ধোঁয়ায় ঢেকেছে এলাকা। বৃহস্পতিবার, গঙ্গানগরে। ছবি: সুদীপ ঘোষ
আগুন লেগেছিল বুধবার সন্ধ্যায়। গঙ্গানগরের ঝাউতলার গুদামঘরে সেই আগুন নেভাতে বৃহস্পতিবার রাত গড়িয়ে গেল। সময় লাগল পঁচিশ ঘণ্টারও বেশি। দমকল জানাচ্ছে, রাসায়নিকে ঠাসা ঘরটি রীতিমতো জতুগৃহ হয়ে পড়েছিল। ছিল না অগ্নি নির্বাপণের কোনও ব্যবস্থাও। মাঠের মধ্যে তৈরি ওই গুদামের আগুন নেভাতে গিয়ে কাদায় চাকা বসে নাস্তানাবুদ হতে হয় দমকলকে। জলের জোগান আসে স্থানীয় পুকুর থেকে।
বাসিন্দারা জানান, বছর তিনেক আগে গুদামঘরটি তৈরি হয়। বুধবার সেখানে আগুন লাগার খবর পেয়ে প্রথমে দমকলের ছ’টি ইঞ্জিন গিয়েছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে আগুনের তীব্রতা বাড়তে থাকায় ইঞ্জিনের সংখ্যাও বাড়াতে হয়। বুধবার গভীর রাতে সব মিলিয়ে ৩৮টি ইঞ্জিন অগ্নিযুদ্ধে সামিল হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে আগুনের তাপে গুদামঘরটির বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়তে থাকে। বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইপে জল ছুড়ে দমকল আগুন নেভানোর কাজ করতে থাকে। এক দমকলকর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েন। দমকলের ডেপুটি ডিরেক্টর সুমিত চৌধুরী বলেন, ‘‘মালিকপক্ষ জানিয়েছিলেন গুদামের শুধুমাত্র একটি তলায় রাসায়নিক রাখা ছিল। আগুন নেভাতে গিয়ে দেখা যায়, তিনতলাতেও রাসায়নিক রয়েছে। অত বড় গুদামের কোথাও জলের সামান্যতম ব্যবস্থাও ছিল না।’’ প্রাথমিক তদন্তের পরে দমকল আধিকারিকেরা জানান, কীটনাশক, গাছের বীজ, থিনার-সহ নানা রাসায়নিক মজুত ছিল। সেগুলি এতটাই দাহ্য যে, বুধবার রাত সাড়ে দশটায় আগুন নেভানোর কাজ চলাকালীন বিস্ফোরণ হয়ে চার দমকলকর্মী জখম হন। পুলিশ ও দমকল জেনেছে, গুদামঘরে ছিল জামকাপড়ও। তবে জামাকাপড়ের নামে লাইসেন্স নিয়ে সেখানে রাসায়নিক রাখা হয়েছিল বলে তদন্তে জানা গিয়েছে।
বুধবার রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আনুমানিক ৩০ হাজার বর্গফুটের বাড়িটির ভিতরে আগুন নেভাতে হিমশিম খাচ্ছেন দমকল কর্মীরা। মাঠে কাদায় আটকে যাচ্ছে গাড়ির চাকা। রাতেই ঘটনাস্থলে যান দমকলের ডিজি জগমোহন। তিনি বলেন, ‘‘ভিতরের পরিস্থিতি এমনই ছিল যে, আগুন এক জায়গা থেকে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েছে।’’
দমকল জানায়, ধোঁয়ার কুণ্ডলীর সঙ্গে ঝাঁঝালো গন্ধ নাকে আসতে থাকে ঘটনাস্থলের অনেক দূরেও। বিশেষজ্ঞেরা জানান, প্লাস্টিক, রঙের থিনারের মতো রাসায়নিক পুড়লে তা থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইডের মতো গ্যাস তৈরি হতে পারে। পরিবেশবিদেরা জানান, এই ধরনের বিষাক্ত গ্যাস বেশি পরিমাণে শরীরে ঢুকলে অসুস্থতা, এমনকী মৃত্যুও হতে পারে।
গঙ্গানগরের কাছে ওই গুদামে আগুন লাগার ফলে ধোঁয়া গোটা এলাকায় ছড়িয়ে প়ড়েছে। খোলামেলা ওই এলাকার উপরে তার প্রভাব এখনই পুরোপুরি বোঝা সম্ভব নয়। তবে গ্যাস কতটা মারাত্মক, তা টের পেয়েছেন দমকলকর্মীরা। গুদামে ঠিক কী কী রাসায়নিক ছিল, তা এখনও নির্দিষ্ট ভাবে জানা যায়নি। রাসায়নিকের নাম-ঠিকুজি জানা গেলে নির্গত হওয়া গ্যাসের চরিত্রও নির্দিষ্ট ভাবে বলা সম্ভব হবে বলে রসায়নবিদেরা জানাচ্ছেন। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাত পর্যন্ত অভিযোগ দায়ের হয়নি। পুলিশ খোঁজ করছে।’’ পুলিশ জানায়, দমকলের পরামর্শ মেনেই তদন্ত হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy