Advertisement
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
বেলেঘাটায় গুলি

মহিলা পুলিশের দিকে আঙুল তরুণীর

তাঁর উপরে যে প্রাণঘাতী হামলা হতে পারে, আগে থেকেই পুলিশকে জানিয়েছিলেন আক্রান্ত তরুণী। তা সত্ত্বেও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। উল্টে থানা থেকে পিয়ালী বড়ুয়া নামে এক সাব-ইনস্পেক্টর ফোন করে তাঁকে অভিযোগ তুলে নিতে বলেন।

অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৫২
Share: Save:

তাঁর উপরে যে প্রাণঘাতী হামলা হতে পারে, আগে থেকেই পুলিশকে জানিয়েছিলেন আক্রান্ত তরুণী। তা সত্ত্বেও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। উল্টে থানা থেকে পিয়ালী বড়ুয়া নামে এক সাব-ইনস্পেক্টর ফোন করে তাঁকে অভিযোগ তুলে নিতে বলেন। না হলে তাঁর সমস্যা হতে পারে বলেও হুমকি দেন ওই এস আই। বুধবার দুপুরে এনআরএস হাসপাতালে শুয়ে আনন্দবাজারের কাছে এমনই অভিযোগ করেছেন ওই তরুণী। যদিও পিয়ালী বড়ুয়া নামে ওই এস আই তখন বেলেঘাটা থানায় থাকলেও এখন গড়ফা থানায় কর্মরত। এ দিন ফোনে যোগাযোগ করা হলে সমস্ত অভিযোগ সম্পর্কে তাঁর একটিই জবাব, ‘‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’’

লালবাজার সূত্রে খবর, আক্রান্ত মহিলার বয়ানের ভিত্তিতে অভিযুক্ত ওই সাব-ইনস্পেক্টরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে ওই মামলায় তদন্তকারী অফিসারের ভূমিকাও। ওই মহিলা বেলেঘাটা থানায় অভিযোগ জানানোর পরে তদন্তের অগ্রগতি না হওয়ায় অতি সম্প্রতি লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ বেলেঘাটা থানা থেকে মামলা নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল রায়গঞ্জে গিয়ে দিবাকরকে খুঁজলেও তার সন্ধান মেলেনি। পুলিশের একাংশের দাবি, ওই সাব-ইনস্পেক্টরের সঙ্গে যোগ ছিল দিবাকরের। পুলিশি গতিবিধির খবর সে আগেই পেত। তাই পুলিশ দিবাকরকে ধরতে পারেনি।

গত সেপ্টেম্বরে ওই তরুণী বেলেঘাটা থানায় অভিযুক্ত যুবকের বিরুদ্ধে অস্ত্র দেখিয়ে ধর্ষণ, গয়না চুরি-সহ একাধিক ধারায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ জেনেছে, রায়গঞ্জের বাসিন্দা হলেও কলকাতার একাধিক থানায় দিবাকরের বিরদ্ধে প্রতারণা, খুনের চেষ্টার মতো একাধিক অভিযোগ আছে। চলতি মাসেই আক্রান্ত তরুণী ফের লালবাজারের সাইবার সেলে অভিযোগ জানান, অভিযুক্ত দিবাকর তাঁর নামে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট তৈরি করে তাতে পুলিশকে গালিগালাজ করেছেন। দু’বার অভিযোগ জানালেও কেন অভিযুক্তকে ধরতে পারল না পুলিশ? গোয়েন্দাপ্রধান বিশাল গর্গের কথায়, ‘‘আমরা তদন্ত করছি।’’

এ দিকে, ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও আতঙ্ক কাটেনি তরুণীর পরিবারের। বেলেঘাটার কালীতারা বসু লেনের ঠাকুরবাগানের বাসিন্দা, আক্রান্ত তরুণী ঝুমকি দাসের বাবা গণেশ দাস বলেন, ‘‘মেয়ে সুস্থ হয়ে যাক, আর কিচ্ছু চাই না।’’ হাসপাতাল সূত্রে খবর, মঙ্গলবার রাতের ঘটনায় ওই তরুণী বেঁচে গেলেও তিনি এখনও বিপদমুক্ত নন। তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল, তবে আশঙ্কাজনক। অবস্থার একটু উন্নতি হলে মাথায় আটকে থাকা গুলিটি অস্ত্রোপচার করে বার করা হবে।

