সুস্মিতা রায়ের দেহ শনাক্ত করার পরে মর্গের সামনে বাবা-মা। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
ন’ দিন ধরে নিখোঁজ থাকার পরে অবশেষে জানা গেল ঘাটশিলার নিখোঁজ তরুণী সুস্মিতা রায় (২০) মারা গিয়েছেন। পুলিশ জানায়, দু’দিন আগে উত্তর বন্দর থানা এলাকার মোদিঘাট থেকে একটি দেহ উদ্ধার হয়েছিল। বুধবার সুস্মিতার বাবা-মা কলকাতা পুলিশ মর্গে এসে দেহটি তাঁর বলে শনাক্ত করেন। তবে এ দিন মেয়ের দেহ নেননি তাঁরা। পুলিশ জানিয়েছে, সুস্মিতার বাবা মেয়ের ময়না-তদন্তের রিপোর্ট দেখার পরে তবেই দেহ নেবেন বলে জানিয়েছেন। ময়না-তদন্তকারী চিকিৎসক পার্থসারথি পাল এ দিন শহরের বাইরে থাকায় রিপোর্ট তৈরি হয়নি। আজ, বৃহস্পতিবার তিনি রিপোর্ট দেওয়ার পরে সুস্মিতার দেহ তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে। পরিবারের তরফে সুস্মিতাকে অপহরণের যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল, তার ভিত্তিতেই বুধবার রাতে তাঁর দুই বন্ধুকে গ্রেফতার করল কালীঘাট থানার পুলিশ। ধৃতদের নাম গুরমিত সিংহ এবং বিবেক চাড্ডা।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘাটশিলা থেকে মাস খানেক আগে বিমানসেবিকার প্রশিক্ষণ নিতে শহরে এসেছিলেন সুস্মিতা। কালীঘাটের ঈশ্বর গাঙ্গুলি স্ট্রিটের একটি বাড়িতে পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকতেন। গত ১০ ডিসেম্বর বাড়ি যাওয়ার কথা বলে রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ বেরিয়েছিলেন তিনি। তার পর থেকেই খোঁজ মিলছিল না তাঁর। এ দিন মর্গের বাইরে দাঁড়িয়ে সুস্মিতার বাবা জহর রায় বলেন, ‘‘আমার মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে না। ওকে খুন করা হয়েছে। কারা খুন করল, তা খতিয়ে দেখা হোক।’’ সুস্মিতার মা পুষ্পমিত্রা রায় বলেন, ‘‘এই শহরে পড়তে এসে মেয়ে মারা গেল। মুখ্যমন্ত্রী এক জন মহিলা। তাঁর কাছে সুবিচার চাইছি।’’ সুস্মিতার মৃত্যু রহস্যে গুরমিত এবং বিবেক যুক্ত বলে আগেই অভিযোগ করেছিল পরিবার।
সুস্মিতার মৃত্যু নিয়ে ধন্দ রয়েছে পুলিশেরও। লালবাজার সূত্রের খবর, জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে এটুকুই ময়না-তদন্ত থেকে এখনও পর্যন্ত জানতে পেরেছে তারা। কিন্তু তা থেকে মৃত্যু সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব নয়। কত দিন আগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়েও নির্দিষ্ট তথ্য নেই তদন্তকারীদের হাতে। উদ্ধারের সময়ে সুস্মিতার দেহের ঊর্ধাঙ্গ অনাবৃত ছিল। পুলিশের অনুমান, দীর্ঘ সময় জলে ডুবে থাকার ফলে পোশাক খুলে গিয়েছে। দেহটিও পচে গিয়েছে। মেলেনি তাঁর মোবাইলটিও।
পুলিশ সূত্রের খবর, সুস্মিতার এক বন্ধুর কাছ থেকে হোয়াটস্অ্যাপ কথোপকথনের যে তথ্য তদন্তকারীরা পেয়েছেন তাতে দেখা যাচ্ছে, ১০ ডিসেম্বর রাত ১১টা পর্যন্ত শেষ কথা চালাচালি হয়েছে সুস্মিতা ও তাঁর বন্ধুর মধ্যে। সেখানে সুস্মিতা তাঁর বন্ধুকে মিথ্যা কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু কী মিথ্যা কথা বলেছেন, তা খোলসা করেননি। তার পরে বলেছেন, ‘আই অ্যাম গন’। ওই বন্ধু আবার ১১টা ২০ নাগাদ সুস্মিতাকে বলেছেন, তিনি তাঁর বাড়িতে খবর দিচ্ছেন। সুস্মিতার বাবারা স্টেশনে আসবেন। সেই মেসেজ সুস্মিতার মোবাইলে পৌঁছলেও কোনও উত্তর দেননি তিনি। এ দিন সুস্মিতার বাবা দাবি করেছেন, সুস্মিতার ওই বন্ধু তাঁদের কিছু জানাননি। তাঁরা ১১ ডিসেম্বর ওই তরুণীকে ফোন করলে মেয়ের নিখোঁজের কথা জানতে পারেন। জহরবাবুর দাবি, ১১ ডিসেম্বর সকালে মেয়েকে ফোন করলে লাইন কেটে দেওয়া হয়েছিল। দুপুরে ফোন করলে তা বন্ধ মিলেছিল। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পরে সুস্মিতা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে ভিডিও কল করেছিলেন। সেই সূত্র ধরেও তদন্ত এগোনো হচ্ছে।
সুস্মিতা রায়।ফেসবুক সূত্রে পাওয়া
সুস্মিতা বাড়ির নাম করে বেরিয়ে কোথায় গিয়েছিলেন এবং কেনই বা ‘আই অ্যাম গন’ লিখেছিলেন, তার উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের একাংশের সন্দেহ, কলকাতায় পড়তে এসে কোনও কুসঙ্গে ফেঁসে গিয়েছিলেন তরুণী। বন্ধুরা পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, গভীর রাত পর্যন্ত ঘরের দরজা বন্ধ করে ভিডিও চ্যাট করতেন সুস্মিতা। মাঝেমধ্যে গভীর রাত পর্যন্ত বাইরে থাকতেন। কিন্তু কার সঙ্গে কথা বলতেন বা বাইরে থাকতেন, তা জানাননি বন্ধুদের। পুলিশ জেনেছিলেন, ৬ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে ফেরার পরে সুস্মিতার এক পুরুষ বন্ধু মাঝরাতে টাকা চাইতে ভাড়াবাড়িতে হাজির হন। সুস্মিতার বাবার অভিযোগ, ঘাটশিলার এক যুবক সুস্মিতাকে সম্প্রতি ফোনে অপমান করেছিলেন। তিনি এ-ও জানান, এক পঞ্জাবি যুবকের সঙ্গে সুস্মিতার ট্রেনে আলাপ হয়েছিল এবং তিনি নিজেই সুস্মিতার মালপত্র কালীঘাটের ভাড়াবা়ড়িতে দিয়ে যান। এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy