আগামী বছর দু’টি নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে কলকাতা পুরসভা এমন এক বাজেট প্রস্তাব এনেছে, যাতে সরাসরি শহরবাসীর উপর করের বোঝা না চাপিয়ে বিকল্প আয়ের পথ তৈরি করার দিশা দেখানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার মেয়র ফিরহাদ হাকিম কলকাতা পুরসভার ২০২৫-’২৬ অর্থবর্ষের বাজেট পেশ করেন। বাজেটে বাড়তি খরচ সামলাতে বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদন, লাইসেন্স ফি, বিনোদন কর এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জঞ্জাল কর-সহ বিভিন্ন খাতে চার্জ বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। তবে এই চার্জ বৃদ্ধির হার পাঁচ থেকে সাত শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে, যাতে নাগরিকদের উপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।
বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদনের ক্ষেত্রে কলকাতা পুরসভা বিভিন্ন ধরনের চার্জ নিয়ে থাকে। জমির পরিমাণ, নির্মাণের আয়তন এবং এলাকার ভিত্তিতে এই ফি নির্ধারিত হয়। এ বারের বাজেটে এই চার্জ বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। একই ভাবে, বিনোদন করের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এত দিন গঙ্গাবক্ষে নৌকাবিহার, পার্টি কিংবা অনুষ্ঠানের জন্য পুরসভা কোনও কর নিত না, কিন্তু এ বার থেকে সেই সমস্ত ক্ষেত্রে কর বসানো হবে। পাশাপাশি, শহরের বিভিন্ন মাঠে টার্ফ তৈরি করে যে খেলাধুলার আয়োজন হয়, সেখান থেকেও বিনোদন কর আদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:
২০২৫ সালের মার্চ-এপ্রিল-মে মাসে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হতে পারে এবং ডিসেম্বর মাসে কলকাতা পুরসভার নির্বাচন হওয়ার কথা। ফলে এক বছরের মধ্যে জোড়া নির্বাচনের নির্ঘণ্ট রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শহরের বাসিন্দাদের উপর বাড়তি করের বোঝা চাপালে রাজনৈতিক ভাবে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে শাসকদল তৃণমূল। তাই বাড়তি কর না বসিয়ে কিছুটা ঘুরপথে আয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশেই এই বাজেট তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন পুরসভার আধিকারিকদের একাংশ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান, শহরের নাগরিকদের উপর অতিরিক্ত কর চাপানো না হোক, বরং বিকল্প পথে আয় বাড়ানো হোক। সেই পরিকল্পনাকে মাথায় রেখেই মেয়র বাজেট প্রস্তুত করেছেন। কারণ, গত বছর লোকসভা নির্বাচনে শহরাঞ্চলের ভোটের ধাক্কা খেয়েছিল তৃণমূল। কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪০টির বেশি ওয়ার্ডে এগিয়ে গিয়েছিল বিরোধীরা। এই ফলাফল নিয়ে কলকাতার নেতাদের উপর বিস্তর চটেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই থেকেই শহুরে ভোটারদের প্রতি বিশেষ নজর রয়েছে শাসকদলের জনপ্রতিনিধিদের। তাই কলকাতা পুরসভার বাজেট তৈরি হয়েছে সেই ভাবনা মাথায় রেখেই— এমনটাই মত কলকাতা পুরসভার আধিকারিকদের একাংশের।
এই বাজেটের মাধ্যমে শহরের বাসিন্দাদের উপর করের বোঝা না চাপিয়ে রাজস্ব বৃদ্ধির পরিকল্পনাকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন অনেকেই। তবে বিরোধীদের মতে, এটি নিছক রাজনৈতিক কৌশল। বিরোধী দল বিজেপির বক্তব্য, নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে কর বাড়ানো হচ্ছে না, কিন্তু ভোট মিটতেই নতুন করে কর চাপানোর সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। তবে মেয়র স্পষ্ট করেছেন, কলকাতা পুরসভার খরচ ক্রমশ বাড়ছে, তাই নতুন আয়ের পথ খুঁজতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শহরের পরিকাঠামো উন্নয়ন ও নাগরিক পরিষেবা বজায় রাখতে এই বাজেট বাস্তবসম্মত এবং প্রয়োজনীয় বলে তিনি দাবি করেছেন। এই বাজেট কার্যকর হলে পুরসভার আয় কতটা বাড়বে এবং নাগরিকদের উপর এর কতটা প্রভাব পড়বে, তা সময়ই বলবে। তবে আপাতত ভোটের আগে শহরবাসীর উপর করের বাড়তি বোঝা চাপছে না, এটাই স্বস্তি।