অন্য দিকে, আক্রমণকারী দিবাকরকে ধরে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন স্থানীয়েরা। তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। পুলিশ জানায়, সে কিছুটা সুস্থ হলে তাকে গ্রেফতার করা হবে। আক্রান্ত ও অভিযুক্তের বয়ান সংগ্রহ করতে না পারলেও, এলাকাবাসীর বয়ান সংগ্রহ করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন লালবাজারের হোমিসাইড শাখার গোয়েন্দারা।

বুধবারও এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উৎসবের মরসুমে এমন ঘটনায় হতবাক অনেকেই। স্থানীয় বাসিন্দা কাজল পাল বলেন, ‘‘ঝুমকি খুব মিশুকে। পাড়ার লোকের সঙ্গে সব কথা আলোচনা করত।’’ তাই ঝুমকির ব্যক্তিগত জীবনে টানাপড়েনের কথাও অনেকেই জানতেন। বিপদে ওই পরিবারের পাশেও দাঁড়াতেন সকলে।

কিন্তু কেন হঠাৎ ওই তরুণীকে আক্রমণ করল ওই যুবক? পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ২০১০-এ উত্তর ২৪ পরগনার এক যুবক অনির্বাণ পালের সঙ্গে বিয়ে হয় ঝুমকির। কিন্তু বনিবনা না হওয়ায় বছর খানেকের মধ্যেই বেলেঘাটায় ফিরে আসেন তিনি। বছর তিনেকের মেয়েকে নিয়ে সেখানেই থাকেন ঝুমকি। সংসার চালানোর জন্য টুকটাক প্রসাধন সামগ্রী কেনাবেচার কাজ করেন। স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলাও চলছে।

পুলিশ জানায়, বিয়ের আগে থেকেই ম্যাট্রিমনিয়াল সাইটে অ্যাকাউন্ট ছিল ঝুমকির। ২০১৫-এ সেই সূত্রেই রায়গঞ্জের বাসিন্দা দিবাকরের সঙ্গে তাঁর আলাপ। নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দেয় দিবাকর। অল্প কিছু দিনেই ফোন নম্বর আদানপ্রদান হয় তাঁদের।

পরিবার সূত্রে খবর, কথা বলেও দিবাকরের ব্যবহারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ হয়নি ওই তরুণীর। এর মধ্যেই ঝুমকিকে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে আলাপ করানোর জন্য রায়গঞ্জে ডেকে পাঠায় ওই যুবক। মেয়েকে বাড়িতে রেখে ওই যুবকের সঙ্গে দেখা করতে পাড়ি দেন ওই তরুণী। মার্চে রায়গঞ্জে পৌঁছন ওই তরুণী। অভিযোগ, প্রথমে একটি হোটেলে আটকে রাখা হয় তাঁকে। সেখানে একাধিক বার তাঁকে ধর্ষণ করে দিবাকর। অভিযোগ, সেই সব মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও তুলে রাখত দিবাকর। তরুণীকে সে হুমকি দিয়েছিল, এই সব ঘটনা প্রকাশ্যে আনলে ছবি ও ভিডিও ফাঁস করে দেবে সে। ওই ধর্ষণের ফলে ফের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে প়ড়েন ঝুমকি। স্থানীয় সূত্রে খবর, অগস্টের
শেেষ কোনও ভাবে ওই তরুণী কলকাতায় পালিয়ে আসেন। সেপ্টেম্বরে তিনি ওই যুবকের বিরুদ্ধে বেলেঘাটা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সব কিছু ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করে ফের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছিলেন ঝুমকি। তার আগেই মঙ্গলবার রাতে এই ঘটনা। সব শুনে পুলিশের বক্তব্য, অজানা এক যুবকের ডাকে যে ভাবে ওই তরুণী চলে গিয়েছিলেন, তাতে তো ক্ষতি হওয়ারই কথা। বরং আরও বড় বিপদের আশঙ্কা ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE