লা। ইটালির সেন্টার-লেফট ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা এলি স্ক্লেইন মেলোনিকেও সম্মেলনে যোগদান করতে বারণ করেন। সম্মেলনকে ‘নব্য নাৎসি জমায়েত’ বলেও কটাক্ষ করেন। তিনি এ-ও দাবি করেন, ইউক্রেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ‘অপমান’ করেছেন ট্রাম্প। তার পরেও তা নিয়ে একটা কথাও বলেননি মেলোনি। কারণ, তিনি নতুন মার্কিন প্রশাসনকে চটাতে চান না।
যদিও মেলোনি এ সবে কান দিতে নারাজ। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে, ট্রাম্পের আমলে আমেরিকা এবং ইউরোপ পরস্পরের আরও কাছাকাছি আসবে।