হইচই: বিতর্ক শুরু হয়েছে কালীঘাট মন্দিরের বিগ্রহের বাঁ দিকে (চিহ্নিত) একটি ফুটবল ক্লাবের লোগো-সহ জার্সির ছবি ঘিরে। নিজস্ব চিত্র
কালীঘাট মন্দিরের গর্ভগৃহে বিগ্রহকে শুধুই সবুজ ও মেরুন রঙের দু’টি বেনারসি শাড়ি পরানো নয়। প্রতিমার বাঁ দিকে কলকাতার একটি নামী ফুটবল ক্লাবের লোগো বসানো সবুজ-মেরুন জার্সিও রেখে দেওয়া হয়েছে বলে ছবিতে স্পষ্ট হয়েছে। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ছবি ভাইরাল হওয়ায় মন্দিরের সেবায়েত কাউন্সিল এবং মন্দির কমিটিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, মন্দিরের গর্ভগৃহে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার নেই। বর্তমান করোনা আবহে জেলা বিচারকের নির্দেশে মন্দির দর্শনে নিয়ম আরও কঠোর হয়েছে। মন্দির চত্বরের চার দিকে ক্যামেরা বসানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কিন্তু গর্ভগৃহের গোপনীয়তা বজায় রাখতে সেখানে ক্যামেরা বসানোর অনুমতি নেই। যা থেকে সেবায়েত কাউন্সিলের সদস্যদের একাংশের দাবি, গর্ভগৃহে প্রবেশ করে বিগ্রহকে ওই ফুটবল ক্লাবের জার্সি পরানো হয়েছে।
সেবায়েতদের একাংশ জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে চরম বিতর্ক। সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই ছবি ছড়িয়ে পড়ায় ভক্তদের একটা বড় অংশ সেবায়েতদের প্রতি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট। মন্দির চত্বরে বসানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে প্রাথমিক ভাবে দেখা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার শহরের ওই নামী ফুটবল ক্লাবের কর্তারা বিকেলের পরে মন্দিরে এসেছিলেন। এক শিল্পপতি-কর্তা ও তাঁর সঙ্গে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাসিন্দা আর এক ফুটবল-কর্তা সহ বেশ কয়েক জনকে সে দিন মন্দির চত্বরে দেখা গিয়েছে। মনে করা হচ্ছে, ওই ক্লাবের কর্তারা সন্ধ্যারতির আগে গর্ভগৃহে প্রবেশ করে বিগ্রহের গায়ে শাড়ি ও জার্সি রেখেছেন।
আরও পড়ুন: প্রবীণদের অনলাইনে আবেদনের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এনকেডিএ
সেবায়েত কাউন্সিলের সম্পাদক দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রোজকার নিত্যপূজা, ভোগ পরিবেশন ও সন্ধ্যারতির সময়ে গর্ভগৃহের দায়িত্বে থাকেন কয়েক জন নির্দিষ্ট সেবায়েত। সেবায়েত কাউন্সিলের সদস্য-সংখ্যা প্রায় সাড়ে আটশো। সে ক্ষেত্রে কয়েক জন সেবায়েতের অপরাধের ভাগীদার বাকিরা হতে পারেন না। তাই পুলিশ ও আলিপুরের জেলা বিচারকের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সত্যি ঘটনা সামনে আসুক।’’
সেবায়েত কাউন্সিলের সদস্যদের কথায়, ‘‘মা কালীর গায়ে ফুটবল ক্লাবের জার্সি পরানোর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পরে সেবায়েতদের প্রতি ভক্তেরা রুচিহীনতার অভিযোগ তুলছেন। চার দিকে নিন্দামন্দ শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ কাউন্সিলের সদস্য এক সেবায়েত বলেন, ‘‘কালীঘাট মন্দিরের খ্যাতি রয়েছে আন্তর্জাতিক স্তরে। সে ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই ছবি ভাইরাল হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই, বিদেশ থেকেও ফোন করে নানা কথা জানতে চাওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি।’’
মন্দির কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘‘এই রাজ্যে কোনও মন্দিরের বিগ্রহে ফুটবল দলের জার্সি পরানোর মতো ঘটনা ঘটবে না বলে আশা করি। ছোট হোক বা বড়, কোনও মন্দির কর্তৃপক্ষই বিগ্রহের গায়ে ফুটবল দলের জার্সি পরানোর অনুমতি দেবেন না। এই ঘটনার পরে কালীঘাট মন্দির কর্তৃপক্ষ এক কুরুচিকর পরিস্থিতির জন্য দায়বদ্ধ হলেন।’’
আরও পড়ুন: ভূগর্ভে সুড়ঙ্গ খুঁড়তে পরামর্শদাতা নিয়োগ করছে হিডকো
তবে পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ওই ছবি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে তাঁদের অনুমান, ছবিটি তোলা হয়েছিল। কিন্তু তা কী ভাবে তোলা হল এবং ওই ছবি কারা ছড়াল, তা সহজেই ধরা পড়বে বলে তাঁরা আশাবাদী। সেবায়েত কাউন্সিলের একাধিক সদস্য বলেন, ‘‘কালীঘাট মন্দিরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দিষ্ট কিছু নির্দেশ আছে। তা ছাড়া মন্দিরের পরিচালন ব্যবস্থা আলিপুরের জেলা বিচারকের অধীনে। সে ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটলে তা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, তা এখনই বোঝা যাচ্ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy