Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Neighbour

আপন হল পর, পড়শিদের সেবার জোরে লড়াই প্রৌঢ়ার

তখন বারাসতের মধ্য কালিকাপুরের লতিকাদেবীর পড়শিরা কিন্তু তা করেননি।

হাসপাতালে লতিকা রাজপুত। নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালে লতিকা রাজপুত। নিজস্ব চিত্র

সুপ্রকাশ মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:১৬
Share: Save:

করোনার আতঙ্কে সমাজে নতুন করে অস্পৃশ্যতা ফিরে এসেছিল। রোজকার ভরসা পরিচারিকা থেকে পাশের বাড়ির আড্ডার সঙ্গী, এমনকি আত্মীয়দেরও দূরে ঠেলে দিতে দ্বিধা বোধ করেননি অনেকে। এমন অবস্থায় অথৈ জলে পড়েছিলেন লতিকা রাজপুত। একমাত্র ছেলের খোঁজ নেই। এ দিকে দুরারোগ্য স্তন ক্যানসার জাঁকিয়ে বসেছে শরীরে। বিনা চিকিৎসায় কার্যত বাড়িতে পড়ে ছিলেন তিনি।

সে খবর জানতে পেরে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন পড়শিরাই। সংক্রমণের ভয়ে সকলে যখন হাসপাতাল এড়িয়ে যাচ্ছেন, তখন বারাসতের মধ্য কালিকাপুরের লতিকাদেবীর পড়শিরা কিন্তু তা করেননি। বরং টানা হাসপাতালে ছোটাছুটি করেছেন তাঁরাই। চিকিৎসার প্রাথমিক খরচ, ওষুধের ব্যবস্থাও করেছেন। বৃহস্পতিবার বারাসত জেলা হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হল লতিকাদেবীর। আগামী দিনের সমস্ত চিকিৎসা ও কেমোথেরাপির ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পড়শিরা জানিয়েছেন, লতিকাদেবী বাড়ি ফিরলে দেখভালের সব ভার তাঁরা নেবেন।

দীর্ঘদিন আগে স্বামীকে হারিয়েছেন তিনি। পরিচারিকার কাজ করেই ছেলেকে নিয়ে সংসার টানতেন। একমাত্র সেই সন্তান কাজের খোঁজে উত্তরপ্রদেশে চলে যান বেশ কয়েক বছর আগেই। এখন তাঁর কোনও খোঁজ নেই। লতিকাদেবীর পড়শিরা জানেন, ছেলেই মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেছেন। তবে পাশে দাঁড়িয়েছেন সুমিত্রা মণ্ডলেরা।

টিউমারের ব্যথা কমাতে ওষুধ কিনে খেতেন লতিকাদেবী। কিন্তু করোনায় অনেক কাজ চলে গিয়েছিল তাঁর। ফলে ওষুধ বন্ধ থাকে। মাসকয়েক ধরে যন্ত্রণায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন তিনি। তাঁকে বাড়ি থেকে বেরোতে না দেখে খোঁজ করতে যান স্থানীয় বাসিন্দা কৃষ্ণচন্দ্র মণ্ডল। তখনই তিনি জানতে পারেন ক্যানসারের কথা। এক প্রকার অনাহারে পড়েছিলেন তিনি। সেই শুরু। এর পর থেকে কৃষ্ণচন্দ্রবাবুই তাঁকে বাড়ি থেকে খাবার এনে দিতেন। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁকে বারাসত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার হয়।

কিন্তু কে হাসপাতালে নিয়ে যাবেন লতিকাদেবীকে? বছর ষাটেকের প্রৌঢ়াকে নিরাশ করেননি পড়শিরা। অনেকেই জানান, পালা করে সকলেই দায়িত্ব নেবেন তাঁর। বারাসত হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, “গত মাসে ওই মহিলাকে হাসপাতালে আনা হয়। পরীক্ষা করে দেখা যায় ক্যানসারে আক্রান্ত তিনি। তার পর থেকে হাসপাতালেই চিকিৎসা চলছে তাঁর। পরে জানতে পারি ওঁর নিজের কেউ নেই। অথচ সেটা বুঝতেই পারিনি। পড়শিরাই নিয়মিত খোঁজ নেন ওঁর। এই সময়ে হাসপাতালে আসতে যখন সকলে ভয় পাচ্ছেন, ওঁরা কিন্তু নিয়মিত আসছেন।” সুপার জানান, ওঁর অবিলম্বে অস্ত্রোপচারের দরকার ছিল। কলকাতার হাসপাতালে হলেই ভাল হত। কিন্তু সেটা ওঁর পড়শিদের জানাতে তাঁরা বলেন, চিকিৎসার জন্য কলকাতায় লতিকাদেবীকে পাঠানো হলে, তাঁর নিয়মিত খোঁজ নিতে পারবেন না।

শেষ পর্যন্ত ওঁদের অনুরোধেই বারাসত হাসপাতালে শল্য চিকিৎসক অলক মৌলিকের নেতৃত্বে মেডিক্যাল টিম তৈরি করা হয়। বৃহস্পতিবার তাঁর অস্ত্রোপচার হয়েছে। অস্ত্রোপচারের জন্য ঝুঁকি বন্ডে নিকটাত্মীয়ের সই দরকার। কৃষ্ণচন্দ্রবাবুই এগিয়ে এসে সেই কাজ করেছেন। তাঁকেই নিকটাত্মীয় বলে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন লতিকাদেবী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। এ বার শুরু পরবর্তী চিকিৎসা।

অন্য বিষয়গুলি:

Neighbour Aged lady
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy