Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Kolkata

অনিয়ম ধরার নানা পন্থা, জেনেও চুপ সবাই

বুধবার রাতে ট্যাংরার দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোডে এমনই একটি কারখানায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। চলন্ত যন্ত্রে তেল দিতে গিয়ে দেহ থেকে মাথা আলাদা হয়ে যায় এক কর্মীর।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২১ ১১:১৬
Share: Save:

যাবতীয় নিয়ম রয়েছে। তবে তা বন্দি ছাপার অক্ষরে! হঠাৎ পরিদর্শনে গিয়ে হাতেনাতে ধরারও পথ আছে। অভিযোগ, যান না কোনও প্রশাসনিক আধিকারিকই। অবস্থা খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেওয়ার কথা রয়েছে পুলিশেরও। কিন্তু বড় কোনও দুর্ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত উদ্যোগী হতে দেখা যায় না তাদেরও। এই পরিস্থিতিতেই শহর এবং শহরতলি জুড়ে কারখানার নামে নিয়ম ভেঙে ব্যবসার রমরমা চলছে বলে অভিযোগ। সেখানকার কর্মীদের নিরাপত্তার ন্যূনতম বন্দোবস্ত রয়েছে কি না, তারও খোঁজ রাখেন না কেউ।

বুধবার রাতে ট্যাংরার দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোডে এমনই একটি কারখানায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। চলন্ত যন্ত্রে তেল দিতে গিয়ে দেহ থেকে মাথা আলাদা হয়ে যায় এক কর্মীর। পরিস্থিতি এমন হয় যে, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখে, যন্ত্রটি তখনও চলছে। ওই শ্রমিকের মাথা আটকে রয়েছে যন্ত্রের মধ্যেই। ঘটনার জেরে কারখানাটি আপাতত বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। সঙ্গে তদন্তে উঠে এসেছে, সেখানকার কর্মীদের জন্য কোনও রকম সুরক্ষা-বিধি না মানার বিষয়টি।

পুলিশ সূত্রের খবর, কয়েক মাস আগে একই ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছিল যাদবপুরের শ্রীকলোনিতে। সেখানকার একটি লেদ কারখানায় যন্ত্রে হাত আটকে যায় এক শ্রমিকের। যত ক্ষণে সেই যন্ত্রটি বন্ধ করেন অন্য শ্রমিকেরা, তত ক্ষণে আক্রান্ত শ্রমিকের ঘাড় পর্যন্ত হাতের অংশ সম্পূর্ণ মুড়ে যন্ত্রের মধ্যে ঢুকে গিয়েছে। বাগবাজারের একটি ছাপাখানায় আবার যন্ত্র পরিষ্কার করার সময়ে সেটি হঠাৎ চালু হয়ে গিয়েছিল। ওই যন্ত্রে পিষে মৃত্যু হয় এক শ্রমিকের।

কারখানায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনার উদাহরণও কম নয়। কলকাতা পুলিশে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয় যে বিভাগে, সেখানকার এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, শুধু আনলক পর্বেই শহরের কারখানায় এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৩২টি। মৃত্যু হয়েছে আট জনের। বহু ঘটনাই আবার পুলিশ পর্যন্ত আসেই না বলে তাঁর দাবি।

তা সত্ত্বেও হুঁশ ফেরে না কেন? শ্রম দফতর জানাচ্ছে, শিল্প আইনে কর্মীদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। ১০ জনের কম শ্রমিক নিয়ে যে কারখানা চলে, সেটিকে অসংগঠিত ক্ষেত্র হিসেবে ধরা হয়। ১০ জনের বেশি হলে সেটি সংগঠিত ক্ষেত্র। যে কারখানায় যে ধরনের পণ্য তৈরি হয়, সেই অনুযায়ী ঝুঁকি বুঝে ব্যবস্থা নিতে বলা আছে আইনে। যে কারখানায় আগুন বা জ্বলন্ত কিছুর দিকে তাকিয়ে কাজ করতে হয়, সেখানে বিশেষ ধরনের চশমা পরে কাজ করা বাধ্যতামূলক। যেখানে উঁচু জায়গায় উঠে কাজ করতে হয়, সেখানে কোমরে দড়ি বেঁধে কাজ করা বিধি। এ ছাড়া, ভারী কাজ হয় এমন সব কারখানায় মাথায় হেলমেট, হাতে দস্তানা এবং মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বেশির ভাগ জায়গাতেই নিয়ম পালন হয় না।

শ্রম দফতরের এক আধিকারিকের যুক্তি, নয়া সরকারি নির্দেশিকার জেরেই এই অনিয়মের বাড়বাড়ন্ত। তাঁর কথায়, ‘‘সরকার নতুন বিধি করে বলে দিয়েছে, যে কোনও কারখানায় অভিযান চালানোর আগে জানিয়ে যেতে হবে। বার বার না গিয়ে একটি নির্দিষ্ট দিনে সব বিষয় খতিয়ে দেখতে হবে। সেই সুযোগেই বিধি উড়িয়ে পাড়ায় পাড়ায় চলছে বিপজ্জনক কারখানা।’’ এ নিয়ে শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটককে ফোন করা হলে তিনি জানান, বৈঠকে রয়েছেন। কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে মন্তব্য করতে চান না।

এই বিচ্ছিন্ন ঘটনার সংখ্যা তো কমে না? মন্ত্রীর কাছে উত্তর মেলেনি। লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, সাম্প্রতিক কিছু অগ্নিকাণ্ডের পরে থানাগুলিকে কারখানার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy